সাউরি-বাউরি: ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়
মৌ সাউরি বাউরিদের নোয়ামুন্ডির হাট থেকে সেই কবে এক আদিবাসীর কাছ হতে কিনে এনেছিল। তখনও তাদের চোখ ফোটেনি। গায়ের লোম দু-একটা সজারুর কাঁটার মতো। ঠোঁট আলতা। ল্যাজে একটু আধটু পালক, যেন ছোটো পোনা মাছের ল্যাজ। ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জে ডাল-ভাত মিহি করে আলতা ঠোঁটে ধরলেই বহুরূপী গিরগিটির মতো সাউরি বাউরির ঘাড় মাথা নড়ে উঠত। এক পেট খেয়ে, গলা ফুলিয়ে, চোখ বন্ধ করে ঝিমুতে বসত। মৌ বিরাট বড়ো একটা তারের খাঁচা কিনেছিল। খড় তুলো দিয়ে ওদের বাসাও খুব সুন্দর ছিল।

আস্তে আস্তে মৌ-এর লালন পালনে ওরা বড়ো হয়ে উঠতে লাগল। ওদের গা ঘন সবুজ পালকে ঢেকে গেল। চোখ গুলো মিশ কালো ড্যাব-ড্যাবে।
এই ভাবেই ওরা কিছুদিনের মধ্যেই পূর্ন-বয়স্ক হয়ে গেল। আশ্চর্য, বাড়িতে মৌ এর গলা শুনতে পেলে খাঁচার মধ্যে সাউরি বাউরি ট্যা-ট্যা করে ডানা ঝাপটাত।
একদিন সাউরি বাউরি ঠোঁট দিয়ে খাঁচার দরজা খুলে সবুজ গাছের ডাল পালায় মিলিয়ে গেল। মৌ এর মন উদাস হলেও ভাবল পাখিরা তো প্রকৃতির জীব। সুন্দর পৃথিবীতে গাছে, ডালে, খালে, বিলে, ঝোঁপেই এদের মানায়। এরা ডানা মেলে উড়তে ভালোবাসে স্বাধীনভাবে। যতই আমরা সুন্দর খাঁচায় আদর যত্নে খাদ্য দিয়ে পাখিকে বন্দি করি—পরাধীনতার শৃঙ্খল, সমাজের ভারসাম্য রক্ষাকারী পাখিদের কাছে শ্রেয় নয়। সর্বশক্তিমান ওদের ডানা দিয়েছেন পাখা মেলে উড়েই জীবনধারণ করতে।