বাঁশিওয়ালা: রূপম মিশ্র
অদূরে দিঘির পাড় থেকে সেই আওয়াজ। বাঁশি থেকে যেন মধু বর্ষিত। নারায়ণ আজ হয়ত দিঘির পাড়ে বসে আপনমনে বাঁশি বাজাচ্ছে। সে মনের খুশিতে বাঁশি বাজায়, অন্তরের সমস্তটুকু উজাড় ক’রে। গ্রামের লোক বলতে থাকে, “হ্যাঁ বাপু নারায়ণ, তুমি তো অসাধারণ বাঁশি বাজাও, তা অন্যান্য জায়গায় গিয়েও তো বাজাতে পারো, ভালো সুনাম ও রোজগার হবে।”
নারায়ণ মৃদু হেসে শুধু বলে, “এখানেই বেশ আছি।”

এক দুই বিঘে চাষ জমি নিয়েই সংসার চলে। এক মেয়ে আর স্ত্রী নিয়ে সংসার, সারাক্ষণ অনটন লেগেই আছে। গ্রামের মধ্যে কিছু পুজো অনুষ্ঠানে স্ব-ইচ্ছায় হাজির হয়ে যায়, মনের আনন্দে বাঁশি বাজায়, লোক খুশি হয়ে যেটুকু দেয় তাই নেয়। প্রায়ই মাঠের মধ্যে, দিঘির পারে, ঝাউবনে বসে ফুরফুরে হাওয়ায় বাঁশি বাজায়। গ্রামের মানুষের খুব প্রিয় সে। সবাই বলে ওর বাঁশিতে নাকি জাদু আছে। কিন্তু হায়! হঠাৎ ওর মেয়েটির শরীর অত্যন্ত খারাপ হল। চিকিৎসা করাতে অনেক খরচ, নারায়ণ তা ব্যবস্থা করতে পারল না। মেয়েটি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল।
নারায়ণ এখনো বাঁশি বাজায়, কিন্তু গ্রামের মানুষের তার সুর আর পছন্দ হয় না। প্রায়ই দেখা যায় সে ঘরের দাওয়ায় একটা ভাঙা চেয়ারে বসে নীল আকাশের পানে চেয়ে সারাক্ষণ কী যেন ভাবতে থাকে।