সময়: পিনাকী সরকার
“বলিছে সোনার ঘড়ি, টিক-টিক-টিক
যা কিছু করিতে আছে, করে ফেল ঠিক,
সময় চলিয়া যায়
নদীর স্রোতের প্রায়
যে জন না বুঝে, তারে ধিক শত ধিক।
বলিছে সোনার ঘড়ি,টিক টিক টিক।”
হাটে বাজারে অনেক দামি জিনিস থাকলেও বর্তমান সময়ে মানুষের সবথেকে দামি জিনিস হল সময়। নদী ও সময় দুটোই প্রবহমান। ঠিক যেমন নদীর প্রবাহিত স্রোত কখনওই ফিরে আসে না, তেমন সময়ও কখন ফিরে আসে না। মানুষের জীবনও কিছুটা নদীর প্রবাহের পথে মতন। নদীর প্রবাহ পথ যেমন কখনও সমতল আবার কখনও অমসৃণ তেমন মানুষের জীবন ও ভালো , খারাপের সংমিশ্রণে সংগঠিত। সময়ের প্রবাহ পথে কখনও আসে ভালো সময় আবার কখনও আসে খারাপ সময়। তাই সময় মানুষকে অনেক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে শেখায়।
পার্থিব জীবনে ধন সম্পদ হাতছাড়া হলেও তা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে বেশি ভাগ টাই পুনরায় পাওয়া যায়, স্বাস্থ্য নষ্ট হলে চিকিৎসার মাধ্যমে তা ফিরে পাওয়া যায় কিন্তূ যে সময় একবার চলে যায় তা আর কখনওই ফিরে আসে না। যেমন আপনি হাজার হাজার টাকা ব্যয় করলেও কখনওই গত কালের দিনটি ফিরিয়ে আনতে পারবেন না । তাই আবুল ফজল বলেছেন ” অনেক কিছুই ফিরে আসে, ফিরিয়ে আনা যায় কিন্তূ সময়কে কখনও ফিরিয়ে আনা যায় না”। তাই জাগতিক কোন একক দিয়ে সময়কে মাপা যায় না ।

বর্তমান সময়ে মানুষ অনেক ক্ষতির চিন্তা করে তবে জীবন থেকেএকদিন যদি অকারনে চলে যাওয়া মানে যে কতটা ক্ষতি তা সিংহভাগ মানুষ হিসাব করে দেখেন না। তাই সময় অপচয় মনে জীবনের একটি অংশ অপচয় করা। আর সেই অপচয়ের পরিনাম ভয়াবহ।
সময় অতি মূল্যবান । তাই সময় কে অবহেলা, উপেক্ষা, অপচয় করলে তার মূল মানুষকে দিতে হয়। কথায় বলে সময় থাকতে কিছু না করলে জীবনে অনিবার্য ভাবেই নেমে আসে দুঃখের অমানিকা । অলস্য , কর্মবিমুখ,ও উদাসীন ভাবে কাটালে জীবনে কখনই সফলতা আসে না। আর যদি সময়ের সঠিক ব্যবহার করা হয় তাহলে জীবন সার্থক হয়ে ওঠে।
এই পৃথিবীতে অনেকেই অভিযোগ করে বলেন সৃষ্টিকর্তা আমার কিছু দেয়নি তাই আমি ব্যর্থ কিন্তু একবার ভেবে দেখুন, আমরা সবাই জীবনে সময়টাকেই উপহার হিসেবে পেয়েছি যার উপযুক্ত ব্যবহারের ফলে আমরা আমাদের লক্ষ্যে সহজেই পৌঁছাতে পারি। আর আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে যত সফল মানুষ জন্মেছে তাঁরা সবাই সময়কে মূল্য দেওয়ার ব্যপারে অন্যদের থেকে এগিয়ে ছিলেন। তাই দার্শনিক লা ব্রুয়ের বলেছেন, “যারা সময়কে ঠিকমতো ব্যবহার করতে না-পারে, তারাই অভিযোগ করে।”
তবে সময় পরিবর্তনশীল। সময় হল একপ্রকার অদৃশ্য শিক্ষক। সময় মানুষকে উপলব্ধি করতে শেখায়, মানুষকে পরিবর্তনশীল হতে শেখায়। কলেজে যে দুইজন বলেছিল যে একে অপরকে ছাড়া বাঁচবেনা, সময়ের ব্যবধানে আজ মেয়েটি এক নামকরা ব্যবসায়ীর স্ত্রী আর ছেলেটি মানসিক রোগী। যে ছেলেটা স্কুলে টেনেটুনে পাশ করত—আজ সমায়ের ব্যবধানে সে আইপিএস অফিসার। তাই মানবজীবনে প্রতি মুহূর্তে সময়ের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই সময়ের ব্যবধানে অনেকে শিখর সর্বচ্চে পৌঁছায় আর অনেকে সময়ের স্রোতে নিজেকে হারিয়ে ফেলে সর্বহারা হয়ে যায়।
সবশেষে বলি—সময়ানুবর্তিতা একটা সফল মানুষের চাবিকাঠি। নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হলে সময়কে সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে হবে। সময়ের ব্যবহার একটা দেশ ও জাতিকে উন্নতির সর্বচ্চে পৌঁছে দিতে পারে। নিজেকে সফল করার জন্য কোন সময় কোন কাজ করবেন তা আগে থেকেই ঠিক করে রাখবেন। আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে যে আমরা যেন সময়ের দাস হয়ে না পড়ি, সময়কেই আমাদের দাস হতে হবে।