Recent Post

ব্রেকিং নিউজ :সরোজ চট্টোপাধ্যায়

বেসরকারি তথ্য প্রযুক্তি কর্মচারী বছর চল্লিশের শান্তনু ক্লান্ত শরীরটাকে টানতে টানতে যখন শহরতলির এক কামরার ভাড়া বাড়ির তালা খুলে ঘরে ঢুকছে পাশের মিত্র বাড়ির টিভিতে তখন সারা দিনের বিশেষ খবরের আওয়াজ ভেসে আসছে। রাত প্রায় আটটা। হাত ঘড়িটা একবার দেখে নিল শান্তনু। বন্ধু অমিত, বেসরকারি ব্যাংক কর্মচারী, এখনও ঘরে ফেরেনি। দুজনেই এক গ্রাম থেকে পাঁচ বছর আগে কলকাতা শহরে আসে কাজের সন্ধানে। শান্তনু ঘরে ঢুকে বিছানায় ব্যাগটা ছুঁড়ে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে মিত্র বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল—”ও কাকিমা অমিত ফেরেনি?”

—”না তো বাবা, আজ তো এখনও আসেনি। অন্য দিন এসে তো দেখা করে একবার। আজ তো আর এল না! এসো বাবা, ভিতরে এসো। একটু চা খেয়ে যাও।”

—“না কাকিমা আজ আর যাব না। দেখি অমিতটা কোথায় গেল। কাল রবিবার আবার গ্রামে যাবার কথা ছিল। এখনও ঘর ঢুকল না। কোথায় যে যায়?” 

শান্তনু ফিরে যেতে গিয়ে টিভির দিকে ফিরে দেখল। টিভিতে তখন খবর দেখাচ্ছিল। কোথায় কোন নেতার কনভয়ে কুকুর ঢুকে বিপত্তি ঘটানোয় বিশাল যানজট। কোন নেতার দলত্যাগ, কোথায় শিল্পপতির ঘরে মহাভোজে তারকা সমাবেশ। সব দ্রুত টিভির পর্দায় ভেসে উঠছে আর তার সঙ্গে সাংবাদিকের গুরু গম্ভীর উত্তেজিত কণ্ঠস্বর ভেসে আসছে। 

হঠাৎ যেন কেমন থমকে গেল শান্তনু। ব্রেকিং নিউজ! শহরে কোথায় পথ দুর্ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয় যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অশান্তি ও উত্তেজনার পরিবেশ। পলাতক লরির চালক। উত্তেজিত জনতার লরিতে অগ্নি সংযোগ ও পথ অবরোধ। পুলিশের গুলি, আহত জনতা। টিভির পর্দায় দেখা যাচ্ছে সে সব ছবি। প্রচুর সাংবাদিক তাদের ক্যামেরা নিয়ে দুর্ঘটনা স্থলে উপস্থিত। তাদের ক্যামেরা দেখাচ্ছে রাস্তায় পড়ে থাকা এক রক্তাক্ত যুবক কাতর কন্ঠে কিছু বলতে চেষ্টা করছে। চার দিকে উত্তেজিত জনতা আর পুলিশের খন্ড যুদ্ধ চলছে। রক্তাক্ত যুবকের দিকে কেউ ভ্রুক্ষেপই করছে না। সাংবাদিকরা শহরের অমানবিকতা দেখাতে ব্যস্ত। জনতা, পুলিশ ব্যস্ত খন্ড যুদ্ধে। ওদিকে আহত যুবক রাস্তায় পড়ে ছটফট করতে করতে নিথর হয়ে পড়ে রয়েছে। চারদিকে গোলাগুলি আর উত্তেজনা। সাংবাদিকের ক্যামেরা তখন নিহত যুবকের রক্তাক্ত মুখের ছবি দেখাচ্ছে। চমকে উঠল শান্তনু। সে আর দাঁড়িয়ে থাকতে ‌পারল না। মিত্র কাকিমা কিছু বোঝার আগেই শান্তনু অচৈতন্য হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। টিভিতে ততক্ষণ বিজ্ঞাপন বিরতি শুরু হয়েছে— নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির। 

Author

  • সরোজ চট্টোপাধ্যায়

    সাহিত্য চর্চার শুরু যাঁর বিশ্বভারতী(শান্তিনিকেতন)-র পাঠভবনে সাহিত্যসভার হাত ধরে সেই সরোজ চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৮৩ সালে অধুনা পশ্চিম বর্ধমান জেলার বনকাটি গ্রামে। ছাত্রাবস্থার সাহিত্য চর্চার ধারা আজও তাঁর মধ্যে অব্যাহত। ছড়া এবং কবিতায় তাঁর অবাধ বিচরণ। ছাত্রাবস্থাতেই লিখে ফেলেছিলেন বেশ কিছু নাটক; তার মধ্যে স্বনির্দেশনায় ছাত্রাবাসের আবাসিকদের নিয়ে মঞ্চস্থ করা হয়েছিল কিছু। ইংরাজী সাহিত্যের ছাত্র শ্রীচট্টোপাধ্যায় বর্তমানে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত। তাঁর কথায়, "কলমজাত সাহিত্যসৃষ্টি আমার পেশা নয়, তবে নেশা অবশ্যই। আজও তাই সাহিত্যের ছাত্র হিসাবেই পরিচিত হতে বেশি ভালো লাগে।" এইরকম এক প্রচার বিমুখ সাহিত্যিক কলম ধরেছেন নবতরু ই-পত্রিকায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আয়নাবন্দি: জিৎ সরকার (১/১২ পর্ব)
গদ্য- সাহিত্য গল্প ধারাবাহিক গল্প

আয়নাবন্দি: জিৎ সরকার

    গাড়িটা যখন বড়ো গেটের সামনে এসে দাঁড়াল তখন শেষ বিকেলের সূর্য পশ্চিমাকাশে রক্তাভা ছড়িয়ে সেদিনকার মতো সন্ধ্যেকে আলিঙ্গন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

    বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
    অসুর মর্দন(একাদশ পর্ব): জিৎ সরকার
    গদ্য- সাহিত্য গল্প ধারাবাহিক গল্প

    অসুর মর্দন(একাদশ পর্ব): জিৎ সরকার

      ভিড়টা মোড়ের বাঁকে অদৃশ্য হতেই শ্রী ঘরের দিকে ফিরতে উদ্যত হল, হঠাৎ নীচের দরজায় আওয়াজ উঠল। বাধ্য হয়েই অভিমুখে বদলে শ্রী নীচে এসে দরজা খুলল। দেখল ঋজু দাঁড়িয়ে, মুখে একটা হাসি খেলছে। এই হাসিটা একদিন ফিরে এসে শ্রী কিন্তু লক্ষ্য করেনি

      বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
      গদ্য- সাহিত্য গল্প ধারাবাহিক গল্প

      চ্যালেঞ্জ (৩য় পর্ব): অন্বেষা মণ্ডল

        ঠিক তখনই সিঁড়ির পাশ থেকে বেরিয়ে এল রোহিত, তার ডানহাতে টর্চ ও বাঁ হাতে ধরা একটা ছোট রোবট মাকড়সা। তারপর সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে এল রেবা, তার হাতে ধরা সেই বীভৎস দেখতে মুখোশ। রেবা নেমে এসে হাসতে হাসতে বলল, “রাহুল, সোনিকা হয়তো আসছে আমাদেরকে ভয় পাওয়া অবস্থায় দেখার জন্য।”

        বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন