Lactose intolerance কী তা জানার আগে আমাদের জানতে হবে Lactose কী? এটি কীভাবে আমাদের পরিপাকনালীতে পরিপাককৃত হয়? এবং এই Lactose এর উৎস কী? প্রথমে আমরা জেনে নিই Lactose কী?
Lactose হল দুগ্ধ শর্করা বা দুধে উপস্থিত কার্বোহাইড্রেট। এই Lactose এর উপস্থিতির জন্য দুধের স্বাদ মিষ্টি হয়। এই Lactose বা দুগ্ধ শর্করা হল দ্বিশর্করা বা Disaccharide কারন Lactose এর মধ্যে দুইরকমের কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা মিশ্রিত থাকে এরা হল গ্লুকোজ এবং গ্যালাকটোজ। অর্থাৎ Lactose হল গ্লুকোজ এবং গ্যালাকটোজ এর পলিমার এবং এই গ্লুকোজ এবং গ্যালাকটোজ হল Lactose এর মনোমার। এই গ্যালাকটোজও একটি দুগ্ধশর্করা কিন্তু এটি একটি একশর্করা বা Monosaccharide এবং গ্লুকোজও একটি একশর্করা বা Monosaccharide। এই দুই Monosaccharides এর সমন্বয়ে গঠিত হয় Disaccharide Lactose। তাহলে আমরা জানলাম Lactose কী?
এবার আমরা জানব এই Lactose এর পরিপাক কীভাবে আমাদের পরিপাকনালীতে সম্পন্ন হয়? আমাদের পরিপাকতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত ক্ষুদ্রান্ত্রে আন্ত্রিক গ্ৰন্থি সমুহ থাকে এবং এই আন্ত্রিকগ্ৰন্থি নিঃসৃত আন্ত্রিকরসে Lactose পরিপাককারী উৎসেচক Lactase থাকে এবং এই Lactase আমাদের দুগ্ধশর্করা Lactose কে গ্লুকোজ এবং গ্যালাকটোজে পরিবর্তীত করে দিয়ে পরিপাক ক্রিয়া সম্পন্ন করে। তাহলে এখান থেকে আমরা জানতে পারলাম Lactase হল সেই প্রধান উৎসেচক যেটি আমাদের দুগ্ধশর্করা Lactose কে পরিপাক করতে সাহায্য করে। কারণ আমরা বিজ্ঞানী Fisher এর LOCK & KEY THEORY অনুসারে জানি একটি নির্দিষ্ট উৎসেচক এর সক্রিয় স্থানে একটি নির্দিষ্ট Substrate যুক্ত হয়ে বিক্রিয়াজাত পদার্থ বা Product উৎপন্ন করবে। এক্ষেত্রে Lactase উৎসেচক এর সক্রিয় স্থানে নির্দিষ্ট Substrate অর্থাৎ Lactose যুক্ত হয়ে নির্দিষ্ট বিক্রিয়াজাত পদার্থ বা Product গ্লুকোজ এবং গ্যালাকটোজ উৎপন্ন করে। তাহলে আমরা দেখলাম আমাদের পরিপাকনালীতে Lactose বা দুগ্ধশর্করা কীভাবে পরিপাককৃত হয়।

এবার আমরা জানব এই Lactose এর উৎস কী অর্থাৎ এই Lactose কোন কোন খাদ্যবস্তুতে পাওয়া যায়? Lactose প্রধানত গোরুর দুধ, মোষের দুধ, ছাগলের দুধ এবং বিভিন্ন দুগ্ধজাত দ্রব্যের মধ্যে এই Lactose পাওয়া যায়। তাহলে আমরা দেখলাম Lactose কোন কোন খাদ্যদ্রব্যে পাওয়া যায় ?
LACTOSE INTOLERANCE এবং LACTOSE INTOLERANT
আমরা আগেই জেনেছি Lactose আমাদের দুধের মধ্যে উপস্থিত দুগ্ধশর্করা যার উপস্থিতিতে দুধের স্বাদ মিষ্টি হয়। আর এই Lactose কে আমাদের পরিপাকনালীতে পরিপাকের জন্য আমাদের ক্ষুদ্রান্ত্রের আন্ত্রিকগ্ৰন্থি নিঃসৃত আন্ত্রিকরসে Lactase নামক একটি উৎসেচক থাকে যেটি এই দুগ্ধশর্করা Lactose কে গ্লুকোজ এবং গ্যালাকটোজ এ পরিবর্তীত করে দেয় এবং এর ফলে Lactose আমাদের শরীরে হজম হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের এই দেশ তথা আমাদের এই বিশ্বে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা দুধ পছন্দ করেননা বা দুধ গ্ৰহন করলে তাদের Indigestion হয়ে যায় এবং সেখান থেকে তাদের গ্যাস, বমি এবং ডায়রিয়া এর মতো অসুখ শুরু হয়ে যায়। আমাদের চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় এইসমস্ত ব্যাক্তিদের বলা হয় LACTOSE INTOLERANT। কিন্তু কেন? কারণ আমরা সবাই জানি দুগ্ধশর্করা Lactose কে পরিপাক করার জন্য Lactase উৎসেচক প্রয়োজন কিন্তু এইসব ব্যাক্তিদের শরীরে এই Lactase উৎসেচক থাকেনা যার ফলে তারা এই Lactose কে পরিপাক করতে পারেনা যার ফলে তাদের indigestion হয়ে যায়। তাই আমরা এইসকল ব্যাক্তিদের LACTOSE INTOLERANT বলব এবং তাদের এই রোগগ্ৰস্ত অবস্থাকে LACTOSE INTOLERANCE বলব।
CONGENITAL LACTASE DEFICIENCY
এই Congenital Lactase Deficiency একটি বিরল সমস্যা। এটি মুলত বাচ্চাদের হয়ে থাকে। এই সমস্যাটি মুলত Gene এর Mutation এর ফলে। LCT gene Lactase উৎসেচক উৎপাদনকে নিয়ন্ত্রন করে যার ফলে শিশুদের শরীরে খুব সুষ্টুভাবে Lactase উৎসেচক উৎপন্ন হতে থাকে। কিন্তু এই LCT gene এর mutation ঘটলে শিশুদের শরীরে এই Lactase উৎসেচক এর উৎপাদন এবং ক্রিয়াকলাপ বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে শিশু মায়ের বুকের দুধতো বটেই অন্য কোনো Formula Milk গ্ৰহণ করতে পারেনা কারণ Lactase উৎসেচক দুগ্ধশর্করা Lactose কে পরিপাক করতে সাহায্য করে কিন্তু এই উৎসেচকের অনুপস্থিতিতে Lactose এর পরিপাক হয়না যার ফলশ্রুতিতে শিশুর Indigestion হয়ে যায়।
প্রাপ্তবয়স্কদের LACTOSE INTOLERANCY
প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে Lactose Intolerance এর জন্য সেই LCT gene এর mutation দায়ী। এইসময় এই LCT gene এর ক্রিয়া ধীরে ধীরে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যাক্তিদের মধ্যে কমতে থাকে। এই LCT gene এর ক্রিয়া নিয়ন্ত্রন করে একটি DNA sequence যাকে বলা হয় REGULATORY ELEMENTএবং যেটি উপস্থিত থাকে MCM6 geneএর নিকটবর্তী স্থানে। এই LCT gene এর ক্রিয়া অবদমিত হবার ফলে ক্ষুদ্রান্ত্রের আন্ত্রিকগ্ৰন্থিতে উপস্থিত আন্ত্রিকরসে Lactase উৎসেচকের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে দুগ্ধশর্করা Lactose এর পরিপাক বন্ধ হয়ে যায় এবং এর ফলে ওইসব ব্যাক্তিরা দুধ খেয়ে সহ্য করতে পারেন না এবং তাদের indigestion হয়ে যায়, বমি ও ডায়রিয়া হয়ে যায়।
বিশ্বে LACTOSE INTOLERANCE
সারা বিশ্বে Congenital Lactase Deficiency একটি বিরল অবস্থা এবং এর বিস্তার বিশ্বের কোথায় কোথায় আছে সেটি নিয়ে বিজ্ঞানীরা তথা চিকিৎসকরা গবেষণা করে চলেছেন। তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে এই বিরল সমস্যাটির বিস্তার ফিনল্যান্ডে সর্বোচ্চ। সেখানে 1-60000 জন শিশু এই সমস্যার শিকার। এছাড়াও আমাদের বিশ্বে প্রায় 65% মানুষের মধ্যে Lactose intolerance এর সমস্যা আছে। এরা দুধ সহ্য করতে পারেননা। এছাড়াও পূর্ব এশিয়ার দেশ গুলোর প্রায় 70-100% মানুষ এই রোগের শিকার। আমাদের পশ্চিম আফ্রিকা, আরব, গ্ৰিস, এবং ইটালির বেশিরভাগ মানুষরাও এই রোগে আক্রান্ত।

LACTOSE INTOLERANCE এর SYMPTOMS
Lactose Intolerance এ আক্রান্ত ব্যাক্তিদের মধ্যে যেসব রোগলক্ষন বা Symptoms দেখা যায় সেগুলো হল-
গ্যাস
ডায়রিয়া
বমি
পেট ব্যথা
LACTOSE INTOLERANCE রোগ নির্নয় [DIAGNOSIS OF LACTOSE INTOLERANCE]
চিকিৎসকরা এই রোগটি নির্নয় করেন রোগীর রোগলক্ষন অনুসারে। এই রোগটি নির্নয় করার জন্য অনেক রকমের পরীক্ষা আছে তার মধ্যে আমরা দুটি প্রধান পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা করব। সেগুলো হল-
HYDROGEN BREATHE TEST:- এই পরীক্ষার শুরুতে প্রথমে রোগীকে High Lactose যুক্ত একটি পানীয় দেওয়া হয়। তারপর চিকিৎসক পরিমাপ করেন আক্রান্ত ব্যাক্তি কত পরিমাণে Hydrogen গ্ৰহন করছেন প্রতিসময়ের ব্যাবধানে। যদি দেখা যায় Hydrogen গ্ৰহনের থেকে Hydrogen নিঃশ্বাস এর মাধ্যমে বের করে দেবার মাত্রা বেশি তাহলে ধরে নিতে হবে আক্রান্ত ব্যাক্তির শরীরে Lactose এর পরিপাক ও শোষন পুরোপুরি হয়নি।
LACTOSE TOLERANCE TEST:- এই পরীক্ষার শুরুতে প্রথমে রোগীকে High Lactose যুক্ত একটি পানীয় দেওয়া হয়। তারপর চিকিৎসক রোগীর Blood Glucose level পরিমাপ করে। যদি Blood glucose level বৃদ্ধি না পায় তাহলে বুঝতে হবে Lactose ঠিক মত পরিপাক ও শোষিত হয়নি কারন Lactose যদি পুরোপুরি পরিপাক হয় তাহলে সেখান থেকে গ্লুকোজ এবং গ্যালাকটোজ উৎপন্ন হয় এবং গ্লুকোজ এর শোষনের ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
LACTOSE INTOLERANCE এর TREATMENT
Lactose intolerance এর Treatment এর জন্য আমরা আক্রান্ত ব্যাক্তির Diet কে একটু Modify করতে পারি এবং কিছু Supplements প্রয়োগ করতে পারি।
DIETARY MODIFICATIONS
আমাদের আক্রান্ত ব্যাক্তিদের দৈনন্দিন এর খাদ্যতালিকা থেকে Lactose যুক্ত খাদ্য সামগ্রী বিশেষত দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য বাদ দিতে হবে। কিন্তু দুধ এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য হল Calcium এবং Vitamin-D এর উৎকৃষ্ট উৎস যদি খাদ্যতালিকা থেকে এদের সম্পূর্ণ রূপে বাদ দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে সেক্ষেত্রে Bone related diseases যেমন অস্টিওআর্থারাইটিস, অস্টিওপোরোসিস, অস্টিওম্যালাশিয়া প্রভৃতি। আর গবেষণায় দেখা গেছে কম মাত্রায় Calcium গ্ৰহন এই Lactose intolerance এর সময় Bone related disease গুলোকে আমন্ত্রন করে এবং যেগুলো পরবর্তীতে খুব খারাপ ভাবে শরীরের উপর প্রভাব ফেলে (Montalto et al, 2006)। তাই আমাদের নিম্মলিখিত উপায়ে এই সমস্ত রোগীর পথ্যপরিকল্পনা করতে হবে-
আক্রান্ত ব্যাক্তিকে প্রতিদিনের খাদ্যের সাথে খুব অল্পমাত্রায় দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য দিতে হবে।
ল্যাকটোজ বিহীন দুধ রোগীকে দিতে হবে।
এছাড়াও দৈনন্দিন এর খাদ্যতালিকায় ব্রকোলি, Breads, বিভিন্ন রকম ফলের জুস, কমলালেবু, পালংশাক প্রভৃতি রাখতে পারি।
LACTASE SUPPLEMENTS
Lactase উৎসেচকের Supplements সমুহ Lactase উৎসেচক সমন্বিত যেটি দুগ্ধশর্করা Lactose কে গ্লুকোজ এবং গ্যালাকটোজ এ ভেঙে দেয় এবং এর ফলে Lactose এর পরিপাক ক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এইসব Supplements গুলো Tablets বা Drops রূপে পাওয়া যায়। Supplements ব্যবহার করার আগে আপনারা অবশ্যই আপনাদের চিকিৎসক বা পথ্যবিশারদদের সাথে আলোচনা করে নেবেন কারন আমরা অনেক সময়ই কতটা supplements ব্যবহার করতে হবে তা বুঝতে পারিনা যার ফলে আমাদের পরিমানের গন্ডগোল হয়ে যায় যার ফলশ্রুতিতে আমাদের অনেকেরই মধ্যে allergy বা side effects দেখা যায়। তাই supplements ব্যবহার করার আগে চিকিৎসক বা পথ্যবিশারদদের সাথে আলোচনা করে নেওয়াটা আবশ্যক কেননা তাঁরাই বলতে পারবেন কতটা supplements ব্যবহার করলে আপনারা সুস্থ থাকবেন এবং কতটা বেশি ব্যবহার করলে তার side effects আপনাদের মধ্যে দেখা দেবে। আপনারা যদি তাদের guidelines মেনে চলেন তাহলেই আপনারা সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকতে পারবেন।
PROBIOTICS
Probiotics একপ্রকার জীবিত অনুজীব যারা আমাদের অন্ত্রে উপস্থিত থাকে এবং আমাদের পরিপাক ক্রিয়ায় সাহায্য করে। এই Probiotics রা জীবিত অবস্থায় কিছু পরিমান Yoghurt এ পাওয়া যায় এবং এরা Supplements রূপেও পাওয়া যায় বিভিন্ন রকমের capsules এ। এদের আমরা মুখ্যত ব্যবহার করে থাকি আমাদের পরিপাকনালী সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে যেমন ডায়রিয়া, Irritable bowel syndrome। এছাড়াও এই Probiotics সমুহ Lactose এর পরিপাকে অংশগ্রহণ করে।