চন্দ্রপুরে তার মায়ের কাছে বড়ো হয়ে উঠেছিল অমিত। অল্প বয়েসেই তার পিতৃবিয়োগ হয়। অর্থাভাবে কঠোর জীবনসংগ্রাম করে তাকে মানুষ করেছিল তার মা। কখনো কোনও অভাব বুঝতে দেয়নি তাকে। লেখাপড়ায় বেশ ভালো ছিল অমিত। সম্মানের সঙ্গে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্ৰি অর্জন করে মস্ত বড়ো কোম্পানির ম্যানেজার সে এখন। ছোটবেলার কথা সেদিন অফিসে বসে ভাবছিল অমিত। পুজোয় তার মা তাকে একটা জামা কিনে দিত। মায়ের কিছু না-হলেও
মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলত, “আমার তো আছে রে।”
বুকটা হু হু করে উঠল তার। নাহ! মা তার চাকরিটা দেখে যেতে পারেনি। মাকে একটা নতুন শাড়ি দেওয়ারও সুযোগ হয়নি তার।
পরশু দিন পুজো। তার আগে অফিসের সব একটু পরিষ্কার করছিল বিনু মাসি। অমিতের ঘরে ঢুকতেই বৃদ্ধা বিনু মাসির ঘর্মাক্ত মুখটার দিকে তাকাল সে। কি মায়াময় তার মুখখানি, মাতৃভাব উপচে পড়ছে। ঘর থেকে বেরিয়ে গেল সে। কিছুক্ষণ পর ফিরে এল, তার হাতে একটা শাড়ি। বিনু মাসির জন্য অমিত নিজের হাতে এনেছে। আনন্দের অশ্রুতে বিনু মাসির চোখটা ছলছল করে উঠল। অমিতের মাথায় হাত রেখে আর্শীবাদ করল সে। আগমনির সেই অপরাহ্ণ সাক্ষী থাকল মাতৃহারা এক সন্তানের সঙ্গে পুত্রহারা এক মায়ের মিলনের বিরল মুহূর্তের। পরন্ত বিকেলের রোদ্দুরে টেবিলে রাখা সুমিতের মায়ের ছবিটা যেন স্মিত হাসল।
নবতরু ই-পত্রিকার অন্যতম নবাগত লেখক শ্রীমান দীপ্তেশ চট্টোপাধ্যায় পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া শহরে ১৯৯৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। কাটোয়াতেই তাঁর শৈশব ও বড়ো হয়ে ওঠা। লেখকের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনা কাটোয়া কাশীরাম দাস বিদ্যায়তনে। এরপর কল্যানী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে মানব শারীরবিদ্যা বিষয়ে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থানাধিকারী হিসাবে সাম্মানিক স্নাতক উত্তীর্ণ হন। প্রথম থেকেই অত্যন্ত মেধাবী দীপ্তেশ চট্টোপাধ্যায় এরপর বেলুড় মঠ ও মিশনের অধীন নরেন্দ্রপুরে রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ এডুকেশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন বিভাগে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন(প্রথম বিভাগে দ্বিতীয় স্থানাধিকারী)।
এরপর কিছুদিন একটি কৃষি বিভাগীয় সংস্থায় কর্মজীবন কাটিয়ে বর্তমানে পুনরায় পড়াশোনার জগতে প্রবেশ করেছেন এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বরাবরের ভালো ছাত্র দীপ্তেশ চট্টোপাধ্যায় পড়াশোনার পাশাপাশি যত্নবান নিজের লেখালেখির বিষয়েও। স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে অনুপ্রাণিত তাই তাঁর লেখাতেও এই বিষয়ের ছাপ লক্ষ্য করা যায়, ব্যক্তিজীবনেও এর ব্যতিক্রম নয়। তিনি ভালোবাসেন একটু-আধটু রান্নাবান্না আর
বিভিন্ন গল্পের বই পড়তে, ছবি আঁকতেও ভালোবাসেন তিনি। বলাবাহুল্য ভক্তিমূলক সঙ্গীত সাধনাতেও তাঁর আগ্রহ যথেষ্ট। তাঁর লেখালেখির শুরু নয় বছর বয়স থেকে। ছাত্রাবস্থায় স্কুল কলেজের বিভিন্ন মাগ্যাজিনেও কলম চলেছে। মুলত অবসর বিনোদনের জন্য লেখালেখি করেন যেটা এখনও বজায় রয়েছে। বিশেষভাবে জনসমক্ষে আত্মপ্রকাশ নবতরু পত্রিকার হাত ধরেই 'আমার শৈশব' গল্পের মধ্যে দিয়ে।
রাস্তার পাশে বাঁ দিকের চায়ের দোকানে চা খেয়ে, বাঁ পকেট থেকে মিডিয়াম স্ট্যান্ডার্ডের গোল্ড ফ্লেকের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ধরালো, লাঞ্চব্রেক, রিং হল না।