ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়

স্মৃতির মনিকোঠায় শৈশব আমার জীবনে এখন ঝরাপাতা। আকাশ যেমন পৃথিবীর মাটি ছোঁয়, আমার অন্তরাত্মাও। আর তো কচিপাতার প্রস্ফুটন, সবুজে ভরে যাওয়া নয়। শৈশবের ঝরাপাতা এক ইতিহাস, মহাকালের নিয়মে একটি সময়, একটা কাল। তবুও মন কেমন করে। দূর-আকাশে অন্যমনস্কতার মেঘে চেপে পৃথিবীর মাটিতে শৈশব খুঁজি। কত বছরের ইতিহাস। হারিয়ে যাওয়া অসংখ্য ছেলেবেলা। বড্ড মনে পড়ে আমার স্বপ্নের সাতগেছিয়া মেঘমালা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্মৃতির আঙিনায় জ্বলজ্বল করে আমার প্রণম্য মাষ্টারমশাইরা। শেষা চৈত্রের গরমে স্কুল প্রাঙ্গণের ট্যাপকলে বুক-পা উঠিয়ে হ্যাচাঙ মেরে শীতল জলে শরীর ঠাণ্ডা করা। স্কুল শেষে, স্কুল প্রদক্ষিণ করে বন্ধুদের সাথে "গমাগম পারে হিরো" খেলা। মনে পরে গরমে ১লা বৈশাখ নতুনখাতা, কাকার সাথে সাইকেলে চড়ে দোকানে নতুন ক্যালেন্ডার মিষ্টির প্যাকেট সংগ্রহ করা। সে এক ভীষণ মজা। আমার প্রাণের গ্রাম সাতগেছিয়া, জৈষ্ঠ্যে দশহারা উৎসব উপলক্ষে মনসাতলায় বিশাল মেলা, গ্রাম ডগর-ব্যান্ডপার্টী বাদ্যে মুখর। যৌথপরিবারে সকলের কাছে আট-আনা সংগ্রহ করে বন্ধুদের সাথে স্বাধীনসত্তায় বাদাম পাঁপড়ে মেলা উপভোগ করা। ভুলি কী করে? গ্রীষ্মের দুপুরে দাদুর পাশ হতে চুপিচুপি উঠে গ্রামের ভল্লুকা নদীতে অ-প্রবাহিত কালো জলে, সবুজ পানায় ডাক পাখি খোঁজা। স্মরনীয় হয়ে আছে, দাদুর কাছে তামার তিন পয়সা নিয়ে পাড়ার নেড়াগিন্নীর দোকানে আলুকাবলি খাওয়া। স্মৃতির পাতায় শৈশবের গরমকাল, যেন মনে হয় ছোট থাকাই ভাল ছিল। কেন বড় হলাম।।