Recent Post

মানসী: তুলি মুখোপাধ্যায় চক্রবর্তী

 —এত ছবি আঁকিস বাবু, ইকবার আমার একটা ছবি করিস 

—তোর ছবি!

— হঁ বাবু, যে শরীর তুকে শান্তির ঘুম দেয়, একটা ছবি থাকবেনি তার! কুতোওও ছবি তুর আঁকা, বিকোয় দেশ বিদেশ, একটা লয় ইখানেই থাইকবে, মাটির ঘরে

ভেষজ রং  আর প্রকৃতির সন্ধানে ঘুরতে ঘুরতে বাউণ্ডুলে চিত্রকর শোভন পৌঁছে গেছিল আদিবাসী অধ্যুষিত এক অখ্যাত গ্রামে। না, এ গ্রাম তাকে নিরাশ করেনি। রং  রূপ সৌন্দর্য দু-হাত ভরে দিয়েছে। সেই রূপের সুরায় চুমুক দিয়ে তার শিল্পী স্বত্তা এঁকে গেছে একের পর এক ছবি। তুলিতে জীবন্ত হয়ে প্রকৃতি শহরের প্রদর্শনশালায়। সমঝদার মানুষের বসার, শোবার ঘরে সসম্মানে শোভিত। 

কিন্তু শোভনের মনে কিছুদিন ধরে কাঁটার মতো বিঁধে আছে আদিবাসী রমণী বিন্দির কথাগুলো। যার শরীরের আবেদনে সাড়া দিয়ে আর ফেরা হয়নি তার গুরুর আশ্রমে। 

আজ তাই গাছ, ফুল, মাছ, হরিণের সঙ্গে মিলিয়ে সে এঁকেছে বিন্দিকে, তার শকুন্তলাকে, যার নগ্ন শরীরের উদ্দাম উন্মাদনায় বিভোর থেকেছে সে দুষ্মন্তের মতো, আজ তুলিতে রং লাগিয়ে ঢেকে দিচ্ছে তাকে জাফরানী আবরণে। নিরাবরণ শরীর লজ্জাবস্ত্রে আবৃত। দেড় বছরের শিশুকন্যাকে পিঠে আঁচল বেঁধে নিয়ে জল আনতে যেত যখন বিন্দি, পাতলা ছেঁড়া শাড়ি ভেদ করে তার শরীরের প্রতিটি উন্মুক্ত ভাঁজ তার চোখের সামনে, কি ভয়ংকর আকর্ষণ! 

আজ পাকা শিল্পীর তুলি প্রকৃত শিল্প করে সাজিয়ে তুলল ভালোবাসার দেহমন্দিরকে, এ ছবি তার প্রেয়সী মানসীর, তার কাছেই থাকবে চিরকাল। প্রতিদিন বাঁচার আনন্দ যাকে ঘিরে। 

বিন্দি আনন্দে টলমল….

Author

  • তুলি মুখোপাধ্যায় চক্রবর্তী:

    লেখিকা তুলি মুখোপাধ্যায় চক্রবর্তী ১৯৭০ সালে খড়্গপুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বাণিজ্য বিভাগে স্নাতক উত্তীর্ণ লেখিকা সাংসারিক কাজের ফাঁকেই লেখালেখির চর্চা করে যান। তাঁর ভালোলাগার বিষয়—বই পড়া, গল্প করা আর বেড়ানো। তাঁর লেখার অভ্যাস স্কুল জীবন থেকেই শুরু হয়। গল্প, কবিতা লিখতে ভালো লাগে তাঁর। বহু পত্রিকাতে লেখা প্রকাশিত হয়ে চলেছে নিয়মিতভাবে। ২০১৮ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় এমনই এক লেখা। সেই ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। তাঁর নিজস্ব সংকলন প্রকাশ পায় ২০১৯ সালে। এই সংকলনটি রাজভবন থেকে স্বয়ং রাজ্যপালের দ্বারা উন্মোচিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Nabataru-e-Patrika-2023-9.jpg
ছোটো গল্প

কলার বাকল: রানা জামান

    জাবের ও নাভেদ বের হয়েছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ভ্রমণে। ওরা চলে গেল নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুর উপজেলায়। সাদা সিমেণ্ট দেখবে। বাংলাদেশের আরেক মূল্যবান খনিজ; চিনামাটির তৈজসপত্র তৈরি করা হয়। পাহাড়ি এলাকায় ঘুরাঘুরি করতে ওদের বেশ লাগছে। ছোট ছোট পাহাড়ে উঠে ছবি তুলছে দেদার, সেল্ফিও নিচ্ছে। সকাল এগারোটা বাজছে। খিদে খিদে ভাব অনুভব করছে পেটে। চা পানের […]

    বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
    ছোটো গল্প

    বোকার চালাকি: সৌমেন দেবনাথ

      দেখতে যেমন বোকা বোকা, কথাবার্তায়ও তেমন বোকা বোকা। কাজে-কর্মের ধরণ-ধারণেও বোকামি বোকামি ভাব। চলন-বলনেও বোকা বোকা দেখতে লাগা মানুষটার নাম আক্কাস। সহজ-সরল আর আলাভোলা এই লোকটাকে নিয়ে আমরা যথেষ্ট  মজা-মশকরা করি। যখন মন চায় তখনই তাকে ডেকে নিয়ে যেদিক সেদিক চলে যাই।

      বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
      ছোটো গল্প

      সাপ-ওঝা: তুলি মুখোপাধ্যায় চক্রবর্তী

        পাড়ায় ছোটখাটো মাস্তানি করতে করতে ক্লাব সেক্রেটারি। পার্টির নেতাদের নেকনজরে কাউন্সিলর থেকে এমএলএ। মৌরুসীপাট্টার দোপাট্টা গলায় বারো পাশ শ্রীমান রতন সমাদ্দার

        বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন