২০২০ টোকিও অলিম্পিকের কিছু সেরা মুহূর্ত –ভারতঃ
– একটি সোনা, দুটি রুপো ও চারটি ব্রোঞ্জ পেয়ে ভারতের সফলতম অলিম্পিক ছিল এবারের টোকিও অলিম্পিক।
– টোকিও অলিম্পিকে ভারতকে প্রথম পদক এনে দেন মিরাবাই চানু। মহিলাদের ভারোত্তলনের ৪৯ কেজি বিভাগে সফলভাবে ২০২ কেজি (স্ন্যাচে ৮৭কেজি এবং ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১১৫ কেজি) ভার তুলে রুপো জেতেন চানু।
– স্বাধীন ভারতের প্রথম অ্যাথলেটিকসে অলিম্পিক সোনাবিজয়ী এবং একক ক্রীড়াবিভাগে ভারতের দ্বিতীয় অলিম্পিক সোনাবিজয়ী হলেন জ্যাভলিন থ্রোয়ার নীরজ চোপড়া। ৮৭.৫৮ মিটার দূরে জ্যাভলিন ছুঁড়ে সোনা জেতেন নীরজ। ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে ভারতের প্রথম স্বর্ণপদক (একক ক্রীড়াবিভাগে) আসে অভিনব বিন্দ্রার হাত ধরে।
– পিভি সিন্ধু টোকিওতে একক মহিলা ব্যাডমিন্টনে ব্রোঞ্জ জিতে ভারতের প্রথম, দুটি অলিম্পিক পদক বিজেতা মহিলা হলেন।
– পুরুষদের ফ্রিস্টাইল কুস্তিতে রুপো আনলেন কুস্তিগীর রবি দাহিয়া, টোকিওতে এবার তাঁর প্রথম অলিম্পিক।
– মেরি কম (২০১২) ও বিজেন্দর সিং (২০০৮)-এর পর তৃতীয় অলিম্পিক ব্রোঞ্জজয়ী ভারতীয় বক্সার হলেন লভলিনা বরগোঁহাই।
– ৪১ বছর পর ভারতীয় পুরুষ হকি টিম ব্রোঞ্জ জিতেছে, অন্যদিকে উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে গ্রেট ব্রিটেনের কাছে ৩-৪ ফলের সামান্য ব্যবধানে হেরে ব্রোঞ্জ হাতছাড়া হয়েছে ভারতীয় মহিলা হকি দলের।
– খেলতে নামার সময় গল্ফার অদিতি অশোকের ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্ক ছিল ২০০। সেখান থেকে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে অদিতি সামান্য একটি স্ট্রোকের ব্যবধানে নিউজিল্যান্ডের লিডিয়া কো-এর কাছে ব্রোঞ্জ হাতছাড়া করলেন।
– চোট আঘাতের কবল থেকে উঠে এসে ৬৫ কেজি ফ্রিস্টাইল কুস্তি বিভাগে ৮-০ তে কাজাখস্তানের দৌলত নিয়াজবেকভকে হারিয়ে ব্রোঞ্জ জিতলেন বজরং পুনিয়া। সুশীল কুমারের পর বজরং একমাত্র ভারতীয় কুস্তিগীর যিনি বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ এবং অলিম্পিক দুটিতেই পদক এনেছেন।
– ভারতের প্রথম অলিম্পিক ফেন্সিং ক্রীড়াবিদ সিএ ভবানী দেবী অলিম্পিকের দ্বিতীয় রাউন্ড অবধি পৌঁছতে পেরেছিলেন।

২০২০ টোকিও অলিম্পিকের কিছু সেরা মুহূর্ত – আন্তর্জাতিকঃ
গত দু’বছর অতিমারির প্রকোপে প্রায় সমস্ত বড় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বন্ধ থাকার পর অবশেষে টোকিওতে ২০২০ অলিম্পিকের মশাল জ্বাললেন জাপানী টেনিস সুন্দরী নাওমি ওসাকা।
এলেন থম্পসন-হেরার ইতিহাস সৃষ্টি:
জামাইকান এই দৌড়বিদ ৩১ জুলাই মাত্র ১০.৬১ সেকেন্ডে ১০০ মিটার দূরত্ব পার করে সোনা জিতে সিওল ১৯৮৮ অলিম্পিকে তৈরী ১০.৬২ সেকেন্ডের রেকর্ড ভেঙেছেন। মেয়েদের মধ্যে পৃথিবীতে এখন তিনি দ্বিতীয় দ্রুততম (প্রথম গ্রিফিথ জয়নার)। এই অসাধারন কীর্তির তিনদিন পর এলেন আবার ২১.৫৩ সেকেন্ডে ২০০ মিটার দূরত্ব পার করে সোনা জেতেন। প্রথম মহিলা হিসেবে তিনি একই অলিম্পিকে একসাথে ১০০ ও ২০০মিটার দৌড়ে সোনা জিতলেন।
ক্রীড়াসৌজন্য ও ভ্রাতৃত্ববোধের চরম নিদর্শন দেখা গেল হাইজাম্প ফাইনালে:
কাতারের মুতাজ বারশিম এবং ইতালির জিয়ানমার্কো তাম্বেরী দুজনেই সফলভাবে ২.৩৭ মিটার লাফান, শেষ লাফে বারশিম আবার ২.৩৭ মি. লাফালেও পেশির টানের ফলে চোটের ভয়ে তাম্বেরী লাফানোর ঝুঁকি নেননি। এতে বারশিম স্বাভাবিক ভাবেই প্রথম স্থান পান, কিন্তু চরম ক্রীড়াবিদসুলভ মানসিকতার বারশিম কর্মকর্তাদের অনুরোধ করে তাম্বেরীর সাথে সোনা ভাগ করে নেন। এহেন সৌজন্যে মুগ্ধ তাম্বেরী দৌড়ে গিয়ে বারশিমকে জড়িয়ে ধরেন ও অলিম্পিকে এক আবেগঘন মুহূর্ত তৈরি হয়। আজকের হিংসাত্মক-ইঁদুরদৌড়ের পৃথিবীতে এহেন সৌজন্য-ভ্রাতৃত্ববোধ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
এমা ম্যাককেওনের এক অলিম্পিকে সর্বোচ্চ সোনা জয়ের রেকর্ড ছোঁয়া:
১৯৫২ হেলসিঙ্কি অলিম্পিকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মারিয়া গোরোখভস্কায়ার এক অলিম্পিকে সাতটি মেডেল জয়ের রেকর্ড ৬০ বছর পরে ছুঁয়ে ফেললেন অস্ট্রেলিয়ান সাঁতাড়ু এমা। মোট সাতটি (৪×১০০মি মেডলিতে সোনা, ৪×১০০মি ফ্রিস্টাইলে সোনা, ১০০মি ফ্রিস্টাইলে সোনা, ৫০মি ফ্রিস্টাইলে সোনা, ৪×২০০ মি. ফ্রিস্টাইলে ব্রোঞ্জ, ৪×১০০মি বাটারফ্লাইতে ব্রোঞ্জ, ১০০মি বাটারফ্লাইতে ব্রোঞ্জ) পদক জিতে অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের সেরা অলিম্পিয়ান (২০১৬ রিও অলিম্পিকের ৪টি পদক মিলিয়ে ১১টি পদক), মহিলাদের মধ্যে একটি খেলায়(সাঁতার) সর্বোচ্চ পদকপ্রাপ্ত ক্রীড়াবিদ হলেন এমা। এছাড়া তিনি টোকিও ২০২০ অলিম্পিকের সর্বোচ্চ অলঙ্কৃত ক্রীড়াবিদের সন্মানও পেলেন যা খুবই মর্যাদাপূর্ণ।
অ্যালিসন ফেলিক্স আমেরিকার অলিম্পিক ইতিহাসে সর্বোচ্চ পদকপ্রাপ্ত ক্রীড়াবিদ হলেন:
২০০৪ আথেন্স অলিম্পিকে অ্যালিসন তাঁর প্রথম পদকটি(২০০মি দৌড়- রুপো) পান। ১৭ বছর পর এই টোকিও অলিম্পিকে দুটি (৪০০মি দৌড়-ব্রোঞ্জ, ৪×৪০০মি রিলে দৌড়-সোনা) পদক জিতে, ১১টি পদক নিয়ে, কিংবদন্তি কার্ল হুপারের রেকর্ড ভেঙে, আমেরিকার সর্বকালের সর্বোচ্চ পদকজয়ী অলিম্পিয়ানের সন্মান লাভ করলেন।
অনেক অপেক্ষার পর অবশেষে স্বর্ণপদক/ পদকবিজয়ী হলেন যে বা যারা:
– ক্যানু(একরকম হালকা সরু নৌকা/ডোঙা, উভয়দিকে সূক্ষমুখ; হাঁটু গেড়ে বসে একটি বৈঠা দিয়ে চালাতে হয়)চালনায় কিংবদন্তি অস্ট্রেলিয়ান ক্রীড়াবিদ জেসিকা ফক্স ২০০৮ থেকে চেষ্টার পর সি-১ ক্যানু স্লালোমে সোনা জিতলেন।
– গ্রেট ব্রিটেনের সাঁতাড়ু/ডাইভার টম দালি ২০১২ ও ২০১৬তে ব্রোঞ্জ পাওয়ার পর এবছর ম্যাটি লি-কে সঙ্গে নিয়ে সিংক্রোনাইজড প্ল্যাটফর্ম ইভেন্টে সোনা জিতলেন।
– ফ্লোরা ডাফি মহিলাদের ট্রায়াথলনে সোনা জিতে বারমুডা দেশটিকে ৮৪ বছরে প্রথম সোনা এনে দিলেন।
– হিউজেস জ্যাঙ্গো পুরুষদের ট্রিপল জাম্পে ব্রোঞ্জ জিতে বুরকিনা ফাসো দেশটিকে প্রথম পদক এনে দিলেন।
– ফিলিপিন্সের হিদিলিন দিয়াজ ৫৫ কেজি ভারোত্তোলন বিভাগে জিতে তাঁর দেশকে ৯৭ বছরে প্রথম সোনা এনে দিলেন।
– আলেসান্দ্রা পেরিলি মহিলাদের ট্র্যাপ শুটিং-এ ব্রোঞ্জ, মিক্সড টিম ট্র্যাপ শুটিং-এ রুপো, এবং মাইলস আমিন পুরুষদের ৮৬ কেজি ফ্রিস্টাইল কুস্তিতে তাঁদের দেশ সান মেরিনোকে প্রথম অলিম্পিক পদক এনে দিলেন।
– কাতারকে প্রথম সোনা এনে দিলেন মুতাজ বারশিম (হাই জাম্প-পুরুষ) ও ফারেশ এলবাখ(৯৬ কেজি ভারোত্তোলন)
– তুর্কমেনিস্তানকে প্রথম পদক এনে দিলেন পলিনা গুরইয়েভা(রুপো – ৫৯ কেজি ভারোত্তোলন-মহিলা)

২০২০ টোকিও অলিম্পিকের আরো কিছু অসাধারন মুহূর্তঃ
– আমেরিকান সাঁতাড়ু বিভাগের অধিনায়ক ক্যালেব ড্রেসেল নিজেকে কিংবদন্তি মাইকেল ফেল্পসের যোগ্য উত্তরাধিকারী প্রমাণ করেছেন। ২৫-এর কম বয়সেই ১৩ বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ক্যালেব টোকিওতে ছয়টি সম্ভাব্য বিভাগের পাঁচটিতেই সোনা জিতে আলোড়ন এবং রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন(৫০ মি. ফ্রিস্টাইল সম্পূর্ণ করতে ২১.০৭ সেকেন্ড, বিশ্বে দ্রুততম; এবং ৪×১০০ মি. মেডলি রিলেতে দলগত দ্রুততম)।
– জাপান ফ্রান্সের কাছে মিশ্র-দলগত(পুরুষ ও নারী) জুডোয় পরাজিত হয়। কিন্তু বেসবলে জাপান বেসবল খেলার আবিষ্কারক দেশ আমেরিকাকেই ২-০ ফলে হারিয়ে দেয়(পুরুষ ইভেন্ট), সফ্টবল ইভেন্টে জাপানের মহিলা দলের কাছে একদম একই ভাবে পরাজয় বরণ করে আমেরিকান দল।
– এবছর কিছু নতুন ইভেন্ট যুক্ত হয়েছে অলিম্পিকে, এগুলি হল: সার্ফিং, রক ক্লাইম্বিং, ক্যারাটে এবং ৩×৩ বাস্কেটবল।
– ১৩ বছর ৩৩০ দিন বয়সে জাপানের মোমিজি নিশিয়া সোনা পেলেন এবছরই প্রথম চালু হওয়া ইভেন্ট মহিলাদের স্কেটবোর্ডিং-এ। ফাইনালে মোমিজি, ১৩ বছর ২০৩ দিন বয়সী ব্রাজিলের রেইসা লীল(সোনা জিতলে রেইসা একক ইভেন্টে কনিষ্ঠতম অলিম্পিক সোনাজয়ী হতে পারতেন) এবং জাপানের ১৬ বছর বয়সি ফুনা নাকায়ামাকে হারিয়ে দেন।
– ভার্টিকাল স্কেটবোর্ডিং ক্রীড়াবিদ রুনে গ্লিফবার্গ টোকিও অলিম্পিকে অংশ নেওয়া সর্ববরিষ্ঠ (৪৬বছর) ক্রীড়াবিদ ছিলেন।
– এল-জি-বি-টি-কিউ আন্দোলনে এক মাইলস্টোন হয়ে থাকল টোকিও অলিম্পিক। ১৮১ জন এলজিবিটিকিউ ক্রীড়াবিদ অংশ নিলেন এবারের অলিম্পিকে। ব্রিটিশ ডাইভার টম দালি সোনা জেতার পর সাংবাদিক সন্মেলনে তাঁর ‘গে’ পরিচয় প্রকাশ করেন এবং তাঁর মত অন্য লিঙ্গ বা যৌন পরিচয় ধারণকারী সমস্ত মানুষকে গর্ব করে সমাজের সামনে এগিয়ে আসতে বার্তা দেন।
– করোনাবিদ্ধস্ত ইতালি ৪০টি পদক জিতে অসাধারন ফলাফল করেছে; সেদেশের জন্য তাদের সবচেয়ে সফল অলিম্পিক এবছরই। ইতালির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য জয় হল পুরুষদের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে জয়লাভ। ৯.৮ সেকেন্ডে ১০০ মিটার দৌড় সম্পূর্ণ করে ল্যামন্ট জেকব ইতালিকে প্রথম এই বিভাগে সোনা এনে দিলেন।
সৌজন্য ও ভ্রাতৃত্ববোধের আরো নিদর্শন:
– জাপানী-আমেরিকান সার্ফার কানোয়া ইগারাশিকে হারিয়ে ব্রাজিলিয়ান ইতালো ফেরেইরা পুরুষদের সার্ফিং ফাইনালে সোনা জেতেন; কিন্তু তারপর প্রেস কনফারেন্সে ভাল ইংরাজী না জানার কারণে সমস্যায় পড়েন। ফেরেইরাকে আনন্দিত ও বাকরুদ্ধ করে ভাল পর্তুগিজ জানা ইগারাশি তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন।
– পুরুষদের ৮০০ মিটার দৌড়ের সেমিফাইনালের মাঝে বোত্স্ওয়ানার নাইজেল আমোস এবং আমেরিকার ইসাইয়া জিউয়েটের একে অপরের পায়ে পা জড়িয়ে যায় এবং পড়ে গিয়ে দুজনেই প্রতিযোগিতার উচ্চ তালিকায় আসার সম্ভাবনা থেকে বাদ পড়েন। কিন্তু এই ঘটনায় রাগারাগি করার বদলে তাঁরা একে অপরকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করেন, জড়িয়ে ধরেন এবং ফিনিশ লাইন অবধি একসাথে হেঁটে যান।
– মহিলাদের ট্রায়াথলনে নরওয়ের লটি মিলার যখন ইভেন্ট সম্পূর্ণ করে বিশ্রাম করছিলেন তখন এই ইভেন্টের শেষ ‘ইভেন্ট সম্পূর্ণ করা’ ক্রীড়াবিদ বেলজিয়ামের ক্লেয়ার মিশেলকে দেখেন যিনি পায়ের পেশিতে টান ধরা সত্ত্বেও ইভেন্ট সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করছেন। এই ঘটনা তাঁকে নাড়া দেয় এবং মিশেল ইভেন্ট সম্পূর্ণ করলে মিলার তাঁকে সাহায্য করতে ও সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে যান। যদিও প্রথম হওয়া ফ্লোরা ডাফির চেয়ে মিশেল ১৫ মিনিট বেশি সময় নিয়েছেন, তাও ট্রায়াথলনের মত কঠিন প্রতিযোগিতা সম্পূর্ণ করায় (৫৪ জন প্রতিযোগীর মধ্যে ২০ জনই সম্পূর্ণ করতে পারেননি, এতটাই কঠিন) মিশেলকে বাহবা দেন মিলার।
– সাউথ আফ্রিকান সাঁতাড়ু তাতিয়ানা শোন্মেকার মহিলাদের ২০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকে সোনা জেতার পর বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। তাঁর পরে শেষ করা আমেরিকান রুপোজয়ী লিলি কিং, ব্রোঞ্জজয়ী আমেরিকান অ্যানি লেজর এবং তাতিয়ানার স্বদেশীক্রীড়াবিদ কেইলিন করবেট ফিনিশ লাইনে পৌঁছে তাঁকে অভিনন্দন জানালে তাতিয়ানা অভিভূত হয়ে পড়ে তিনজনকেই জড়িয়ে ধরেন এবং চারজনে এক অসাধারণ সৌজন্যবোধের মুহূর্ত সৃষ্টি করেন।
২০২০ টোকিও অলিম্পিকের অসাধারন মানবিক মুহূর্তঃ
– পোলিশ (পোল্যান্ডের) জ্যাভেলিন থ্রোয়ার মারিয়া আন্দ্রেইচেক(Maria Andrejczyk) তাঁর টোকিওতে অর্জন করা রৌপ্যপদকটি তাঁর দেশের একজন আট মাস বয়সি শিশুর হার্ট সার্জারির জন্য নিলাম করে দেন। এই নিলাম থেকে প্রাপ্ত ১,২৫,০০০ ডলারের সম্পূর্ণটাই তিনি মিলোসজেক ম্যালিসা নামের ঐ পোলিশ শিশুর পরিবারকে দান করেন। সম্পূর্ণ অচেনা এক শিশুর জন্য তাঁর এই মহৎ ত্যাগকে স্বীকৃতি দিতে যে সংস্থাটি পদকটির জন্য নিলামে সর্বোচ্চ দাম দিয়েছিল, সেই পোলিশ স্টোর চেইন ‘জাবকা’ তাঁকে তাঁর পদকটি ফিরিয়ে দিয়ে জানায় স্বদেশী এই অলিম্পিয়ানের এ-ধরণের ত্যাগ ও অসাধারণ দানের নিদর্শনে তারা মুগ্ধ এবং গর্বিত।
– জামাইকান হার্ডল-দৌড়বিদ হান্সলে পার্চমেন্ট সেমিফাইনালের দিন দৌড়ের জায়গায় যাওয়ার সময় গেমস ভিলেজ থেকে ভুল করে ভুল বাসে চড়েন এবং যখন সেই বাস গন্তব্যে পৌঁছনোর পর যখন তিনি তাঁর ভুল বুঝতে পারেন, তখন তাঁর আসল জায়গায় পৌঁছোবার সময় ছিল এতটাই কম, যে কর্তৃপক্ষের দেওয়া বাসে করে গেলে তিনি আর সময়ে পৌঁছতে পারতেন না। এক ভিডিওতে তিনি বর্ণনা করেছেন এরপর কিভাবে এক অচেনা মহিলা তাঁকে ট্যাক্সি ভাড়া দিয়ে এবং সঠিক রাস্তা বলে দিয়ে সময়মত সঠিক জায়গায় পৌঁছতে সাহায্য করেন। এই সাহায্যের ফলে তাঁর সময়মত পৌঁছে দৌড়ে অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয় এবং এবছরে নিজস্ব সর্বনিম্ন সময়ে তিনি পুরুষদের ১১০ মিটার হার্ডল-দৌড় সম্পন্ন করে সোনা জেতেন। পরে তিনি আবার ঐ ‘ভুল’ বাস ধরেন এবং সেই ‘ভুল’ জায়গায় পৌঁছে ঐ অচেনা মহিলাকে খুঁজে বের করেন (মহিলা ছিলেন অলিম্পিকের এক স্বেচ্ছাসেবক – ত্রিয়ানা স্তয়কোভিচ)। পার্চমেন্ট তাঁকে খুঁজে বের করে তাঁর জেতা পদকটি দেখান, ধন্যবাদ জানান, ট্যাক্সিভাড়ার টাকা ফেরত দেন এবং জামাইকান অলিম্পিক ফেডারেশনের একটি টিশার্ট উপহার দেন। ত্রিয়ানার পাওনা এখানেই শেষ হয়নি, পার্চমেন্টের এই ভিডিও দেখে অভিভূত হয়ে জামাইকার সরকারি পর্যটন মন্ত্রকের তরফ থেকে পর্যটনমন্ত্রী ত্রিয়ানাকে সেদেশটি ঘুরে আসার জন্য সরকারিভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।