প্রিয়,
অনুব্রত
কেমন আছিস বন্ধু? সেই তো কবে দেখা হয়ে ছিল তারপর তো আর তোর সাথে দেখাই হয়নি। সেই স্কুলের প্রথম দিন থেকে আমাদের বন্ধুত্ব। স্কুলের সেই মজার ও দুষ্টমির দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ে যায় রে! তোরও কি মনে পড়ে? আমরা অয়নের ভয়ে স্কুল যেতাম না, রোজ কাঁদতাম, খুব মারত আমাদের। তারপর ধীরে ধীরে আমাদের বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। তখন স্কুল না-গেলেই খুব মন খারাপ করত বন্ধুদের জন্য। সেই দিনগুলো কত ভালো ছিল। এখনও মনে হয় সেই মজার দিনগুলোতে ফিরে যেতে।

স্কুল তো বন্ধ, তোর এখন কী করে সময় কাটে রে? আমি তো সারাদিন কত কিছু করি—তবলা বাজাই, ছবি আঁকি, পড়াশোনা করি, টিভি দেখি, আবার মাঝে মাঝে লিখতেও বসি। আসলে আমার মা বলেন ছোট বয়স থেকেই আমাদের লেখার অভ্যাস করা উচিত। তাই আমি সময় পেলেই লিখতে বসি ডায়েরি নিয়ে। কতদিন হয়ে গেল আমরা কোথাও ঘুরতে যাই নি। তোরা কি এর মধ্যে কোথাও ঘুরতে গিয়েছিলিস? আমার মনে হয় এই ঘুরতে যাওয়ায় কথাটা মন থেকে দূর করতে হবে। এই সময় আবেগ ভুলে সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের একটু সাবধানতা ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আমার ভাবলে খুব কষ্ট হয় করোনার সময় কত মানুষ মারা গেল! তবে ভেঙে পড়লে হবে না, মনে সাহস রাখতে হবে। মনে জোর রেখে এই করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। আমাদের স্কুলের বাইরে সেই আখের রস বিক্রি করত, লজেন্স বিস্কুট বিক্রি করত সেই কাকুগুলোকে তোর মনে পড়ে? তাদের এখন আর দেখা যায় না। স্কুল বন্ধ তাই তারাও আসে না। ভাবলে কষ্ট হয় এইসব মানুষদের লকডাউনের কারনে কত কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে। কাজ নেই অভাব, তাই তারা তাদের বাচ্চাদের দু-বেলা খেতে দিতেও পারছে না। আবার সামনেই তো পূজা। পূজোর মজাও এবার যেন নেই রে। যখনই ভাবি ওই কাকুদের বাচ্চারা কি এবার পূজোয় জামা পাবে একটাও? খারাপ লাগে খুব। আমাদের পাড়ার খাদুকাকুকে মনে আছে তোর? আরে সেই ঝালমুড়ি বিক্রি করত। জানিস আমার বাবা বলেছেন এবার পুজোতে কাকুর বাচ্চাদের জন্য জামা কিনে দেবে।

একটা কথা তো বলতে ভুলেই গেলাম— আমার ছোট্ট বোনটা তোর কথা খুব বলে রে! আমাদের বাড়ি একদিন আয় না, সেই আগের মতো ছাদে খেলব। জানি এখন আসতে বলাও ঠিক নয়, কী করব মন খারাপ করে যে! চারপাশের মানুষগুলো কেমন যেন পাল্টে যাচ্ছে। একে অপরকে দেখে আমরা ভয় পাচ্ছি। এই ভয় আমাদের মন থেকে কবে দূর হবে জানিনা। জানিস আমার ঠাম্মা বলেন মনে সাহস রাখলে কোনও ভয়কেই ভয় বলে মনে হবে না। সাহস যেমন দরকার সাবধান থাকাও দরকার। তুইও সাবধানে থাক। তাহলে আর কোনও ভয় থাকবে না। তবে করোনা আমাদেরকে একটা জিনিস স্পষ্টভাবে শিখিয়েছে যে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা আমাদের জীবনে খুবই দরকার। চারিদিকে এখন মানুষের নানা সমস্যা। পরিবহন ব্যবস্থা ঠিকমত না-থাকায় মানুষের যাতায়াতের খুব সমস্যা দেখা দিয়েছে। চিঠিটা খুবই বড় হয়ে গেল। জানি তোর পড়তে খুব কষ্ট হবে হয়তো। কিন্তু কী করব? কথা তো আর ফুরোয় না। খুব মন খারাপ করে তোর জন্য। আমরা আবার কবে একসঙ্গে স্কুলে যেতে পারব, হুল্লোড় করতে পারব বলতো? সেই সবাই মিলে ছুটে ছুটে খেলা, তিন গুন্তি করে জোরে জোরে চিৎকার, বাবার সঙ্গে গঙ্গার ধারে ঘুরতে যাওয়া। পার্কের খেলার মজা আবার কবে পাব বলত কবে আসবে ওই দিনগুলো?
চিঠি এখানেই শেষ করছি ভাই চিঠিটা পড়িস কিন্তু। আর উত্তর দিতেও ভুলিস না। তুই আমার ভালোবাসা নিস। বড়োদের আমার প্রণাম জানাস। আর কাকিমাকে বলিস তোকে একদিন যেন আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসেন। সেই আগের মতো মজা করে একটা দিন কাটাবো। পুজোর আগাম শুভেচ্ছা রইল। মা দুর্গাকে বলিস করোনা নামের অসুরকে বধ করে পৃথিবীতে আবার যেন সুখ শান্তি ফিরিয়ে আনেন। ভালো থাকিস। সুস্থ থাকিস।
ইতি—
তোর প্রিয় বন্ধু
ময়ূখ
এ যেন সব স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মনের কথা। কেউ লেখে, কেউ বলে, কেউ শুধু চুপচাপ ভাবে। দুঃখটা সবার একই সুরে বাজে।
দারুন হয়েছে ময়ূখ বাবু। চালিয়ে যাও।