[]পাঁচ[]
আজকের পর আবার অন্তিকের সাথে দেখা হবে সেই স্টেজ রিহার্সালের দিন। আজ পূর্বাশার ওকে কথাগুলো বলতেই হবে নইলে সারাজীবন না বলাই থেকে যেতে পারে। ছেলেটাও যেন একটু হাঁদা হাঁদা। নিজে থেকে না বললে যেন বুঝতে পারে না কিছু। পূর্বাশার ধারণা ওর মতো সুন্দরী আর বড়লোক বাবার মেয়ে অন্তিককে যে প্রেম নিবেদন করবে সেটাই অন্তিকের ভাগ্য।
অন্তিক ‘তোমাকে না লেখা চিঠিটা ডাকবাক্সের এক কোণে’ গানটা তুলছিল। হঠাৎ করেই পূর্বাশা ওকে পিছন দিয়ে জড়িয়ে ধরল। পূর্বাশাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে অন্তিক চেঁচিয়ে বলল, ” কী হচ্ছেটা কী পূর্বা? কী চাই?”
—”তুই না বড্ড আনরোমান্টিক! এত সুন্দর একটা গান গাওয়ার পরের মুহূর্তে কেউ এরকম ভাবে চেঁচাতে পারে। আমি কেন তোকে জড়িয়ে ধরলাম তুই বুঝতে পারিসনি।”
—”না! আর এইটা যদি মজা হয় আমার মজা করার কোন মানসিকতা নেই। মায়ের শরীর অসম্ভব খারাপ দুদিনের মধ্যে সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট আসবে।”

—”তোর কি মনে হয় আমিও তোর সাথে মজা করছি? তুই কি কিছুই বুঝতে পারিস না নাকি? বুঝেও সবসময় না বোঝার ভান করে কেন থাকিস? কেন আমি সব সময় তোর এত কাছাকাছি থাকি বুঝিস না? তোকে ভালোবাসি বলেই তো..”
—”শাট আপ পূর্বা! দেখ তোর অনুভূতিকে আমি অপমান করতে চাই না। কিন্তু আমার কাছে তুই জাস্ট বেস্ট ফ্রেন্ড। তুই যেভাবে আমাকে দেখিস আমি ঠিক একইভাবে তো নাও দেখতে পারি। আর সবচেয়ে বড় কথা আমার বাবার অগাধ পয়সা নেই যে আমি কলেজে পড়তে এসে গার্লফ্রেন্ড পটিয়ে বেড়াব। তোর সময় আর পয়সা দুটোই আছে…আর আমি কোনদিনও ফুটানি মারতে ভালোবাসি না।”
—”এসব ছেলে ভুলানো কথা কাকে বলছিস? প্রচেতার জন্য আজ আমায় রিফিউজ করছিস। কী আছে মেয়েটার? ওই তো বস্তি বাড়ির মেয়ে। ওর মা তো ঝি-গিরি করে বেড়ায় সারা পাড়ায়। পাত্তাও তো দেয় না তোকে। আমার সূত্রেই তো আলাপ!”
—”বিষয়টা আমার ব্যক্তিগত। আর তাছাড়া তুই এত ভালো মানুষের সাইকোলজি বুঝতে পারিস! আমি কার পিছনে ঘুরি কাকে ভালোবাসি….”
—”তুই চুপ কর। তোর মত ছেলের যোগ্যতা নেই আমাকে পাবার… হতে পারি অনন্তপুরের মেয়ে। মফস্বল থেকে আসছি কিন্তু বস মফস্বল থেকে চার চাকায় কলকাতায় কলেজে পড়তে আসতে না দম লাগে…আমার বাবির পয়সার সম্বন্ধে তোর কোন ইয়ত্তা নেই।”
—”আমি তো একটা কথা বুঝতে পারছি না আমি যদি ভালোবাসতামও কাকে ভালবাসতাম তোকে না তোর বাবির পয়সাকে?”
—”প্রচেতাকে নিয়ে এত নাচানাচি… জীবনে প্রথম কোনও মেয়ে তোকে ভালোবাসা নিবেদন করতে এল আর তুই তাকে রিফিউজ় করে দিলি! তোর মত ছেলেরা না এইজন্যই কাউকেই পায় না। আমাকেও হারিয়ে ফেললি আজ, যাকে নিয়ে এত নাচছিস সেও হারাবে কিছুদিনের মধ্যে। এমনকি তোর মাও…”
অন্তিক পূর্বাশাকে সজোরে দুটো থাপ্পড় মারল। রাগে ঘৃণায় ওর চোখ লাল হয়ে গেছে। নিজেকে আর সামলানো গেল না রাগে কান্নায় ফুঁপিয়ে অন্তিক বলল, “মায়ের সম্বন্ধে তুই যদি আর কিছু বলেছিস আই উইল কিল ইউ রাইট হিয়ার।”
অপমানে জ্বলতে থাকা পূর্বাশার শেষ কথা যেন বারুদের মতো জ্বলে উঠল, “তুই যতই চেষ্টা করিস না কেন প্রচেতাকে কোনদিনও পাবি না ওর বিয়ের পাকা দেখাই তো হয়ে গেছে। সামনের ফেব্রুয়ারিতে ওর বিয়ে।”
(ক্রমশ)