Recent Post

মিলনরেখা(৫ম/অন্তিম পর্ব): অর্ণব মিত্র

(আগের পর্বটি পড়ুন)

                           []আট[]

অন্তিকের মা চলে গেছে আঠারো দিন হল। আজ ওর মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট নিতে যাবার কথা কলেজে। কলেজে গিয়ে ও অবাক হল পূর্বাশা আর প্রচেতাকে দেখে। পূর্বাশাকে অন্তিক আলাদাভাবে ডেকে বলল,”আসলে ওই কদিন আমার উপর দিয়ে যে ঝড় গেছে না… মাফ করে দিস পূর্বা। এতকিছুর পরও যে তুই আজ এসেছিস এটাও বা কজন করে। তোর ভালোবাসা মিথ্যা ছিল না!… নইলে হাসপাতালে এতোগুলো দিন সেই অনন্তপুর থেকে ছোটাছুটি। আর তো আজকের পর কোন দিনও দেখা হবে না তাই তোকে কথাগুলো বললাম।”

ক্যাম্পাস থেকে বাইরে বেরিয়ে প্রচেতা বাস ধরার জন্য স্টপেজে এসে দাঁড়ালো। পিছনে ছুটতে ছুটতে অন্তিক এলো।

“তুমি চলে যাবে বলেই স্থির করেছ?”

“হ্যাঁ। কী হবে আর এখানে থেকে? যে মানুষটার জন্য থাকব ভেবেছিলাম সেই মানুষটাই তো আর রইল না। আমি একটা কথা বলি প্রচেতা… তুমি যা করেছ আমার জন্য এই কদিন আমার পরমাত্মীয় মনে হয় এতটা ভাবেনি। দেখো আমার জীবনের কোন ঠিক-ঠিকানা নেই। বিদেশে যাচ্ছি কবে আসবো জানি না। তোমার একটা সাজানো গোছানো জীবন পড়ে আছে আমার সঙ্গে নিজের জীবন জড়িয়ে এভাবে নষ্ট করে দিও না।”

“স্বার্থপরের মত এভাবে চলে যাবে তুমি। তোমার চোখে আমি অন্য জীবনদর্শন দেখেছিলাম। আমি যাকে চিনি সে এইভাবে হেরে যেত না তার চোখে অনেক দূর যাওয়ার স্বপ্ন ছিল…”

“দেখো প্রচেতা… একটা কথা জেনে রাখবে সব গল্পের পরিণতির দরকার হয় না। গল্পটা না হয় অসমাপ্তই থেকে যাক। তাহলে তো নিজের মত করে গল্পটার সুন্দর শেষ করা যাবে। আমরা যতদিন বাঁচবো এই গল্পটাকে শেষ করার ভাবনা বুনতে থাকবো। আশা করি নতুন জীবন তোমার খুব ভালো কাটবে। আমি তো কোনদিনও তোমাকে ভুলতে পারব না, টুকরো স্মৃতিগুলোকে নিয়ে সারা জীবন বেঁচে থাকবো। ভালো থেকো।”

“সুখ-আশে দিশে দিশে বেড়ায় কাতরে

মরীচিকা ধরিতে চায় এ মরুপ্রান্তরে..”

                           []নয়[]

“কী হবে গতি, বিশ্বপতি, শান্তি কোথা আছে

তোমারে দাও, আশা পূরাও, তুমি এসো কাছে।”

পূর্বাশা ছোট একটা আইটি সেক্টরে চাকরি করছে। ওকে এখন আর কেউ পূর্বা বলে ডাকে না। ও ছুটতে ভালোবাসে, পেতে ভালোবাসে। কিন্তু কখনো কখনো তো একটু থামার দরকার পড়ে।

“ফুরায় বেলা, ফুরায় খেলা, সন্ধ্যা হয়ে আসে

কাঁদে তখন আকুল-মন, কাঁপে তরাসে”

প্রচেতা এখন গৃহিণী হয়ে উঠেছে। এমন শ্বশুরবাড়ি পাবে কল্পনা করেনি। সংসারের সাথে পুরোদমে এম.টেক. এর পড়া চলছে। ওর মাকে আর বাড়িতে বাড়িতে কাজ করতে হয় না। এক দশক পর সুখ ফিরেছে। একটু লেখালেখিও শুরু করেছে প্রচেতা। যার অনুপ্রেরণা অন্তিক। সেই অসমাপ্ত গল্পের মধুরেণ সমাপন প্রচেতাকে করতেই হবে। অন্তিক কেমন আছে?

“সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।”

বার্লিনে কেউ প্রভাত ফেরী করে না। কেউ বাংলা গান গায় না। কেউ রবীন্দ্রনাথ আবৃত্তি করে না। এই দেশে মায়ের গন্ধটাই নেই। গন্ধটা আর কোনদিন আসবে না। সবাই যেন এক অসীম লক্ষ্যের দিকে ছুটে চলেছে। অন্তিকও পড়াশোনা আর চাকরি একসাথে সামলাচ্ছে। আর বোধহয় কোনদিনও দেশে ফেরা হবে না। ওই কলকাতা শহরে তো নয়ই। শহরটা সর্বগ্রাসী। প্রচেতা নিশ্চয়ই খুব সুখে সংসার করছে। ও সেই গল্পটা শেষ করবে তো?

তিনটি নদীর নিজের মতো করে বয়ে চলে। আপন গতিতে,আপন স্রোতে বয়ে চলা। মেশার অভীপ্সা থাকলেও তার উপায় থাকেনা। এক অদৃশ্য মিলনরেখা পৃথক করে রাখে।

“মিলন হবে কত দিনে?

ও আমার মনের মানুষেরও সনে….”

(সমাপ্ত)

Author

  • অর্ণব মিত্র

    লেখক অর্ণব মিত্র ২০০২ সালে কলকাতার বেহালাতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শিবু মিত্র ও মাতা বাবলি মিত্র। বর্তমানে (২০২২) তিনি বিজ্ঞান বিভাগে দ্বাদশ শ্রেণিতে পাঠরত। তিনি লেখালেখি শুরু করেন দশম শ্রেণির পর থেকেই। প্রায় কুড়িটি অনলাইন পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করে ঊলেছেন। বিদ্যালয় থেকে বহুবার পেয়েছেন সৃজনশীল ছাত্রের পুরস্কার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আয়নাবন্দি: জিৎ সরকার (১/১২ পর্ব)
গদ্য- সাহিত্য গল্প ধারাবাহিক গল্প

আয়নাবন্দি: জিৎ সরকার

    গাড়িটা যখন বড়ো গেটের সামনে এসে দাঁড়াল তখন শেষ বিকেলের সূর্য পশ্চিমাকাশে রক্তাভা ছড়িয়ে সেদিনকার মতো সন্ধ্যেকে আলিঙ্গন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

    বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
    অসুর মর্দন(একাদশ পর্ব): জিৎ সরকার
    গদ্য- সাহিত্য গল্প ধারাবাহিক গল্প

    অসুর মর্দন(একাদশ পর্ব): জিৎ সরকার

      ভিড়টা মোড়ের বাঁকে অদৃশ্য হতেই শ্রী ঘরের দিকে ফিরতে উদ্যত হল, হঠাৎ নীচের দরজায় আওয়াজ উঠল। বাধ্য হয়েই অভিমুখে বদলে শ্রী নীচে এসে দরজা খুলল। দেখল ঋজু দাঁড়িয়ে, মুখে একটা হাসি খেলছে। এই হাসিটা একদিন ফিরে এসে শ্রী কিন্তু লক্ষ্য করেনি

      বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
      ধারাবাহিক গল্প

      অসুর মর্দন(১০ম পর্ব): জিৎ সরকার

        এতক্ষণে তমাল মুখের কঠিন রেখাগুলো অনেকটা সহজ হয়ে এসেছে, সে মৃদু হেসে বলে, “দ্যাখ পারব কি পারব না সেটা তো এখনি বলা যাচ্ছে না, তবে হ্যাঁ, একটা চেষ্টা করে দেখাই যাক, পরেরটা না-হয় পরেই বুঝে‌ নেব।

        বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন