Recent Post

ভারতে করোনাভাইরাস অতিমারী সংক্রমণের আর্থ-সামাজিক প্রভাব―একটি মূল্যায়ন(২য় পর্ব): ড: সমীরণ মন্ডল

ভারতে করোনাভাইরাস অতিমারী সংক্রমণের আর্থ-সামাজিক প্রভাব―একটি মূল্যায়ন(২য় পর্ব): ড: সমীরণ মন্ডল

(প্রথম পর্বটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন)

সেকেন্ডারি সেক্টর (Secondary Sector)

★উৎপাদন ক্ষেত্র (Manufacturing Sector)

উৎপাদন ক্ষেত্র দেশের জিডিপি (GDP; Gross Domestic Product) এবং কর্মসংস্থানের প্রধান অবদানকারী যা দেশের সার্বিক সম্পদের স্পন্দনশীল বৃদ্ধির প্রধান একটি নিয়ন্ত্রক বলা যেতে পারে। উৎপাদন ক্ষেত্র যেভাবে অন্যান্য ক্ষেত্রের সাথে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ স্থাপন করে সেক্ষেত্রে উৎপাদন ক্ষেত্রের উপর যে কোনও প্রভাব অন্যান্য ক্ষেত্রকেও প্রভাবিত করে। অতিমারীর প্রভাবে সামগ্রিকভাবে, চাহিদা-সরবরাহ ব্যাহত এবং বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলের ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার কারণে উৎপাদন ক্ষেত্রে এক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। উৎপাদন ক্ষেত্রে ৫০% অবদানকারী অটোমোবাইল ক্ষেত্র, গ্রাহকের কম চাহিদা, অপ্রতুল আমানত-এর সুবিধা এবং এনবিএফসি (NBFC; Non-Banking Financial Company) সঙ্কটের কারণে আগেই সমস্যার মধ্যে ছিল। কোভিড-১৯ এর কারণে ভারতে অটোমোবাইল ক্ষেত্রে চাহিদা-সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার কারণে আরও সমস্যার মধ্যে পড়ে। সিয়াম (SIAM; Society of Indian Automobile Manufacturers) দ্বারা করা কোভিড-১৯-এর প্রভাব সম্পর্কিত সর্বশেষ সমীক্ষা অনুসারে, অটোমোবাইল ক্ষেত্রের বিভিন্ন বিভাগে বৃদ্ধি ২২% থেকে ৩৫% হ্রাস পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। কয়েক দশক ধরেই, চীন বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোট উৎপাদনের এক তৃতীয়াংশের বেশি উৎপাদন ও রপ্তানির কেন্দ্রস্থল। তবে কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের পরে অনেক দেশ চীন থেকে মুখ ঘুরিয়ে চীনের মতো কোনো দেশ সন্ধান করতে চাইছে সেক্ষেত্রে ভারতের পক্ষে “মেড ইন ইন্ডিয়া (Made in India)” বিশ্বব্যাপী করার এক সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। যদি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, ভারত-এর চীনকে ছাড়িয়ে নতুন উৎপাদন কেন্দ্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। স্বল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলি (MSME; Micro, Small & Medium Enterprises) ভারতে উৎপাদন ব্যবস্থার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ যা কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রদান করে এবং দেশের রপ্তানিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাম্প্রতিক রিপোর্ট থেকে জানা গেছে MSME ক্ষেত্র ভারতের জিডিপিতে ৩০% এবং শিল্পক্ষেত্রে শ্রমিকদের কর্মসংস্থানে ৫০% অবদান রাখে। তবে এই ক্ষেত্রটিতেও পর্যাপ্ত, সময়োপযোগী, এবং সাশ্রয়ী মূল্যের প্রাতিষ্ঠানিক আমানতের অব্যবস্থার কারণে সমস্যায়  রয়েছে। তার উপর এই অতিমারী জনিত কারণে সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে যেখানে নগদ মূল্য প্রবাহ হ্রাস, সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত, শ্রমিক স্থানান্তরের কারণে শ্রমিকের ঘাটতি, চাহিদা কম হওয়ায় কারণে এই ক্ষেত্রটি খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। চীনের মতো ভারতেরও বড় সংস্থাগুলির তুলনায় ছোট সংস্থাগুলি আরও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। MSME গুলি একবার বন্ধ হয়ে গেলে তাদের পুনরায় শুরু করা খুব সহজ নয়। জি-২০ সামিট (G-20 Summit)-এ ভারতের শেরপা বলেছেন যে ছোট শিল্পগুলি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এবং হঠাৎ এই ধরনের বাধা মোকাবেলায় তাদের অক্ষমতার কারণে তাদের আর্থিক সহায়তা ব্যতীত বেঁচে থাকা কঠিন।

সার্ভিস সেক্টর (Service Sector)

★অর্থনৈতিক বাজার এবং সংযুক্ত প্রতিষ্ঠান (Financial Market and Allied Institutions)

সংকট সময়ে অর্থনৈতিক বাজারের উপর কি পরিমাণে প্রভাব ফেলবে তা নির্ভর করে সঙ্কটের তীব্রতা ও তা কতদিন স্থায়ী থাকবে, আর্থিক ও আর্থিক নীতি বাস্তবায়নের কার্যকারিতা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক-এর উপর। ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে সরাসরি তেমন কোনও প্রভাব নেই, তবে ব্যাঙ্কগুলি জনসাধারণের সাথে যুক্ত হওয়ায় অতিমারী দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ অন্যান্য বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রের মতোই পরোক্ষ প্রভাব পড়তে পারে। সংকট সময়ে ব্যাংকগুলি সাহায্যের প্রধান উৎস, তাই অন্য সমস্ত ক্ষেত্রও যখন খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন ব্যাঙ্কগুলিও ভোগান্তির মুখোমুখি হবে। আর্থিক ক্ষেত্রের ইতিমধ্যে বিদ্যমান সমস্যাগুলি এই চূড়ান্ত সঙ্কটের কারণে বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়। লকডাউন ও বিভিন্ন ব্যবসায়িক ক্রিয়াকলাপ বিপন্ন হওয়ার কারণে শেয়ার বাজারেও তার প্রভাব পড়েছে। পরিষেবা ক্ষেত্রে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যেমন বিমান, পরিবহন, ভ্রমণ এবং পর্যটন কেবল ভারতে নয়, বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এই ক্ষেত্রেও ক্ষতি সঙ্কটের তীব্রতা ও তা কতদিন স্থায়ী থাকবে তার উপর নির্ভরশীল। বিশিষ্ট সংস্থা KPMG-র একটি প্রতিবেদন ইঙ্গিত দেয় যে ভারতের ভ্রমণ, পর্যটন এবং আতিথেয়তা শিল্পে প্রায় ৩৮ মিলিয়ন মানুষ চাকরি হারাবেন।

(ক্রমশ…)

Author

  • ড. সমীরণ মণ্ডল

    একাধারে গবেষক ও অন্যদিকে লেখক ড. সমীরণ মণ্ডল ১৯৮৫ সালে পূর্ব বর্ধমান জেলার গুসকরা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বিদ্যালয় জীবন শুরু হয় গুসকরা বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এরপর গুসকরা পি পি ইনস্টিটিউশন থেকে মাধ্যমিক ও বিশ্বভারতীর উত্তর শিক্ষা সদন থেকে উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিশ্বভারতীর শিক্ষাভবন থেকে রসায়নে স্নাতক ও পরে স্নাতকোত্তর এবং গবেষণার কাজ সম্পূর্ণ করেন। পরবর্তীতে জাপানের কিয়োটো ইউনিভার্সিটি থেকে পোস্ট-ডক্টরাল ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি কলকাতার রামমোহন কলেজে রসায়ন বিভাগে অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত আছেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি তাঁর শখ নতুন জায়গায় বেড়াতে যাওয়া এবং বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে পরিচয় করা। প্রাথমিকভাবে একজন গবেষক হিসেবে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জার্নাল থেকে তাঁর বিভিন্ন গবেষণামূলক প্রবন্ধ, ন্যানো-কেমিস্ট্রি, রাসায়নিক জীববিজ্ঞান এবং ইমিউনোলজি প্রভৃতি ক্ষেত্রে নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর কথায়, "এটাই আমার ক্ষেত্রে এক সাধনা।" এর মধ্যে বিভিন্ন জার্নাল-এর সমালোচক হিসেবেও বিশেষ পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। তাঁর অদম্য ইচ্ছে হলো বাংলা ভাষাতে যে যুগান্তকারী গবেষণা ও আবিষ্কারগুলি প্রতিনিয়ত হয়ে চলেছে সেই কাজগুলি সহজ সরল ভাষায় সবার সামনে তুলে ধরা এবং সে সম্বন্ধে সকলের মধ্যে একটা সম্যক ধারণা তৈরি করা। সেই লক্ষেই লিখতে শুরু করেছেন তিনি। তথাকথিত ভাবে তাঁর প্রথম বাংলায় প্রকাশিত লেখা 'কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান' পত্রিকাতে ক্যান্সার ইমিউন-থেরাপি নিয়ে। এই প্রথিতযশা গবেষক বিজ্ঞানী লেখক ড. মণ্ডল বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান বিষয়ে কলম ধরেছেন নবতরু ই-পত্রিকাতে। অতিমারি পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাস বিষয়ক লেখাটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে এই পত্রিকাতে। বিভিন্ন সম্মানপ্রাপ্তির মধ্যে ২০১৭ সাল থেকে ইন্ডিয়ান কেমিক্যাল সোসাইটির (আইসিএস) ফেলো নির্বাচিত হওয়া এবং কারেন্ট ন্যানোম্যাটরিয়ালস এবং ন্যানোসায়েন্স এবং ন্যানো টেকনোলজি-এশিয়া জার্নালের সম্পাদকীয় বোর্ডের সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করা তো আছেই। ২০১৪ সালে জেফ্রি মডেল ফাউন্ডেশন সেরা অ্যাবস্ট্রাক্ট অ্যাওয়ার্ড (নোবেল ফোরাম, স্টকহোম), ২০২০ সালে ইন্ডিয়ান সোসাইটি রিসার্চ এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০১৬ ও ২০১৮ সালে আউটস্ট্যান্ডিং পেপার অ্যাওয়ার্ড (ডিএসটি, পশ্চিমবঙ্গ সরকার) প্রাপ্তি তাঁর কর্মজীবনের ক্ষেত্রে আলাদা পালক যোগ করেছে। ২০১৩ সালে ইয়ং সায়েন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড হিসেবে লিন্ডাউ নোবেল বিজয়ী সভা, জার্মানিতে অংশগ্রহণ যা সত্যিকারে জীবন্ত ৩৬ জন রসায়ন শাস্ত্রে নোবেল জয়ীকে একসাথে এক টেবিলে দেখার সুযোগ করে দেয়, যা তাঁর জীবনে এক অনন্য অভিজ্ঞতা। এছাড়া ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক এইচএফএসপি-পোস্টডক্টোরাল ফেলোশিপ এবং কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়-এ নোবেল পুরস্কার জয়ী বিজ্ঞানী প্রফেসর তাসুকু হনজো-এর সাথে কাজ করার সুযোগ শুধুমাত্র কর্মজীবনের জন্যই নয় তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে একটি আলাদা মাত্রা প্রদান করেছে যা তাঁর চিরস্মরণীয় অভিজ্ঞতার মধ্যে অন্যতম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞানভিত্তিক রচনা

হৃদরোগ প্রতিরোধে আমলকির ভূমিকা: শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়

    হৃদসংবহন তন্ত্র, মস্তিষ্ক, বৃক্ক ও প্রান্তিক ধমনী সম্পর্কিত, রোগকে হৃদরোগ বলে। হৃদরোগের অনেক কারণ থাকতে পারে, তবে উচ্চ রক্তচাপ ও অ্যাথেরোসক্লোরোসিস প্রধান। পাশাপাশি, বয়সের সাথে সাথে হৃৎপিণ্ডের গঠনগত ও শারীরবৃত্তিক পরিবর্তন হৃদরোগের জন্য অনেকাংশে দায়ী,

    বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
    বিজ্ঞানভিত্তিক রচনা

    ক্যানসার সৃষ্টিতে রেট্রোভাইরাস এর ভূমিকা: শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়

      এই কোষবিভাজন তখন অনিয়ন্ত্রিত ভাবে হতে থাকে তখন আমাদের শরীরের স্থানে স্থানে টিউমারের সৃষ্টি হয়। এই টিউমার বিনাইন বা ম্যালিগন্যান্ট হতে পারে। ম্যালিগন্যান্ট টিউমারকেই ক্যানসার বলে। 

      বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
      বিজ্ঞানভিত্তিক রচনা

      LACTOSE INTOLERANCE: শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়

        Lactose intolerance কী তা জানার আগে আমাদের জানতে হবে Lactose কী? এটি কীভাবে আমাদের পরিপাকনালীতে পরিপাককৃত হয়? এবং এই Lactose এর উৎস কী? প্রথমে আমরা জেনে  নিই Lactose কী?

        বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন