Recent Post

বিভ্রান্তি: অন্বেষা মণ্ডল

আমি ভূতে বিশ্বাস করি না, কিন্তু আমার পড়ার টেবিলের উপর রাখা কাপ আর প্লেটের টিংটিং শব্দটা সত্যিই রহস্যময় মনে হচ্ছিল। 

                                                               বাবা মা বাড়িতে নেই। আমি একাই আছি তাই আজকে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়েছি। কিন্তু ঘুম আসছিল না বলে একটা আনন্দমেলা পত্রিকা পড়ছিলাম। ঘুম এসে যাওয়াতে শুয়ে পড়লাম। হঠাৎ একটা বিস্ফোরণের শব্দে চমকে জেগে উঠলাম ! আমি তৎক্ষণাৎ বালিশের পাশে রাখা টর্চটা হাতে নিয়ে অন করে চারিদিকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলাম। কেউ নেই ! সাবধানে সুইচ র্বোডের দিকে এগিয়ে গিয়ে লাইটটা জ্বাললাম। তখন আমি পুরো বাড়িতে ঘুরে এলাম কিন্তু কেউ কোথাও নেই। আমি কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়ে আমার খাটে এসে বসলাম ও ভাবতে লাগলাম কীসের জন্য বিস্ফোরণের শব্দটা হল। ঠিক তখনই আমি কাপ আর প্লেটের বিচিত্র টিংটিং শব্দটা শুনতে পেলাম। ভয় ধীরে ধীরে আমাকে অক্টোপাসের মত ঘিরে ধরতে শুরু করল। আমি নিজেই নিজেকে চিমটি কাটলাম এটা নিশ্চিত করতে যে এগুলো আমার কল্পনা কিনা। কিন্তু তা নয় আমি সম্পূর্ণ সজাগ রয়েছি !

কিছুক্ষণ পর টিংটিং শব্দটা থেমে যাওয়ায় আমি একটা গভীর শ্বাস নিলাম। আমার ঘরে ভূতের কথা ভাবতেই আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল কিন্তু আমার মন যুক্তিটা মানতে নারাজ। আমি অনেক বৈজ্ঞানিক রির্পোট পড়েছি যা ভূতের অস্তিত্বকে উড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু সিনেমা এবং ওয়েব সিরিজগুলি তাদের বাস্তব এবং শয়তান হিসেবে চিত্রিত করে তাদের রহস্যময় করে তুলেছে। আমার চোখের সামনে ভাসছে অ্যানাবেল ও দ্য নান এর মুখ !

                                                                                         ঘুম এখন আমার থেকে অনেক দূরে। আমি ঠিক করলাম যে লাইটটা জ্বেলে রাখব আর আমিও জেগে থাকব। কিন্তু বোধহয় আমার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করতেই ঘরের জানালার পর্দাটা রড সমেত ভীষণ শব্দ করে মেঝেতে পড়ে গেল। আমিও লাফিয়ে উঠে চিৎকার করে উঠলাম, “কে ? কে ওখানে?”

কিন্তু কোনো উত্তর নেই। এতক্ষণে আমি ভয়ে ও আতঙ্কে প্রায় মূর্তির মত নিশ্চল হয়ে গেছি । কোনওক্রমে ঘাড় ঘুরিয়ে দেওয়ালে ঘড়ির দিকে দেখলাম। ঘড়ির কাঁটা তিনটে ছুঁইছুঁই। “ভূতেরা রাত তিনটের সময় জাগে” ভূতের সিনেমায় শোনা এই কথাটাও তখনি মনে হল। সেটা মনে পড়তেই আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে এল ও শিরদাঁড়া দিয়ে একটা হিমশীতল স্রোত বয়ে গেল! দিনের আলো ফুটতে এখনও দেড় ঘণ্টা বাকি। আমি ভগবানের কাছে প্রার্থনা করতে লাগলাম যে তিনি যেন আমাকে এই ভূতের হাত থেকে রক্ষা করেন, যেটা আমি নিশ্চিত ছিলাম যে ঘরের মধ্যে লুকিয়ে আছে । 

পরের দেড় ঘন্টা খুবই কষ্টকর ছিল কারণ আমি বিছানায় বসে ঘুমিয়ে পড়েই আবার চমকে জেগে উঠছিলাম। সূর্য উঠতে দেখে স্বস্তি পেলাম। আমি উঠে দাঁড়িয়ে হাত পা একটু এক্সারসাইজের ভঙ্গিতে নাড়াচাড়া করে নিলাম। পাশের ঘরে গিয়ে দেখলাম মেঝেতে ভাঙা কাঁচের টুকরো যেগুলো আসলে একটা বাল্বের ভগ্নাংশ ছিল। এটাই মনে হয় বিস্ফোরণের মত শব্দটার কারণ ছিল। 

আমি টিভিটা অন করে নিউজ চ্যানেলে দিলাম। সেখানে শুনলাম বলছে যে কাল রাত্রে একটা মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে যার রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৫.৬। শহরের কিছু অংশে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হঠাৎ আগের দিন রাতের সমস্ত রহস্যময় ঘটনা আমার মনে স্পষ্ট হয়ে গেল। আমি ভগবানকে বার বার ধন্যবাদ জানালাম আমার উপর তাঁর অশেষ কৃপার জন্য।

Author

  • অন্বেষা মণ্ডল

    বীরভূম জেলার নানুর থানার নূতনগ্রামে ২০০৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন অন্বেষা মণ্ডল। শৈশব কেটেছে গ্রামের বাড়িতেই। স্থানীয় নিবেদিতা শিশু শিক্ষা নিকেতনে পড়াশুনা করে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন বোলপুরের সেন্ট টেরেসা স্কুলে। বর্তমানে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী অন্বেষার শখ গল্পের বই পড়া, গোয়েন্দার গল্প বিশেষ পছন্দের। পড়াশুনার সঙ্গে কবিতা ও গল্প লিখতেও বেশ পটু তিনি। এছাড়া ছবি আঁকতেও ভালোবাসেন। অবসর সময়ে দাদুর সঙ্গে সাহিত্য বিষয়ক আলোচনাতেও মশগুল থাকেন অন্বেষা। নব্য সাহিত্যিক অন্বেষার লেখালেখির প্রতি আগ্রহ সঞ্চার হয় দাদুর অনুপ্রেরণায়। মাত্র তিন বছর বয়সে 'উন্মোচন' পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কবিতা। পরপর আরও কতকগুলি কবিতা ওই পত্রিকাতেই প্রকাশিত হয়। ২০১৭ সাল থেকে তিনি আরম্ভ করেন ছোটগল্প লেখা; এরমধ্যে রহস্য গল্পই প্রধান। সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি আবৃত্তি-পাঠেও বেশ দক্ষ তিনি। বর্তমানে নবতরু ই-পত্রিকার জন্মলগ্ন থেকে তিনি যুক্ত আছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

গ্রাম্য বধূ: তৃষিতা ঘটক
বিবিধ কচিপাতা ছবি / ফটোগ্রাফি

গ্রাম্য বধূ: তৃষিতা ঘটক

    গ্রাম্য বধূ: তৃষিতা ঘটক(পঞ্চম শ্রেণি); শ্রীখণ্ড ঊষাঙ্গিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়; পূর্ব বর্ধমান

    বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
    Nabataru-e-Patrika-2023-11.jpg
    কচিপাতা স্মৃতিকথা

    আমার সকাল: অহনা মুখোপাধ্যায়

      আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি চারিদিক কুয়াশার চাদরে সাদা হয়ে গেছে। সকালে স্কুলে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। মা বলে “সনু আজকের দিনটা স্কুলে যাও, গাড়িতে যাবে মজা হবে।” বাবা বলল, “নিচে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।”

      বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
      কচিপাতা

      কাণ্ড কারখানা: তমোজিৎ মণ্ডল

        একদিন এক চোর একটি বাড়িতে চুরি করতে গেল। সেই বাড়িতে একটি কুকুর ছিল। কুকুরটা ঘেউ, ঘেউ করে ডাকতে লাগল। মালকিন শুনতে পেল কুকুরের ডাক। মালকিন অবাক হল।

        বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন