Recent Post

সবটাই কি কাল্পনিক(২য় পর্ব): শান্তনু ভূঁইয়া

(আগের পর্বটি পড়ুন)

মাথাটা এক মুহূর্ত কেমন যেন ঘুরে গেল। চারপাশে একবার দেখে নিল, কেউ কি ভিডিয়োটা দেখছে? নিজেও তাড়াতাড়ি ভিডিয়োটা, এমন কি ফোনটাই বন্ধ করে দিল। একটু বাথরুম ঘুরে এসে প্রয়োজনীয় দু-একটা ফাইলের কাজ সারল। তারপর কী মনে হতে আবার ফোনটা অন করল। তাড়াতাড়ি ফেসবুকটা অন করে দেখে মেয়ের স্কুলের বিষয়টা নিয়ে তীর্যক আর হাস্যকর মন্তব্য ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে। সারা শরীর দিয়ে প্রচন্ড ঘাম ছুটতে লাগল সৌভিকের। কোনওমতে ম্যানেজার সাহেবকে, “আজ বাড়ি যাচ্ছি’— কথাটি ছুড়ে দিয়ে বেরিয়ে পড়ল অফিস থেকে। 

দিগ্বিদিক জ্ঞান-শূণ্য হয়ে সাইকেল চালাচ্ছে সৌভিক। “না! বাড়ি যাওয়া যাবে না কাউকে এ মুখ দেখানো যাবে না” —ভাবতে ভাবতে বাড়ির গলি পাশে রেখে রেলস্টেশনের পথ ধরল সৌভিক। চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে আসছে! “কী করে সম্ভব! প্রমিতা ফেল করল?” 

নিজের মনে বিড়বিড় করতে করতে সাইকেলটা পাশে রেখে রেল লাইন ধরে হাঁটতে থাকে সে। হঠাৎ লাইনের উপর জটলা দেখে হুশ ফিরল সৌভিকের। লোকজনের ভিড় সরিয়ে ভেতরে ঢুকতে হাত পা অসাড় হয়ে এলো সৌভিকের। প্রমিতার অসাড় দ্বিখণ্ডিত দেহ। “মা রে!” বলে মেয়ের রক্তে ভেসে যাওয়া শরীরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল সৌভিক। লোকজন ছুটে এসে তুলে ধরল সৌভিককে। রেল পুলিশের এক অধিকর্তা সেই মুহূর্তে অকুস্থলে পৌঁছে পিতার কোলে কন্যার মৃতদেহ দেখে একটু চমকে যান। লোকজনের ভিড় সরিয়ে সৌমিককে বলে, “মেয়েকে নিয়ে চলে যান। আমরা নিয়ে গেলে কাটাছেঁড়া হবে, বডি পেতেও অনেক সময় লেগে যাবে। লোকাল কোন ডাক্তারকে ডেকে একটা ডেথ সার্টিফিকেট করিয়ে নেবেন।” 

সৌভিকের সেই মুহূর্তে একটা ছোট্ট শিশুকে তোলার ক্ষমতাও নেই; নিজের মেয়ের শরীরের বোঝা সে বইবে কী করে? স্থানীয় পরিচিত কিছু লোক মেয়ের মৃতদেহ এবং বাবাকে ঘরে পৌঁছে দিল। 

বাড়ি পৌঁছে সৌভিক মেয়ের হাতে মুঠো করা একটা কাগজের টুকরো দেখতে পেয়ে দ্রুত সেটা নিয়ে নিল। প্রমিতার মা পাগলের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছে মেয়ের ডেড বডির উপর। সবার চোখ বাঁচিয়ে মেয়েকে মায়ের কাছে রেখে বাথরুমে গিয়ে কাগজ খুলে সৌভিক দেখে একটি হাত চিঠি, “বাবা, আমি জানি তুমি আমার ভালোর জন্যই খুব চিন্তা করো। কোন যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে আমার উচ্চমাধ্যমিকের নম্বর হাতে পেতে দেরি হয়েছে। আর তাই স্কুলে গেছিলাম খোঁজ নিতে। বাবা তুমি বলেছিলে কম করেও ৮৫ শতাংশ চাই। না হলে তুমি ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে আত্মহননের চেষ্টা করবে। বাবা আমি ৮৩.৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছি। বাবা আমি চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু কেন জানি না কেমিস্ট্রি আর ইংরেজিতে নম্বরটা একটু কম পেয়েছি। বাবা আমি জানি তুমি খুব হতাশ হবে আমার রেজাল্ট দেখে। তার উপর আমার কয়েকজন বন্ধুরা প্রিন্সিপাল ম্যাডামের অফিসের সামনে তাদের পাস করিয়ে দেওয়ার জন্য আন্দোলনে নেমেছিল। আমি শুধু তাদের সান্ত্বনা দিতে গেছিলাম কিন্তু মোবাইলে এমন ভাবে ঘটনাটা ছড়িয়ে গেল যেন আমিও পাস করতে পারিনি বলে আন্দোলন করছি। যারা কিছু না জেনেই মোবাইলে এই ঘটনা উল্লেখ করে হাসির খোরাক খুঁজছেন তারা ভুল করেছেন।আমি জানি তুমি ঘটনাটা দেখেছো মোবাইলে আর মরমে মরে যাচ্ছ এই ভেবে যে তোমার মেয়েও ফেল করেছে। বাবা আমি তোমার ভালো মেয়ে হতে পারিনি। তবে তোমরা খুব ভালো বাবা মা । পরের জন্মে যেন আবার আমি তোমাদের মেয়ে হয়ে জন্মাই। আমায় ক্ষমা করো বাবা। আমি ভালো রেজাল্ট করতে পারিনি, তাই এই পথ বেছে নিলাম। তোমরা খুব ভালো থেকো, ইতি তোমার মামন।” 

“হা ঈশ্বর! সন্তানের ভালো চাওয়া কি মা-বাবার অপরাধ? অনেক কষ্টে কথাটা বলে বাথরুমে মাথা ঘুরে পড়ে গেল সৌভিক। বাথরুম জুড়ে বাবার আশা-আকাঙ্ক্ষা ভালোবাসারা ভেসে যাচ্ছে রক্তের স্রোতে।

(সমাপ্ত)

Author

  • শান্তনু ভূঁইয়া

    অধুনা পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল শহরে ১৯৭৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন কবি শান্তনু ভূঁইয়া। স্থানীয় রামকৃষ্ণ মিশন হতে মাধ্যমিক ও হুগলি মহসিন কলেজ হতে বাণিজ্য বিভাগে স্নাতক স্তরের পাঠ সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি ভারতীয় রেলের অধীনে চন্দননগর স্টেশনে 'স্টেশন মাস্টার' পদে কর্মরত। অবসর সময়ে বই পড়া, খেলাধুলা ও বন্ধুদের সঙ্গে অরাজনৈতিক আলোচনা করতে পছন্দ করেন তিনি। হুগলি জেলার চুঁচুড়ার কবি শান্তনু ভূঁইয়ার বিভিন্ন লেখালেখি সাম্প্রতিক কিছু ই-পত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আয়নাবন্দি: জিৎ সরকার (১/১২ পর্ব)
গদ্য- সাহিত্য গল্প ধারাবাহিক গল্প

আয়নাবন্দি: জিৎ সরকার

    গাড়িটা যখন বড়ো গেটের সামনে এসে দাঁড়াল তখন শেষ বিকেলের সূর্য পশ্চিমাকাশে রক্তাভা ছড়িয়ে সেদিনকার মতো সন্ধ্যেকে আলিঙ্গন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

    বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
    অসুর মর্দন(একাদশ পর্ব): জিৎ সরকার
    গদ্য- সাহিত্য গল্প ধারাবাহিক গল্প

    অসুর মর্দন(একাদশ পর্ব): জিৎ সরকার

      ভিড়টা মোড়ের বাঁকে অদৃশ্য হতেই শ্রী ঘরের দিকে ফিরতে উদ্যত হল, হঠাৎ নীচের দরজায় আওয়াজ উঠল। বাধ্য হয়েই অভিমুখে বদলে শ্রী নীচে এসে দরজা খুলল। দেখল ঋজু দাঁড়িয়ে, মুখে একটা হাসি খেলছে। এই হাসিটা একদিন ফিরে এসে শ্রী কিন্তু লক্ষ্য করেনি

      বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
      ধারাবাহিক গল্প

      অসুর মর্দন(১০ম পর্ব): জিৎ সরকার

        এতক্ষণে তমাল মুখের কঠিন রেখাগুলো অনেকটা সহজ হয়ে এসেছে, সে মৃদু হেসে বলে, “দ্যাখ পারব কি পারব না সেটা তো এখনি বলা যাচ্ছে না, তবে হ্যাঁ, একটা চেষ্টা করে দেখাই যাক, পরেরটা না-হয় পরেই বুঝে‌ নেব।

        বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন