বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর – কঙ্কণ চট্টোপাধ্যায়
ঘটনাটা আমার জীবনের।
সময়টা ১৯৯০ সাল। জয়দেবের মেলা শুরু হয়েছে। প্রত্যেক বছর আমি সেখানে যাবই। সারা রাত জাগব, এ আখড়া থেকে সে আখড়া ঘুরব, আর বাউল শুনব। মেলার দোকানে মোগলাই বা অন্যকিছু খেয়ে নিয়ে অজয় নদীর কনকনে ঠাণ্ডা আর অজস্র মাইকের শব্দে বেশ একটা নেশার মধ্যে কোন দিকে রাতটা পেরিয়ে যাবে বুঝতেই পারব না।
যথারীতি বিকেল বিকেল আমি আর আমার এক বন্ধু পৌঁছে গেলাম মেলায়। সারারাত, পরের দিন, পরের রাত পেরিয়ে দ্বিতীয় দিনের সকালটাতে দু-দুটো সুস্থ মানুষ বাড়ি আসার বাসের জন্যে অস্থায়ী বাসস্ট্যাণ্ডে অপেক্ষায় থাকলাম।

একটা সরকারি বাস আধ পেট প্যাসেঞ্জার নিয়ে ছুটে গেল গন্তব্যে।
চাপলাম না।
আমার পছন্দের স্টাফ আর বিশ্বস্ত একটা বাসের প্রথম সিটেই চেপে বসলাম দুজনে। বাসটা বেশ পুরোনো ঝরঝরে লাট খাওয়া। কিন্তু ওই যে বিশ্বাস!
বাস ছুটতে শুরু করল। দু-দুটো রাত জাগার জন্যে ঘুম ঘুম অবস্থায় ছিলাম। হঠাৎ করে কোথাও যেন ছিটকে পড়লাম আর হুড়মুড়িয়ে মানুষগুলো আমাকে চাপা দিয়ে ফেলল। যন্ত্রনায় জ্ঞান হারালাম।
আমার বন্ধু কোনও কারনে সুস্থ ছিল। ওর আর পাশের গ্রামের লোকজনের চেষ্টায় নবজন্ম হলো আমার। সুস্থ হতে বেশ কিছুদিন লেগেছিল।
বাসটার সামনের চাকা খুলে শাল নদীর গর্ভে তিন পালটি হয়ে পড়েছিল। ছয়জন লোককে আর বাড়ি ফিরতে হয়নি।
অতঃপর শুধু বিশ্বাস নয়, তার সঙ্গে যুক্তিও খুজি!
এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম । আগে শুনিনি ঘটনাটা ।সত্যিই রোমাঞ্চকর!
,আমার জীবনের অনেক ঘটনা আছে যেগুলো মনে রাখার মতো হলেও নিজেই ভুলে যাই। হঠাৎ হঠাৎ মনেও প’ড়ে যায়। তোর আসানসোল থেকে বিকেলে বাড়ি আসতে গিয়ে এক রোমাঞ্চকর ঘটনার জন্ম হয়েছিলো। অন্য কোন সময় এ নিয়ে লেখা যেতেই পারে।