Recent Post

স্বপ্ন উড়ান(২য় পর্ব:লন্ডন ভ্রমণের দ্বিতীয় দিন): তুলি মুখোপাধ্যায় চক্রবর্তী

স্বপ্ন উড়ান(২য় পর্ব:লন্ডন ভ্রমণের দ্বিতীয় দিন): তুলি মুখোপাধ্যায় চক্রবর্তী

(আগের পর্বটি পড়ুন)

ওয়াক্স মিউজিয়াম থেকে বেরিয়ে এবার ব্রেক, বিকেলের চা-স্ন্যাক্স। নির্দিষ্ট জায়গায় সবাই জড়ো হবার আদেশ সঠিক সময়ে। আমার বরের কাছে কিছু পুরোনো পাউন্ড ছিল, সেটা ওখানে ব্যাংকে এক্সচেঞ্জ করবে এটা আগেই ট্যুর ম্যানেজারকে বলা ছিল। আমরা তিনজন চললাম কাছের একটা ব্যাংকে। গিয়ে সব বলতেই ওরা দেখতে চাইল পাউন্ডগুলো। অনেকক্ষণ নিজেদের মধ্যে কথা বলে জানাল হেড অফিসে জানিয়ে জানাবে এগুলো এক্সচেঞ্জ হবে কি না কারণ অনেক পুরোনো পাউন্ড। আবার অপেক্ষা। অনেক ফোন করেও সুরাহা হল না। পাউন্ডের দুঃখ বুকে আর ব্যাক-পকেটে নিয়ে ঝাঁকে মিশলাম।

পরদিন সকালে আবার বেরোলাম সবাই।আজ বেশিটাই প্যানোরামিক ট্যুর। নামতে দেবার অনুমতি নেই। বিখ্যাত লন্ডন ব্রিজ, লন্ডন আই এছাড়া দ্রষ্টব্য আরও অনেক কিছু বাসে বসেই দেখতে হল। খাবার জন্য নামা আর তখন যতটুকু দেখা। সবচেয়ে ভালো লাগল ওখানে ‘ইউজ অ্যান্ড পে’ টয়লেটের বাইরেটাও সুসজ্জিত এবং বেঞ্চে বসে গল্প করছে জোড়া জোড়া ছেলে মেয়ে। পেনি নিয়ে ভিতরে যেতে হচ্ছে কিন্তু একটুও দুর্গন্ধ নেই। যা আমাদের দেশে ভাবাই যায় না। আজকে এরকম ঘুরেই ফিরলাম হোটেলে। পরদিন আর এক স্বপ্নের দেশ প্যারিস যাওয়া।

গুড বাই লন্ডন বলে সবাই রওনা দিলাম। যাত্রাপথের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখতে দেখতে। ইউকে’র ভিসা আলাদা। পুরো ইউরোপের সেনজেন ভিসা। এবার আবার লাইনে দাঁড়াতে হল। যে ভিসা নিয়ে ইউকে ঢুকেছি তা চলবে না। এক লম্বা লাইনে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেল ছাড়া পেতে। ক্রুজে ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে ঢুকব প্যারিস। টিপ টিপ বৃষ্টির মধ্যে বাস দাঁড়াল। আধঘন্টা সময় পেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লাম সবাই ক্যাফেটেরিয়াতে। লাইনে দাঁড়িয়ে কফি, স্ন্যাক্স আর টয়লেট। এবার শুরু হল খাবার কিনলেই টয়লেট ফ্রি, এই ব্যবস্থা। নাহলে বিশাল চার্জ।

আবার ছুটে ছুটে বাসে ওঠা। গাদা গাদা বাস লরি পার্ক করা। সব উঠবে ক্রুজে। ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে মানুষ এবং মালপত্র যাবে প্যারিস। ক্রুজের বিশালত্ব বোঝানো মুশকিল। জাহাজের পেটের ভিতর অন্ধকার স্যাঁতস্যাঁতে এক জায়গায় বাস থেকে নামিয়ে ট্যুর ম্যানেজার বুঝিয়ে দিল এই আট নম্বর লিফ্ট দিয়ে একদম টপ ফ্লোরে যেতে হবে আর এই লিফ্ট দিয়েই নেমে আসতে হবে। বাস এখানে থাকবে। সবাই ভালো করে দেখে নাও যাতে ভুল করে কোথাও চলে না যাও। ভুল হলে খুব মুশকিল খুঁজে পাওয়া। লিফ্ট ভুল করে হারিয়ে যাবার একবুক আতঙ্ক নিয়ে উঠলাম। চেষ্টা করছি চার বাঙালি ফ্যামিলি নিজেদের মধ্যে কথা বলতে আর দলের সাথে থাকতে। উপরে উঠে চোখ ধাঁধানো দৃশ্য। হালকা বৃষ্টি পড়ছে। ডেকে গেলাম সবাই। এই সেই ইংলিশ চ্যানেল। বুলা চৌধুরী কতবার পারাপার করেছে আর তাই মনে আছে। কি বিশাল আর গভীর!! জলের দিকে তাকালেই বুক কাঁপছে, ভয় আর ঠান্ডায়। বৃষ্টির দাপট বাড়তেই সবাই ঘেরাটোপে। যথারীতি ফেলো কড়ি থুড়ি ইউরো খাও চা কফি স্যান্ডউইচ। খাওয়া পর্ব মিটিয়ে অন্যান্য ফ্লোরে কী আছে দেখতে বেরোলাম। কত নম্বর লিফ্ট আর ফ্লোর সবসময় মনে রাখতে হচ্ছে। একটা ফ্লোরে শপিংমল। চোখ ধাঁধানো সম্ভার। দেখতেই সময় গেল। দেখার আর দেখানোর মেলা যেন। পেরিয়ে গেল সময়। নামতে হবে। প্যারিস!

Author

  • তুলি মুখোপাধ্যায় চক্রবর্তী:

    লেখিকা তুলি মুখোপাধ্যায় চক্রবর্তী ১৯৭০ সালে খড়্গপুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বাণিজ্য বিভাগে স্নাতক উত্তীর্ণ লেখিকা সাংসারিক কাজের ফাঁকেই লেখালেখির চর্চা করে যান। তাঁর ভালোলাগার বিষয়—বই পড়া, গল্প করা আর বেড়ানো। তাঁর লেখার অভ্যাস স্কুল জীবন থেকেই শুরু হয়। গল্প, কবিতা লিখতে ভালো লাগে তাঁর। বহু পত্রিকাতে লেখা প্রকাশিত হয়ে চলেছে নিয়মিতভাবে। ২০১৮ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় এমনই এক লেখা। সেই ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। তাঁর নিজস্ব সংকলন প্রকাশ পায় ২০১৯ সালে। এই সংকলনটি রাজভবন থেকে স্বয়ং রাজ্যপালের দ্বারা উন্মোচিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ভ্রমণ কাহিনি

স্বপ্ন উড়ান(৩য় পর্ব, ইউরোপ ভ্রমণ,প্যারিস): তুলি মুখোপাধ্যায় চক্রবর্তী

    শেন নদীর দুপারে ২০টি জেলা এবং জনবসতি নিয়ে অবস্থিত প্যারিস। ছবির মতোই সুন্দর প্যারিস। ক্রিস্টাল-ক্লিয়ার নীল জল আর আকাশ।

    বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
    ভ্রমণ কাহিনি

    স্বপ্ন উড়ান(কলকাতা-দুবাই-হিথরো): তুলি মুখোপাধ্যায় চক্রবর্তী

      স্বপ্নের জাল বোনা শুরু হয়েছিল কয়েকমাস আগেই। নির্ধারিত দিনে পৌঁছে গেলাম নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। অন্তর্দেশীয় উড়ানে বহুবার সফর করেছি কিন্তু দেশের বাইরে দ্বিতীয় বার। এবার দুবাই হয়ে লন্ডন।

      বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
      নবতরু-ই-পত্রিকা
      ভ্রমণ কাহিনি অক্টোবর ২০২১,পূজা সংখ্যা

      গজলডোবা ভ্রমণ: মিঠু ঘোষ

        উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি শহরের পাশেই রয়েছে গজলডোবা। কলকাতা থেকে যারা আসবেন তারা নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নেমে মাত্র ৩৫কিমি পথ চলে আসবেন সুন্দর গজলডোবা ভ্রমণ উপভোগ করতে।

        বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন