Recent Post

স্বপ্ন সত্যি নয়: ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়

স্বপ্ন সত্যি হয় না। ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয়। অনেক কিছু প্রবাদ আমাদের সমাজে প্রচলিত। দিবা স্বপ্ন দেখা, যার কোনও মানে হয় না। আসলে মানুষের আকাঙ্ক্ষিত মনের ইচ্ছা, তার অবচেতন মনে দেখা দিলে, তাই স্বপ্ন হয়ে দেখা দেয়। ভোরের স্বপ্ন মনে থাকে, গভীর রাতের স্বপ্ন মনে থাকে না এমন হয়। 

এক স্কুল ছাত্রী ,যার জীবনে স্বপ্ন ছিল, একটা আশা খুব ধীরে ধীরে তার শরীরে ও মনে দানা বাঁধছিল। না-ছিল ভোরের স্বপ্ন, না গভীর রাতের, না দিবা স্বপ্ন। অতি প্রত্যুষ থেকে রাত অবধি একজনকে সামনে রেখে-দেখে কৈশোর মনে নানান কল্পনার বিন্দু গভীর সমুদ্রের মনে জড়ো হতে লাগছিল। কৈশোর থেকে যৌবনের দোলায় ঝাঁক ঝাঁক বিন্দু যখন মনের মনি কোঠায় লালিত- পালিত-শোভিত তখনই ছন্দ পতন ঘটেছিল এই মেয়েটির জীবনে। এই গল্পটি বলতে বসেছি আজ। 

বর্ধমানের গলসি শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে এক গ্রাম মুনসিডাঙা। মুনসিডাঙায় অঙ্গনওয়াড়ি স্কুলের যে শিক্ষিকা তাকে গলসি থেকেই প্রত্যেক দিন আসা যাওয়া করতে হয়। আজও তার উপস্থিতি স্কুলে। একদিকে ছাত্র-ছাত্রীদের রান্নার আয়োজন, অন্যদিকে পড়াশোনাও চলছে। একটু পরেই ছেলে-মেয়েরা খেতে বসবে। খাওয়া-দাওয়ার পর আরও কিছুক্ষণ পড়া তারপর দুপুর বারোটায় ছুটি। 

ছুটির ঘণ্টা বেজে গেছে। শিক্ষিকাও বাড়ি ফিরতে উদ্যত। এমন সময় তার এনড্রয়েড ফোন বেজে উঠল। আন-নোন নাম্বার। ফোন ধরবে কি ধরবে না করে শেষ পর্যন্ত শিক্ষিকা ফোন ধরলেন। 

—হ্যালো! কে বলছেন!

—হ্যালো! তুমি কি স্বপ্না?

—হাঁ। কিন্তু আপনি কে? চিনতে পারছি না তো। 

—অবশ্যই! চিনতে না পারাই কথা। প্রায় এক যুগ পরে তোমার সাথে কথা বলছি। তবে আমার গলার স্বর চিনতে চেষ্টা করতে পারো। 

—না…বুঝতে পারছি না। আপনি কে?

—আমি….পারহাটির, তোমাদের পাশের বাড়ির নীলদা। 

—তুমি নীলদা…? এতদিন পরে হঠাৎ! কেমন যেন স্বপ্নার মন ছ্যাঁত করে উঠলো। 

—কী ব্যাপার স্বপ্না? এবার চিনতে পারছো?

—হ্যাঁ, পারছি এবার। হঠাৎ এতদিন পরে কোথা থেকে? 

—আমি চাকরি থেকে রিটায়ার করেছি। তাই দেশে ফিরে এসেছি। এখন থেকে দেশে, পারহাটিতেই আমরা থাকব। 

—আর তোমার পরিবার।

—মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলে চাকরি করে। আমরা দুজনে এখানেই থাকব। মাঝে মাঝে দরকার হলে ছেলে-মেয়ের কাছে যাব। 

—আচ্ছা ভালো!

—তোমার কথা বলো। কোথায় থাকো। কোথায় বিয়ে হয়েছে তোমার?

—আমরা বর্ধমানের গলসিতে থাকি। আর কাছেই এক গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ির শিক্ষিকা। 

—খুব ভালো। তুমি তো এমএ পাশ। তোমার বর কি করেন?

—ওর একটি কারপেন্টার শপ আছে। 

—ভালো। তুমি বাপের বাড়ি পারহাটিতে এলে দেখা হবে। রাখছি।

দুই দিকের সেলুলার ফোন বন্ধ হয়ে গেল। স্বপ্নাও বাড়ির উদ্দেশে রওনা হল। কিন্তু ওর মন অন্যমনস্ক। এতদিন পর নীলদার ফোন, তার অতীতের ছবি সিনেমার পর্দায় আসা বারে বারে স্পষ্ট করে দিচ্ছে। তার তো কোনও দোষ ছিল না। তবে এই মুহূর্তে চোখে কেন ভাসছে নীলদা। ফেলে আসা সেই দিনগুলি। নীলদা, নীলদার মা জ্যাঠিমা, আরও অনেকে। নীরব চোখের ভালোবাসা, সমর্পন, সবই করাল বন্যায় ছিন্নভিন্ন হয়েছিল।

(ক্রমশ)

Author

  • ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়

    বর্ষীয়ান লেখক শ্রীযুক্ত ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৫৭ সালে পূর্ব বর্ধমান জেলার সাতগেছিয়া গ্রামে। বাল্যকাল কেটেছে ওখানেই। বিদ্যালয় জীবন অতিবাহিত করেন সাতগেছিয়া শ্রীধরপুর অবিনাশ ইনিস্টিটিউশনে ও পরবর্তীতে কালনা কলেজ থেকে স্নাতক স্তরের পাঠ সম্পূর্ণ করেন। বর্তমানে হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় থাকেন। চাকুরি জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করার পর এখন লেখালেখিতে অনেক বেশি সময় দিতে পারেন লেখক। লেখালেখি ছাড়াও তাঁর শখ ছবি আঁকা, গিটার বাজানো,যাত্রা থিয়েটার নাটকে অভিনয়, আবৃত্তি করা। একসময় ফুটবল খেলতেও ভালোবাসতেন তিনি। তাঁর কথায়,"ছবি আঁকা, গিটার বাজানো, যাত্রা-থিয়েটার, নাটক-আবৃত্তি এই নিয়ে ব্যক্তি জীবন ছুটছিল কর্ম জীবনের সঙ্গে। কিন্তু নিখিলবঙ্গ সাহিত্য সন্মেলনের সঙ্গ পাওয়ার পর কেমন যেন হাতের আঙুল এগিয়ে এল কিছু লিখতে-বলতে। তখন থেকেই লেখার শুরু, যতটুকু পারি মনের ভাব প্রকাশ করি। এখন অবসরে অবশ্যই লিখছি। সার্থকতা সেখানেই যেখানে আমার লেখায় আনন্দ উপভোগ করবেন পাঠকবৃন্দ। সেই দিনটির কথা আমার মনে আছে, যেদিন কর্মজীবন থেকে অবসর নেওয়ার সময় নিখিল বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন আমাকে সম্মান জানিয়েছিলেন। এখন যুক্ত হয়েছি নবতরু ই-পত্রিকার সঙ্গে। আশা করব নবতরু ই-পত্রিকার উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি হোক।"

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আয়নাবন্দি: জিৎ সরকার (১/১২ পর্ব)
গদ্য- সাহিত্য গল্প ধারাবাহিক গল্প

আয়নাবন্দি: জিৎ সরকার

    গাড়িটা যখন বড়ো গেটের সামনে এসে দাঁড়াল তখন শেষ বিকেলের সূর্য পশ্চিমাকাশে রক্তাভা ছড়িয়ে সেদিনকার মতো সন্ধ্যেকে আলিঙ্গন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

    বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
    অসুর মর্দন(একাদশ পর্ব): জিৎ সরকার
    গদ্য- সাহিত্য গল্প ধারাবাহিক গল্প

    অসুর মর্দন(একাদশ পর্ব): জিৎ সরকার

      ভিড়টা মোড়ের বাঁকে অদৃশ্য হতেই শ্রী ঘরের দিকে ফিরতে উদ্যত হল, হঠাৎ নীচের দরজায় আওয়াজ উঠল। বাধ্য হয়েই অভিমুখে বদলে শ্রী নীচে এসে দরজা খুলল। দেখল ঋজু দাঁড়িয়ে, মুখে একটা হাসি খেলছে। এই হাসিটা একদিন ফিরে এসে শ্রী কিন্তু লক্ষ্য করেনি

      বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
      ধারাবাহিক গল্প

      অসুর মর্দন(১০ম পর্ব): জিৎ সরকার

        এতক্ষণে তমাল মুখের কঠিন রেখাগুলো অনেকটা সহজ হয়ে এসেছে, সে মৃদু হেসে বলে, “দ্যাখ পারব কি পারব না সেটা তো এখনি বলা যাচ্ছে না, তবে হ্যাঁ, একটা চেষ্টা করে দেখাই যাক, পরেরটা না-হয় পরেই বুঝে‌ নেব।

        বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন