Recent Post

ভারতে করোনাভাইরাস অতিমারি সংক্রমণের আর্থ-সামাজিক প্রভাব―একটি মূল্যায়ন(৩য় পর্ব): ড: সমীরণ মন্ডল

ভারতে করোনাভাইরাস অতিমারি সংক্রমণের আর্থ-সামাজিক প্রভাব―একটি মূল্যায়ন(৩য় পর্ব):   ড: সমীরণ মন্ডল

(২য় পর্বটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন)

ভারতীয় সামাজিক ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ এর প্রভাব (Social Impact)

■লিঙ্গ ব্যবধান ও বৈষম্য (Gender Gap and Inequality)

কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে বিশ্বব্যাপী পুরুষদের তুলনায় নারীরা বেশি পরিমাণে তাদের চাকরি হারিয়েছেন। উচ্চতর ও উন্নত ডিগ্রিধারী শ্রমিকদের তুলনায় স্বল্প দক্ষ ও প্রাথমিক শিক্ষিত শ্রমিকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যার ফলে পরবর্তী সময়ে থেকে যাচ্ছে আয়ের বৈষম্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা।

■স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সঙ্কট―গ্রামীণ/শহর (Health sector crisis-Rural/Urban)

উপযুক্ত পরীক্ষা নিরীক্ষার অভাব, চিকিৎসকের অভাব, স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সরঞ্জাম-এর অভাব, হাসপাতালে শয্যার ঘাটতি হল কোভিড -১৯ মোকাবিলায় ভারতের জন্য একটি ভয়ঙ্কর সমস্যা। করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই সেটা পরিষ্কার ভাবে ধরা পড়েছে। ভারতের জাতীয় স্বাস্থ্য প্রোফাইল ২০১৯ অনুসারে, স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে ভারতের ব্যয় জিডিপির ১.২৮% যা খুবই নগন্য ও সেটি বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলির তুলনায় কম। করোনাভাইরাস অতিমারি প্রথমে মূলত শহর অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ ছিল, বর্তমানে গ্রামীণ অঞ্চলেও তা সংক্রমিত হয়েছে এবং যেখানে ৭০% মানুষ গ্রামাঞ্চলে বসবাস করেন সেখানে ঝুঁকি সবথেকে বেশি। ভারতের স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্র এখন অনেকটা উন্নত হলেও গ্রামীণ ও শহর অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। গ্রামীণ অঞ্চলে পরিকাঠামোগত অভাবের কারণে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে থাকা স্বাস্থ্য পরিষেবা কোভিড-১৯ অতিমারি আটকানোর জন্য যথেষ্ট নয়।   

■ঘরোয়া হিংসা ও অপরাধ (Domestic violence and crime)

NCW (National Commission for Women)-এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লকডাউন ঘোষণার ২৫ দিনের মধ্যে, মহিলাদের উপর হিংস্রতার ঘটনা ৪৫% বৃদ্ধি পেয়েছে; যার মধ্যে উত্তর-প্রদেশ, বিহার, হরিয়ানা এবং পাঞ্জাব উল্লেখযোগ্য। তবে প্রকৃত পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হতে পারে কারণ গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ মহিলা বিশেষত মামলা দায়ের করেন না এবং পরিবারকে ভয় পান। লকডাউনের পর থেকে একটি সুসংবাদ রয়েছে যে ভারতে এবং বিশ্বব্যাপীও অপরাধের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। তবে এটাও সত্যি কোনও সংকট এবং অতিমারির পরে যে ক্ষুধা, দারিদ্র্য এবং বৈষম্যের সৃষ্টি হল যা পরোক্ষভাবে অপরাধের হার বাড়াতে পারে।

■বিপরীতমুখী স্থানান্তর (Reverse Migration)

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরে এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম গণ-স্থানান্তর। আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলা যায় এটি হ’ল বিপরীতমুখী স্থানান্তর। ২০১১-এর আদমসুমারি অনুযায়ী দিল্লি ও মহারাষ্ট্রে সবথেকে বেশি শ্রমিক অন্যান্য রাজ্য যেমন উত্তর প্রদেশ, বিহার, রাজস্থান, উড়িষ্যা, অসম, পাঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ, মধ্যপ্রদেশ থেকে এসে বিভিন্ন কাজে যুক্ত হন। কোভিড-১৯ এর কারণে সীমিত কর্মসংস্থান, ভবিষ্যতের সঙ্কট, আর্থিক সংকট, স্বাস্থ্য সঙ্কট ইত্যাদির অনিশ্চয়তার কারণে শ্রমিকরা পুনরায় নিজের বাড়িমুখী হতে শুরু করেন। এই শ্রমিকের সংখ্যা এতোই বেশি ছিল যে সরকার ও সঠিকভাবে তাদের জন্য ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়। গ্রামীণ অর্থনীতিতে এটি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে বাধ্য, যার ফলে কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চাপ বাড়বে এবং আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে ফেলবে। সরকার যদিও বিভিন্ন প্রকল্পের ঘোষণা করছে ও সহায়তা করছে কিন্তু সিস্টেমে গণ-দুর্নীতি পরিকল্পনা কার্যকর করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

■দারিদ্র্য, কর্মহীনতা এবং বিবিধ ক্ষেত্র (Proverty, Unemployment or Job Losses and Unorganized sector)

বিশ্বব্যাঙ্ক-এর (২০১৬) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি পঞ্চম ভারতীয় দরিদ্র, প্রায় ৮০% জনসংখ্যা গ্রামীণ অঞ্চলে বসবাস করেন। অতিমারির প্রত্যক্ষ পরিণতি হিসাবে বিশ্বজুড়ে কমপক্ষে ৪৯ মিলিয়ন(১ মিলিয়ন=১০ লক্ষ) মানুষ “চরম দারিদ্র্যে” এবং বিশ্বব্যাঙ্ক-এর মতে, ভারতে প্রায় ১২ মিলিয়ন নাগরিক চরম দারিদ্র্যের মধ্যে পড়বে বলে অনুমান করা হচ্ছে। সিএমআইই (CMIE; Centre for Monitoring Indian Economy)-এর মতে ভারতে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে ভারতে ১২২ মিলিয়নেরও বেশি লোক তাদের চাকরি হারিয়েছেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছোট ব্যবসা বা শিল্পের সাথে যুক্ত এবং মজুরি-শ্রমিক ছিলেন। কৃষি ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে স্বনিযুক্ত ছিলেন তাদেরও অনেকের উপার্জন হ্রাস পেয়েছে। ভারতে অসংগঠিত ক্ষেত্রগুলিতে কর্মরত শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা তুলনামূলক কম এবং তাদের কাজের ক্ষেত্রে অনেক অনিশ্চয়তা রয়েছে। কর্মীরা ইতিমধ্যে স্বল্প মজুরি এবং উপার্জন হ্রাসের কারণে প্রত্যক্ষ ও কঠোরভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। প্রায় ৪০ থেকে ৫০ মিলিয়ন কর্মী কর্মসংস্থান, উপার্জন, আশ্রয়হীনতার কারণে পুনরায় স্বদেশে ফিরে গিয়েছেন।

■শারীরবৃত্তীয় প্রভাব-মানসিক অসুস্থতা (Psychological and Mental Impact)

স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সঙ্কট ছাড়াও করোনাভাইরাস অতিমারির দ্বারা আক্রান্ত প্রতিটি দেশের পক্ষে এটিই প্রধান চ্যালেঞ্জ। লকডাউন, ব্যাপক বেকারত্ব, বিভিন্ন ব্যবসার পতন, আয় হ্রাস, ক্রমবর্ধমান অসমতা ও দারিদ্র্য, মৃত্যু, কম গতিশীলতা ইত্যাদির কারণে মানুষের মানসিক অবস্থার উপর একটি বিশাল প্রভাব রয়েছে। বয়স্ক থেকে কম বয়সী, ধনী থেকে গরিব সবাই আক্রান্ত, এই প্রকোপটি বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ, মানসিক চাপ, হতাশা, ক্রোধ, ভয়, এবং আরও অনেক সমস্যা তৈরি করেছে। ভারতে প্রতি বছর কৃষকদের আত্মহত্যার প্রায় ১৬,৫০০ টি ঘটনা তাদের দারিদ্র ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার কারণে হয়ে থাকে এবং এই করোনাভাইরাস অতিমারি ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ হিসাবে এ-জাতীয় ঘটনাগুলি আরও বাড়াতে পারে। সাম্প্রতিক মনোবিজ্ঞানের কিছু গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে এই জাতীয় অতিমারি মানসিক সমস্যা বৃদ্ধি করে যেমন PTSD (Post-Traumatic Stress Disorder), বিভ্রান্তি, নিঃসঙ্গতা অনুভূতি।

বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে যেমন আরও মানসিক চাপ ও পীড়ন রয়েছে তেমনি যুবসমাজকেও বেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। স্কুল-কলেজগুলি এখনও বন্ধ রয়েছে এবং পড়াশোনার ক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটেছে, যারা পড়াশোনায় দুর্বল এবং অনলাইনে অধ্যয়ন করার জন্য ইন্টারনেটের সঙ্গে পরিচিত নন (যেমন কিছু গ্রামাঞ্চলে এবং যেখানে মেয়েদের ফোন এবং ইন্টারনেট সংযোগের অনুমতি নেই) তারা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিশেষত প্রাথমিক শিক্ষাসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি অনেকদিন বন্ধ থাকার কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা বিশেষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রথাগত শিক্ষা-ব্যবস্থায় ছেদ, কারিগরি ও ব্যবহারিক শিক্ষা ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতে কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা। যারা নতুন কর্ম ও কর্মস্থানে প্রবেশ করতে চলেছেন তাদের ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তাদের চাহিদার পরিবর্তনের কারণে এবং কম শূন্যপদ থাকার কারণে কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এই সমস্ত কারণগুলি পরোক্ষভাবে মানসিক চাপের দিকে পরিচালিত করে এবং কিছু ক্ষেত্রে যারা ইতিমধ্যে কিছু মানসিক অসুস্থতায় ভুগছেন, এই অতিমারির পরিণতি তাদের ক্ষেত্রে কঠোর হতে পারে।

পরিবেশের উপর ইতিবাচক প্রভাব (Positive Impact on Environment)

সামাজিক-অর্থনৈতিক ও জনগণের উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব থাকলেও কোভিড-১৯ এর কিছুক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। এর মধ্যে একটি হ’ল গঙ্গা নদী দূষণ। ভারতে কোভিড-১৯-এর কারণে লকডাউনের ফলে নদীর দূষণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে যা দুটি বড় পরিকল্পনা, গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান (১৯৮৬) এবং নামামি গঙ্গে (২০১৪) কয়েকশো কোটি বিনিয়োগও করতে পারেনি। কম যানজটের কারণে বায়ু মানের, জলের গুণমান, বন্যজীবন এবং গাছপালার উপর ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। লকডাউনের এবং সীমাবদ্ধ ব্যবসায়িক ক্রিয়াকলাপ-এর কারণে দূষণের মাত্রা অনেকাংশে কমেছে।

কোভিড-১৯ অতিমারি বিশ্বব্যাপী অভূতপূর্ব ক্ষতিসাধন করেছে এবং ভারত একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হওয়ায় প্রতিটি ক্ষেত্রে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সামগ্রিকভাবে কৃষিক্ষেত্র তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যদিও উদ্যান ও পোল্ট্রি ক্ষেত্রও অনেকটাই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। উৎপাদন ক্ষেত্র বিশেষত অটোমোবাইল ক্ষেত্র এবং এমএসএমই (MSME) গুলি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং বিশ্বব্যাপী সাপ্লাই-চেন ব্যাহত হওয়ার কারণে এই ক্ষেত্রটি খুবই প্রভাবিত হচ্ছে।

অর্থনৈতিক বৃদ্ধির মূল চালক এবং জিডিপিতে সবচেয়ে বড় অবদানকারী পরিষেবা ক্ষেত্র লকডাউনের ফলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদিও অর্থনীতি এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সামগ্রিক ক্ষতি সঙ্কটের তীব্রতা কতদিন স্থায়ী থাকবে তার উপর নির্ভর করে। এই করোনাভাইরাস অতিমারি এক অভূতপূর্ব সংকটের মধ্যে, আর্থিক ক্ষতিগুলি ছাড়াও, সামাজিক ভাবেও বড় রকমের প্রভাব ফেলেছে। আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি বর্তমান দারিদ্র্য এবং বৈষম্য বাড়াতে পারে ও মানসিক অসুস্থতা তৈরি করতে পারে। যদিও কিছু ইতিবাচক প্রভাবের মধ্যে বায়ুর গুণমান, জলের গুণমান, বন্যজীবন উল্লেখযোগ্য। সরকার এবং ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কর্তৃক বিভিন্ন আর্থিক ও মুদ্রানীতি গ্রহণ করা হয়েছে, তবে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা মনে করেন যে জিডিপি এবং রাজস্ব ঘাটতির কথা না-ভেবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারকে জনসাধারণের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য পরিষেবায় আরও বেশি ব্যয় করতে হবে যাতে অর্থনৈতিক সমতা বজায় থাকে ও দরিদ্র মানুষের উপকার হয়। প্রকৃতপক্ষে, সমাজের দুর্বল শ্রেণি বিশেষত দরিদ্র মানুষ, এমএসএমই(MSME) ক্ষেত্রে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া দরকার যারা এই অতিমারির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। সর্বোপরি, একটি স্থায়ী অর্থনৈতিক সাম্যাবস্থা ও দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক সমতা রক্ষা করতে হবে।    

Author

  • ড. সমীরণ মণ্ডল

    একাধারে গবেষক ও অন্যদিকে লেখক ড. সমীরণ মণ্ডল ১৯৮৫ সালে পূর্ব বর্ধমান জেলার গুসকরা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বিদ্যালয় জীবন শুরু হয় গুসকরা বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এরপর গুসকরা পি পি ইনস্টিটিউশন থেকে মাধ্যমিক ও বিশ্বভারতীর উত্তর শিক্ষা সদন থেকে উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিশ্বভারতীর শিক্ষাভবন থেকে রসায়নে স্নাতক ও পরে স্নাতকোত্তর এবং গবেষণার কাজ সম্পূর্ণ করেন। পরবর্তীতে জাপানের কিয়োটো ইউনিভার্সিটি থেকে পোস্ট-ডক্টরাল ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি কলকাতার রামমোহন কলেজে রসায়ন বিভাগে অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত আছেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি তাঁর শখ নতুন জায়গায় বেড়াতে যাওয়া এবং বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে পরিচয় করা। প্রাথমিকভাবে একজন গবেষক হিসেবে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জার্নাল থেকে তাঁর বিভিন্ন গবেষণামূলক প্রবন্ধ, ন্যানো-কেমিস্ট্রি, রাসায়নিক জীববিজ্ঞান এবং ইমিউনোলজি প্রভৃতি ক্ষেত্রে নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর কথায়, "এটাই আমার ক্ষেত্রে এক সাধনা।" এর মধ্যে বিভিন্ন জার্নাল-এর সমালোচক হিসেবেও বিশেষ পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। তাঁর অদম্য ইচ্ছে হলো বাংলা ভাষাতে যে যুগান্তকারী গবেষণা ও আবিষ্কারগুলি প্রতিনিয়ত হয়ে চলেছে সেই কাজগুলি সহজ সরল ভাষায় সবার সামনে তুলে ধরা এবং সে সম্বন্ধে সকলের মধ্যে একটা সম্যক ধারণা তৈরি করা। সেই লক্ষেই লিখতে শুরু করেছেন তিনি। তথাকথিত ভাবে তাঁর প্রথম বাংলায় প্রকাশিত লেখা 'কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান' পত্রিকাতে ক্যান্সার ইমিউন-থেরাপি নিয়ে। এই প্রথিতযশা গবেষক বিজ্ঞানী লেখক ড. মণ্ডল বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান বিষয়ে কলম ধরেছেন নবতরু ই-পত্রিকাতে। অতিমারি পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাস বিষয়ক লেখাটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে এই পত্রিকাতে। বিভিন্ন সম্মানপ্রাপ্তির মধ্যে ২০১৭ সাল থেকে ইন্ডিয়ান কেমিক্যাল সোসাইটির (আইসিএস) ফেলো নির্বাচিত হওয়া এবং কারেন্ট ন্যানোম্যাটরিয়ালস এবং ন্যানোসায়েন্স এবং ন্যানো টেকনোলজি-এশিয়া জার্নালের সম্পাদকীয় বোর্ডের সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করা তো আছেই। ২০১৪ সালে জেফ্রি মডেল ফাউন্ডেশন সেরা অ্যাবস্ট্রাক্ট অ্যাওয়ার্ড (নোবেল ফোরাম, স্টকহোম), ২০২০ সালে ইন্ডিয়ান সোসাইটি রিসার্চ এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০১৬ ও ২০১৮ সালে আউটস্ট্যান্ডিং পেপার অ্যাওয়ার্ড (ডিএসটি, পশ্চিমবঙ্গ সরকার) প্রাপ্তি তাঁর কর্মজীবনের ক্ষেত্রে আলাদা পালক যোগ করেছে। ২০১৩ সালে ইয়ং সায়েন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড হিসেবে লিন্ডাউ নোবেল বিজয়ী সভা, জার্মানিতে অংশগ্রহণ যা সত্যিকারে জীবন্ত ৩৬ জন রসায়ন শাস্ত্রে নোবেল জয়ীকে একসাথে এক টেবিলে দেখার সুযোগ করে দেয়, যা তাঁর জীবনে এক অনন্য অভিজ্ঞতা। এছাড়া ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক এইচএফএসপি-পোস্টডক্টোরাল ফেলোশিপ এবং কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়-এ নোবেল পুরস্কার জয়ী বিজ্ঞানী প্রফেসর তাসুকু হনজো-এর সাথে কাজ করার সুযোগ শুধুমাত্র কর্মজীবনের জন্যই নয় তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে একটি আলাদা মাত্রা প্রদান করেছে যা তাঁর চিরস্মরণীয় অভিজ্ঞতার মধ্যে অন্যতম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

গ্রাম্য বধূ: তৃষিতা ঘটক
বিবিধ কচিপাতা ছবি / ফটোগ্রাফি

গ্রাম্য বধূ: তৃষিতা ঘটক

    গ্রাম্য বধূ: তৃষিতা ঘটক(পঞ্চম শ্রেণি); শ্রীখণ্ড ঊষাঙ্গিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়; পূর্ব বর্ধমান

    বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
    বিজ্ঞানভিত্তিক রচনা

    হৃদরোগ প্রতিরোধে আমলকির ভূমিকা: শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়

      হৃদসংবহন তন্ত্র, মস্তিষ্ক, বৃক্ক ও প্রান্তিক ধমনী সম্পর্কিত, রোগকে হৃদরোগ বলে। হৃদরোগের অনেক কারণ থাকতে পারে, তবে উচ্চ রক্তচাপ ও অ্যাথেরোসক্লোরোসিস প্রধান। পাশাপাশি, বয়সের সাথে সাথে হৃৎপিণ্ডের গঠনগত ও শারীরবৃত্তিক পরিবর্তন হৃদরোগের জন্য অনেকাংশে দায়ী,

      বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
      বিজ্ঞানভিত্তিক রচনা

      ক্যানসার সৃষ্টিতে রেট্রোভাইরাস এর ভূমিকা: শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়

        এই কোষবিভাজন তখন অনিয়ন্ত্রিত ভাবে হতে থাকে তখন আমাদের শরীরের স্থানে স্থানে টিউমারের সৃষ্টি হয়। এই টিউমার বিনাইন বা ম্যালিগন্যান্ট হতে পারে। ম্যালিগন্যান্ট টিউমারকেই ক্যানসার বলে। 

        বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন