“আহা একটু শান্ত হয়ে বসুন না দাদা, কিছুক্ষণ পরে বৌদি নিশ্চয়ই খবরটা জানাবেন ” সৌভিকের উৎকণ্ঠা আর দুশ্চিন্তা দেখে কথাটা বলে উঠলেন পাশের টেবিলের রিনা ম্যাডাম। সৌভিক একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ভালো পোস্টে চাকরি করে। চাকরির বাইরে ধ্যান জ্ঞান বলতে নিজের ছোট পরিবার। একমাত্র মেয়ে প্রমিতা। আদর,যত্ন যেমন সবটুকু দেওয়ার চেষ্টা করেছে তেমনি প্রয়োজনে কড়া শাসন করেছে। চারপাশে এত প্রতিযোগিতা, এত ভালো ভালো ছেলে মেয়ে তাদের মধ্যে থেকে সাফল্য পেতেই হবে। ইঁদুর দৌড় অথবা নম্বর পেয়ে কি হবে অথবা এখন তো সবেতেই দু নম্বরী, যে যাই বলুক সৌভিক জানে এর মধ্যে থেকেই লড়াই করতে হবে। টেস্টে নম্বরটা খারাপ ছিল না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিক বলে কথা! যতক্ষণ না পর্যন্ত রেজাল্ট হাতে পাওয়া যাচ্ছে নিশ্চিত হওয়া যায় না। বার পাঁচেক মেয়েকে ফোন করেছে, মেয়ে বলল অন লাইনে এখনো দেখায়নি নম্বর।

মনের ভেতর থেকে ছটফটানিটা কিছুতেই যাচ্ছে না। “ধুর একটু মোবাইলটা ঘাঁটি” বলেই ফেসবুক টা খুলে ফেলল সৌভিক। মিনিট পাঁচেক এদিক-ওদিক করতে করতে হঠাৎ মোবাইল পর্দায় ভেসে উঠলো একটা স্কুলের ছবি, দশ-বারোটি মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করতে না পেরে প্রিন্সিপালের অফিসের সামনে ধর্নায় বসেছে। একটি মেয়েকে রিপোর্টার ভদ্রমহিলা প্রশ্ন করায় মেয়েটির বক্তব্য “টেস্ট পরীক্ষায় আমরা সবাই ভালোভাবে পাস করেছি অথচ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় আমাদের ফেল করিয়ে দেওয়া হয়েছে ইচ্ছে করে। আমাদের পাস করাতেই হবে।” সৌভিকের মনে মনে বেশ রাগ হচ্ছিল “যতসব আদিখ্যেতা!” হঠাৎ চোখ আটকে গেল সৌভিকের। আরে!! প্রমিতা না! ওই যে বাঁদিকে তিন নম্বরে দাঁড়িয়ে। আরে! রিপোর্টার ভদ্রমহিলা প্রমিতার কাছে গিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করতেই মেয়ে বললো “নো কমেন্টস!”
(ক্রমশ)