Recent Post

স্বপ্ন উড়ান(কলকাতা-দুবাই-হিথরো): তুলি মুখোপাধ্যায় চক্রবর্তী

স্বপ্নের জাল বোনা শুরু হয়েছিল কয়েকমাস আগেই। নির্ধারিত দিনে পৌঁছে গেলাম নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। অন্তর্দেশীয় উড়ানে বহুবার সফর করেছি কিন্তু দেশের বাইরে দ্বিতীয় বার। এবার দুবাই হয়ে লন্ডন। সিকিউরিটি চেকিং এর পর একটা অদ্ভুত উত্তেজনা নিয়ে অপেক্ষা লাউঞ্জে। এরপর ঘোষণা প্লেনে ওঠার। নতুন কিছু না আমার কাছে তাও একটা পেট গুড়গুড় ব্যপার। সামনে গিয়ে তো থ! এতদিন যত ফ্লাইটে চড়েছি, সেরকম কুড়িটা এর পেটে ঢুকে যাবে— এত বিশাল এমিরেটস্-এর প্লেন। ভিতরেও কি বাহার! কেবিন ক্রুদের পোশাক দেখেও চোখ ফেরানো যাবে না এত সুন্দর। সুন্দরী বিমান সেবিকাদের মাথায় ওড়না সহ টুপি এত সুন্দর যে বলার নয়। ছবি নিতে সাহস হয়নি। এরপর শুরু হল খাওয়া-দাওয়া। অঢেল খাবার দিচ্ছে আর আমরা কোঁচড়ে জড়ো করছি গাদা গাদা বান, কেক, চকলেট। চা, কফি, সফট ড্রিংকস ছাড়া ছোট ছোট বাটলিতে ওয়াইন এবং ড্রিংকসও ছিল। যে যত নেবে নাও। আমাদের একটা কি দুটো রো আগে বাংলা কথা বলা মা মেয়েকে দেখে বুঝলাম এরাও আমাদের মতোই ঘুরতে যাচ্ছে। ভদ্রলোকের সিট দূরে থাকায় ওরা একটু ভয় পেয়ে কাছে সিট এক্সচেঞ্জ করতে চেষ্টা করছিল। বাকি সবাই সাদা-কালো চামড়া বিদেশি। 

কলকাতাকে গুড বাই করে চলেছি দুবাই। সাড়ে চার ঘণ্টার জার্নি শেষ করে নামলাম। এবার বুঝলাম চেকিং কাকে বলে….. বিশালদেহী নিগ্রো মহিলা সিকিউরিটি। পায়ের জুতো, প্যান্টের বেল্ট তো ঠিক আছে, হাতের লোহা বাঁধানো পর্যন্ত খুলিয়ে ছাড়লো। ভয়ে আমার হাত থেকে সোনা বাঁধানো লোহা, আংটি কেউই বেরোতে চাইছিল না। ওদের চেহারা এদের বিদ্রোহী করে তুলেছিল। যাইহোক সব চেক করে এয়ারপোর্টের ভিতরে ঢুকে আবার অপেক্ষা চার ঘন্টা কানেক্টিং ফ্লাইটের জন্য। চকলেট পারফিউমের সাম্রাজ্য ঘুরে ঘুরে দেখি একটা স্টলে ফ্রিতে মুজ্ আর আইসক্রিম দিচ্ছে। বাঙালি আবার সেখানেও। যদিও আমার এসব ভাল লাগে না তাও সময় কাটাতে মেয়ে আর আমার ইতিউতি ঘোরা। পারফিউমের স্টোরেও তাই। স্যাম্পল যত আছে একের পর এক লাগিয়ে দেখি আর দুজনেই বলি, “উঁহ এটা ভালো না।” এই করে অনেক সুগন্ধী মাখা হয়ে গেল। সময় শেষ। এবার গন্তব্য হিথরো। আবার সেই বিশাল প্লেন, বহুত খাবার আর সাত ঘন্টা জার্নি। যত চলেছি ভারতীয় সময়ের সাথে অমিল হচ্ছে সময়। বেশ রাতে পৌঁছালাম হিথরো। 

এবার আমাদের দখল নিল ট্যুর কোম্পানির লোক। ফোন করে বাইরে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে বললো। এসে দেখি কলকাতার সেই বাঙালি মা মেয়ে এবং বাবা। এছাড়া আরেকটি বাঙালি ফ্যামিলি কেবল স্বামী স্ত্রী। যথা সময়ে গাড়ি এল। সবচেয়ে কম লাগেজ আমাদের। অন্য দুই ফ্যামিলির বোঝাই সুটকেস। বেশ ঠান্ডা লন্ডনে। সোয়াটার জ্যাকেট চাপিয়ে হোটেলের পথে চললাম। রাতে আর সেভাবে দেখা হয়নি কিছু। যে যার রুমের চাবি নিয়ে চেঞ্জ করে ডিনার টেবিলে।

কনকনে ঠান্ডা, কুয়াশায় ঢাকা সকাল। ব্রেকফাস্ট করেই উঠেছি নির্দিষ্ট বাসে। অন্যান্য রাজ্যের ভারতীয় বেশি। সবাই মিলে চলেছি রানির প্রাসাদ। বাকিংহাম প্যালেস। এলিজাবেথ ছিলেন না। আমরাও আর ঢুকলাম না। ভারতে ব্রিটিশ অত্যাচার মনে হতেই যতটা সম্ভব জুতো ঘষে নিলাম ওদেশের মাটিতে। এরপর আবার চলা। মাদাম ত্যুসো। টিকিট কেটে ঢোকা। অনেক ভীড় মোমের মূর্তির সামনে। অন্ধকার স্যাঁতস্যাঁতে। ভালো লাগলো না। অমিতাভ, শাহরুখ, সলমন আরও অনেক অনেক দাঁড়িয়ে আছে। অনেকেই ছবি তুলছে। বেশ ভিড়। ভাল না লাগলেও বেরোনো যাবে না। ঢোকা নিজের ইচ্ছায়। সব না দেখলে পিছু হটে বেরোতে পারবে না কেউ। ওদের ধরা বাঁধা পথে সব দেখে তবে ছাড়া। অনেক কিছু দেখার। কিন্তু আমার একটুও ভালো লাগছিল না। যেমন ভিড় তেমন লাইন আর ধৈর্য্য পরীক্ষা। সব উতরে এলাম সেভেন ডাইমেনশনাল একটা মুভি দেখতে। দ্য বেস্ট আজকের। ফোয়ারায় তো গায়ে জলের ছিটে লাগছে। যা দেখাচ্ছে তাই ফিল করছি। মন ভালো হয়ে গেল। এত ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষার খুব সুন্দর অবসান। এবার ফেরা। ছোট ছোট বগিতে চড়ে রেলে চড়ার মতোই। হেঁটে বেরোনো যাবে না। আগেই বলেছি ঢোকার পর সবটাই ওদের হাতে। চলন্ত অবস্থায় উঠতেই চলতে শুরু করলো ট্রেন। বাচ্চাদের রাইডের মতোই। এঁকে বেঁকে উঁচু নীচু ঘুরে ফিরে আসার পথেই আবার ছবিতে ক্যাপচার। টিভিতে নিজের মুখ দেখেই চমকে উঠলাম। ভয় পেয়ে বিগড়ে গেছে একদম। মেয়ে হ্যা হ্যা করে হাসতে লাগল। বাইরে খোলা আকাশের নিচে এসে আমি বাঁচলাম।

(ক্রমশ)

Author

  • তুলি মুখোপাধ্যায় চক্রবর্তী:

    লেখিকা তুলি মুখোপাধ্যায় চক্রবর্তী ১৯৭০ সালে খড়্গপুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বাণিজ্য বিভাগে স্নাতক উত্তীর্ণ লেখিকা সাংসারিক কাজের ফাঁকেই লেখালেখির চর্চা করে যান। তাঁর ভালোলাগার বিষয়—বই পড়া, গল্প করা আর বেড়ানো। তাঁর লেখার অভ্যাস স্কুল জীবন থেকেই শুরু হয়। গল্প, কবিতা লিখতে ভালো লাগে তাঁর। বহু পত্রিকাতে লেখা প্রকাশিত হয়ে চলেছে নিয়মিতভাবে। ২০১৮ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় এমনই এক লেখা। সেই ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। তাঁর নিজস্ব সংকলন প্রকাশ পায় ২০১৯ সালে। এই সংকলনটি রাজভবন থেকে স্বয়ং রাজ্যপালের দ্বারা উন্মোচিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ভ্রমণ কাহিনি

স্বপ্ন উড়ান(৩য় পর্ব, ইউরোপ ভ্রমণ,প্যারিস): তুলি মুখোপাধ্যায় চক্রবর্তী

    শেন নদীর দুপারে ২০টি জেলা এবং জনবসতি নিয়ে অবস্থিত প্যারিস। ছবির মতোই সুন্দর প্যারিস। ক্রিস্টাল-ক্লিয়ার নীল জল আর আকাশ।

    বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
    ভ্রমণ কাহিনি

    স্বপ্ন উড়ান(২য় পর্ব:লন্ডন ভ্রমণের দ্বিতীয় দিন): তুলি মুখোপাধ্যায় চক্রবর্তী

      গুড বাই লন্ডন বলে সবাই রওনা দিলাম। যাত্রাপথের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখতে দেখতে। ইউকে’র ভিসা আলাদা। পুরো ইউরোপের সেনজেন ভিসা। এবার আবার লাইনে দাঁড়াতে হল। যে ভিসা নিয়ে ইউকে ঢুকেছি তা চলবে না। এক লম্বা লাইনে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেল ছাড়া পেতে। ক্রুজে ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে ঢুকব প্যারিস।

      বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
      নবতরু-ই-পত্রিকা
      ভ্রমণ কাহিনি অক্টোবর ২০২১,পূজা সংখ্যা

      গজলডোবা ভ্রমণ: মিঠু ঘোষ

        উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি শহরের পাশেই রয়েছে গজলডোবা। কলকাতা থেকে যারা আসবেন তারা নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নেমে মাত্র ৩৫কিমি পথ চলে আসবেন সুন্দর গজলডোবা ভ্রমণ উপভোগ করতে।

        বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন