Recent Post

মিলনরেখা(২য় পর্ব): অর্ণব মিত্র

মিলনরেখা(২য় পর্ব): অর্ণব মিত্র

(আগের পর্বটি পড়ুন)

[]তিন[]

“তুমি এইটার জন্য এতক্ষণ ধরে হেজ়িটেশন করছিলে। আরে এত সোজা নিউমেরিক্স। মাঝেসাঝে কলেজের পর এরকম লাইব্রেরীতে বসে প্রবলেমগুলো সলভ করাই যায় বলো?”

প্রচেতা এক মন দিয়ে অন্তিকের কথাগুলো শুনছিল। কখন যে ও থেমে গেছে বুঝতে পারেনি।

—”আসলে কী জানো তো কখনো কখনো সোজা জিনিস খুব কঠিন মনে হয়। মানুষের কাছে কত সহজ রাস্তা থাকে তাও মানুষ সেই জটিল পথেই হারিয়ে যায়।”

—”ইঞ্জিনিয়ারিং এর মেয়েরা যে দার্শনিক হয় তা তো জানতাম না!”

—”এই মহাজীবন সবাইকেই কমবেশি দার্শনিক করে দেয়।”

—”তোমায় না একটা কথা বলার আছে… বলছি যে আর তো কয়েক মাস পরই ফাইনাল সেমিস্টার। আর তারপর কেউ চাকরি করবে, কেউ ইউনিভার্সিটিতে যাবে, কারো সাথে কারো যোগাযোগ থাকবে না। প্রতিবছরই আমাদের কলেজের ফেয়ারওয়েল হয়…এ বছরও হবে, তুমিতো খুব একটা কিছুতে পার্টিসিপেট করো না ফেয়ারওয়েলে অন্তত করো…”

—” ইবাবা! খেপেছো নাকি তুমি! আমি ওসব পারি না। কী করবটা কী আমি?”

—”এই বাজে কথা বলো না! তুমি যথেষ্ট ভালো নাচ করো।”

—” তাই? তা তুমি কী করে জানলে?”

—”কেন তোমার প্রাণের বন্ধু পূর্বাশার কাছ থেকে। ওই তো বলেছে তুমি কত ভালো নাচ করতে।”

—” হ্যাঁ জানি ওই তো বলবে। ওর সাথে তো তোমার গলায় গলায় ভাব। নাচ করতাম আমি ঠিকই কিন্তু বহু বছর ছেড়ে দিয়েছি।”

—” কেন?”

—”জীবন আর আমায় এসব ভাবায় না। না ভালো লাগে করতে সাজগোজ, না কোথাও যেতে ভালো লাগে। আর তুমি এমন একটা মেয়েকে বলছ কলেজে প্রোগ্রামের নাচ করতে! কলেজে সবার না নাক-কান কাটা যাবে।”

প্রচেতা সাধারণত ছেলে নামক প্রজাতির সংস্পর্শ যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলে। কিন্তু অন্তিকের কথাগুলো প্রচেতাকে যেন ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিল। প্রচেতার মত মেয়েকে আবার কারোর ভাল লাগতে পারে নাকি! পৃথিবীতে কত কিছুই না ঘটে।

স্বপ্ন ডুবে গেছে কবে,

আশাবরির সেই সুর বেজে গেছে সবে।

মনের মানুষ খুঁজে পাওয়া কি দুঃসাধ্য বিষয়?

সব মানুষ কি চাইলেই আপন হয়?

আজকে দেখো শত যোজন দূরে তুমি আর আমি..

তবু মনে হয় কতদিনের আমরা শুভাকাঙ্ক্ষী!

                               []চার[]

“মা আমি তো কিছু জানতেই পারলাম না যে আজ আমার পাকা দেখা। এখনও পর্যন্ত আমার ফাইনাল সেমিস্টার পরীক্ষাটাই তো হলো না!”

প্রচেতা বীভৎস চিৎকার করতে করতে কথাগুলো বলছিল।

—” মাম্পু!…অসভ্যের মত চিৎকার করে যাচ্ছে। আমি কি জানি না তোর পরীক্ষা এখনো হয়নি। তোর রেজাল্ট বেরোনোর পরে তোর বিয়ের ডেট। না জেনে শুনে মাকে দোষারোপ করে যাচ্ছিস তখন থেকে।”

—”কেন মা! মেয়েকে বিদায় করার কেন এত তারা?”

—”মায়ের জ্বালা তুই আর কি বুঝবি? এত ভালো ছেলে.. আর তোর এত পড়াশোনার খরচ আমি আর টানতে পারছি না!”

—”মা আমি তোমার কাছে বোঝা?”

—”একদম চুপ ওসব সেন্টিমেন্ট দিয়ে কথা আমায় শোনাবে না। আমি তোমার ভালো বই খারাপ চাইব না।”

—”মা আমার সাথে যার বিয়ে তাকে আমিতো দেখলামই না। যাকে চিনি না জানি না তার সাথে সারাজীবন থাকা যায়?”

—”শোনো আমিও তোমার বাবাকে বিয়ের আগের দিন পর্যন্ত চিনতাম না… এখন যাও সকালের দিকটা একটু পড়ে নাও আর সন্ধ্যাবেলা সময়মতো রেডি হয়ে বসে থাকবে।”

প্রচেতা ওইদিন রাতে অনেকক্ষণ পর্যন্ত নিঃশব্দে কেঁদে গেছিল একা। কারণ ও জানে এই কষ্ট শুধু ওর একার। কিন্তু কার জন্য কাঁদছিল ও বুঝে উঠতে পারেনি।

শেষ কেঁদেছিল প্রচেতা বাবার মরদেহের সামনে। কিন্তু আজ এই চোখের জল কার জন্য? অন্তিক! যার সাথে চার বছরে সেরকম কখনো কথাই হত না। এখন প্রতিদিন রিহার্সালের সৌজন্যে যা একটু হাসাহাসি করে ওরা। অন্তিক যখন গান ধরে প্রচেতার মন কেমন করে ওঠে। পুরো বাবার মত গলা।

ওদের বাড়িওয়ালি খুব ভালো গান গায়। অনেক রাত অবধি গান করে। রবি ঠাকুরের একটা গানের লাইন প্রচেতার খুব মনে ধরল,

“…যে জন দেয় না দেখা, যায় যে দেখে

ভালোবাসে আড়াল থেকে

আমার মন মজেছে সেই গভীরের

গোপন ভালোবাসায়”

অচেনা মানুষ হঠাৎ করে এত পরিচিত হয়ে যায়!

(ক্রমশ)

Author

  • Barun@Mukherjee

    নবতরু ই-পত্রিকার সম্পাদক বরুণ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৮৪ সালে। বীরভূম জেলার নানুর থানার শ্রীকৃষ্ণপুরের গ্রামের বাড়িতেই বড়ো হয়ে ওঠেন। আবাসিক ছাত্র হিসাবে বিদ্যালয় জীবন অতিবাহিত করেন বিশ্বভারতীর পাঠভবন ও উত্তর শিক্ষা সদনে। বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ বরুণ মুখোপাধ্যায় বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত আছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি ভালোবাসেন লেখালেখি করতে। এছাড়াও সাংস্কৃতিক চর্চা ও সৃজনশীল কাজকর্মের মধ্যে নিজেকে সর্বদা যুক্ত রাখেন। নতুন ছেলেমেয়েদের মধ্যে সাহিত্য সৃষ্টির উন্মেষ ঘটানোর জন্যই দায়িত্ব নিয়েছেন নবতরু ই-পত্রিকা সম্পাদনার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আয়নাবন্দি: জিৎ সরকার (১/১২ পর্ব)
গদ্য- সাহিত্য গল্প ধারাবাহিক গল্প

আয়নাবন্দি: জিৎ সরকার

    গাড়িটা যখন বড়ো গেটের সামনে এসে দাঁড়াল তখন শেষ বিকেলের সূর্য পশ্চিমাকাশে রক্তাভা ছড়িয়ে সেদিনকার মতো সন্ধ্যেকে আলিঙ্গন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

    বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
    অসুর মর্দন(একাদশ পর্ব): জিৎ সরকার
    গদ্য- সাহিত্য গল্প ধারাবাহিক গল্প

    অসুর মর্দন(একাদশ পর্ব): জিৎ সরকার

      ভিড়টা মোড়ের বাঁকে অদৃশ্য হতেই শ্রী ঘরের দিকে ফিরতে উদ্যত হল, হঠাৎ নীচের দরজায় আওয়াজ উঠল। বাধ্য হয়েই অভিমুখে বদলে শ্রী নীচে এসে দরজা খুলল। দেখল ঋজু দাঁড়িয়ে, মুখে একটা হাসি খেলছে। এই হাসিটা একদিন ফিরে এসে শ্রী কিন্তু লক্ষ্য করেনি

      বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
      ধারাবাহিক গল্প

      অসুর মর্দন(১০ম পর্ব): জিৎ সরকার

        এতক্ষণে তমাল মুখের কঠিন রেখাগুলো অনেকটা সহজ হয়ে এসেছে, সে মৃদু হেসে বলে, “দ্যাখ পারব কি পারব না সেটা তো এখনি বলা যাচ্ছে না, তবে হ্যাঁ, একটা চেষ্টা করে দেখাই যাক, পরেরটা না-হয় পরেই বুঝে‌ নেব।

        বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন