বজ্রপাতের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা: – সৌম্যদীপ মৈত্র ও শামসাদ বেগম
বজ্রপাত—এই নামটির সাথে সকলেই পরিচিত। অনেকেই এই বজ্রপাত দেখতে খুব ভালোবাসেন আবার অনেকেই এই বজ্রপাতকে বেশ ভয়ও পান, কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে যে বজ্রপাতের পরিমান অনেকাংশেই বৃদ্ধি পেয়েছে ফলস্বরূপ বৃদ্ধি পেয়েছে মৃত্যু সংখ্যাও। তবে কিছু কিছু সচেতনতা অবলম্বন করে চললে হয়তো নিজেদেরকে সুরক্ষিত রাখা যেতে পারে এই বজ্রপাত থেকে ।
এইবার আপনাদের মনে নিশ্চয় প্রশ্ন জাগছে এই বজ্র কী? চলুন দেখা যাক যে এটি আসলে কী?
বজ্র হলো মেঘের মধ্যে অথবা বায়ু বা ভূমির মধ্যে বায়ুমণ্ডলে তড়িৎ-এর বৃহৎ স্ফুলিঙ্গ। সৃষ্টির প্রাথমিক পর্যায়ে বায়ু, মেঘের মধ্যে এবং মেঘ ও ভূমির মধ্যে ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক আধানের অন্তরক হিসাবে কাজ করে। যখন বিপরীত চার্জগুলি যথেষ্ট পরিমানে তৈরী হয়, তখন বাতাসের এই অন্তরক ক্ষমতাটি ভেঙে যায় এবং তড়িৎ মোক্ষণ ঘটে যেটি আমরা বজ্র হিসাবে জানি। বজ্রপাত মেঘের মধ্যে (আন্তঃমেঘ বজ্রপাত), মেঘ অথবা মাটিতে থাকা( মেঘ থেকে মাটিতে বজ্রপাত) বিপরীত আধান গুলির মধ্যে হয়ে থাকে।
বেশ তাহলে আমাদের কিছু প্রাথমিক ধারণা জন্মালো বজ্র ও বজ্রপাত সম্পর্কে, এইবারে আমরা আপনাদের শোনাব রমা ও মধুর কাহিনি।
রমা এবং মধু দুজনেই দশম শ্রেণিতে পড়ে, উভয়েরই পড়াশোনার আগ্রহ প্রবল। ওদের অনির্বাণ স্যার, প্রসেনজিৎ স্যার, সন্দীপ স্যারেরা খুবই সাহায্য করেন পড়াশোনার ব্যাপারে, এছাড়াও আছে সৈকত ও অরিন্দম নামের দুই দাদা, এরাও খুব উৎসাহ দেয় ওদেরকে নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে বা বিজ্ঞানের প্রসার ঘটাতে। দুজনের বাড়ি পাশাপাশি, বিভিন্ন প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে একে অপরের বাড়িতে যাতায়াত ঘটে। আজকে হঠাৎ সকাল সকাল রমা মধুর বাড়িতে উপস্থিত।
মধু বললো, ” কী ব্যাপার রে রমা আজ এত সকাল সকাল এলি? ”
প্রত্যুত্তরে রমা বলে – “আসলে মা ওই কাকিমাকে একটা জিনিস দিতে বলল, তাই দিতে এলাম।”
মধু বলে – “ও আচ্ছা আচ্ছা, কিন্তু জানিস রে, ইদানিং এত বাজ পড়ছে এবং মৃত্যু ঘটছে যে খুবই খারাপ ব্যাপার। তবে মানুষকে যদি একটু সচেতন করা যায় তাহলে হয়তো কিছুটা হলেও মানুষ নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবে।”
রমা বলে – “হ্যাঁ, সেইজন্য তো কিছু কিছু নিয়ম সকলকে মেনে চলা উচিৎ, বিশেষ করে যদি বাড়ির বাইরে থাকতে হয় কোনো কারণ বশত। যেমন ধর বজ্রপাতের সময় ঘরের ভিতর, সম্ভব হলে পাকা বাড়ির ভিতরে আশ্রয় নিতে হবে।”
উত্তরে মধু বলে – “একদম ঠিক, খোলা মাঠে থাকা খুবই বিপজ্জনক এই সময়ে। আর ঘরের ভেতরে থাকলে নিজেকে অনেকটা সেফ রাখতে পারা যায়। কিন্তু যদি কেউ খোলা মাঠে কাজ করছে এবং কাছাকাছি কোনও আশ্রয়ের জায়গা না-থাকে তখন কী করবে? তোর কী মত?”

রমা বলে – “তখন তো কোনও আশ্রয় নেওয়ার উপায় নেই তাই,ৎযতটা সম্ভব নিচু হয়ে গুটিসুটি মেরে বসে পড়তে হবে, কিন্তু তা বলে মাটিতে শুয়ে পড়া যাবেনা।”
মধু বেশ আনন্দিত হয়ে বলে, “একদম ঠিক বলেছিস রমা, বজ্রপাতের ক্ষেত্রে নিরাপত্তায় সরকার কিছু গাইড লাইন বলে দিয়েছেন, তাতেও এগুলোই উল্লেখ আছে।”
রমা বলে, “আর ধর মানুষ যেটা খুব ভুল করে সেটা হলো গাছের নিচে আশ্রয় নেন, এতে ঝুঁকি আরও বৃদ্ধি পায় তাই প্রত্যেকের উচিত গাছ থেকে কমপক্ষে চার মিটার দূরে অবস্থান করা।”
মধু বলল, “হ্যাঁ রে রমা, আমাদেরকেই এগুলো বোঝাতে হবে সকলকে। আরও কিছু নিয়ম আছে যেমন ধর ঝুলে থাকা বা ছেঁড়া বৈদ্যুতিক তার থেকে দূরে থাকতে হবে। জলাশয় থেকে দূরে থাকতে হবে, বিশেষ করে বাড়ির বাইরে থাকলে এসব নিয়মগুলো মাথায় রাখতে হবে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য।”
রমা বলে, “আর যদি কেউ কোনো যানবাহনের মধ্যে থেকে থাকেন তাহলে জানলা তুলে দিতে হবে। ওভারহেড বৈদ্যুতিক তার ও খুঁটি থেকেও নিরাপদে থাকতে হবে।”
পুনরায় রমা বলল, “বাড়িতে থাকলে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিগুলোকে প্লাগ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে হবে।”
রমার উত্তরে মধু বলল, “এছাড়াও ছাদ জানালা বারান্দা এগুলোতে না যাওয়াই ভালো বজ্রপাতের সময়।”
রমা বলল, “আর বাড়িতে যথাযথ বজ্র-নিরোধকের ব্যবস্থা করলে খুব ভালো হয়।”
রমার কথা শুনে মধু বলল যে, “জানিস রমা, বজ্রপাতের ফলে কোনো ব্যাক্তি যদি আহত হন তাহলে তাঁকে স্পর্শ করা একদম নিরাপদ। সুতরাং কেউ যদি ভেবে থাকেন যে আহত ব্যক্তিকে স্পর্শ করলে ক্ষতি হতে পারে সেটা একদমই ভুল ভাবনা।”
রমা বললো, “হ্যাঁ রে মধু, একদম সঠিক বলেছিস এক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে এবং অ্যাম্বুলেন্সের খোঁজ দিতে হবে।”
রমার কথা শেষে মধু বলে উঠলো যে,” হ্যাঁ রে রমা, এইগুলো সব কিছুটা নিজে জেনেছি আর বাকিটা ওই সরকার যে গাইড লাইন দিয়েছে ওখান থেকেই বললাম আর আমাদের সবাইকে এগুলো জানাতে হবে কী বলিস?”
রমা বলে, “একদম, আজকেই আমাদের সবাইকে এগুলো জানাতে হবে, বিশেষ করে গ্রামের দিকে যাঁরা থাকেন। আজ আসি রে, এমনিতেই অনেকটা দেরি হয়ে গেল।”
মধু বললো, “হ্যাঁ, সবাইকে বলবো আমিও কারণ সচেতনতাই একমাত্র উপায় নিজেকে সুরক্ষিত রাখবার।”
তাহলে রমা মধুর আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম যে বজ্রপাতের সময় কী করে নিজেদের সুরক্ষিত রাখা যেতে পারে। আশা করি সকলেই এই নিয়মগুলি মাথায় রাখবেন।
(তথ্য ঋণ: পশ্চিমবঙ্গ সরকার নির্দেশিত গাইড লাইন)
👌👌👌👌