প্রতিচ্ছবি: সুদীপা পাঠক
আজ সকাল থেকেই দীপার মন খারাপ। কোনও কাজে আজ মন লাগছেনা। দীপার স্বামী অবশ্য জানতে চেয়েছিল তার কী হয়েছে? কিন্তু দীপা ইচ্ছা করেই কিছু বলেনি। দীপার শাশুড়ি মাও দুইবার এসে ছিলেন কিন্তু তিনিও দীপার শরীর খারাপ ভেবে আর কিছু বলেননি দীপাকে। আজ অনেক ছোটোবেলার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে দীপার। ছোটবেলায় আজকের দিনে তার মা তাকে স্নান করিয়ে দিতেন, আর তার পরে বাবা তাকে নিজের হাতে নতুন জামা পরিয়ে দিতেন। এরপর মা আসন পেতে থালা সাজিয়ে দিতেন আর তাতে থাকত সব দীপার পছন্দের খাবার। কিন্তু আজ সে সবই অতীত। বাবা অনেক দিন আগেই মারা গিয়েছেন।

তারপর থেকে শুধু মা-ই ছিল দীপার সব। এরপর পড়াশোনা আর তারপর বিয়ে। মায়ের পছন্দ করা ছেলের সাথে বিয়ে হল দীপার। নাম রজত। বেশ ভালোই কাটছিলো দিনগুলো। প্রতি বছর আজকের দিনে মা ফোন করে দীপাকে অনেক আশীর্বাদ করতেন। কিন্তু আজ তিন মাস হলো দীপার মাও তাকে ছেড়ে চলে গেছেন না-ফেরার দেশে। তাই এই সব কথা আজ বেশি করে মনে পড়ছে দীপার। যাই হোক দীপা ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলো অনেক বেলা হয়ে গেছে তাই সে স্নান করতে গেল। স্নান সেরে ঘরে এসে সে অবাক হয়ে গেলো। সে দেখলো রজত একটি নতুন শাড়ি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। দীপা ঘরে এলে রজত তার হাতে নতুন শাড়িটি দিয়ে দীপাকে পরতে বলল। দীপা প্রথমে রাজি হয়নি শাড়িটা পড়তে, কিন্তু রজতের কথা সে শেষ পর্যন্ত ফেলতে পারে না। রজত তাকে শাড়িটা পড়ে খাবার ঘরে আসতে বলে। দীপা শাড়ি পড়ে খাবার ঘরে আসতেই তার ছোট্ট মেয়ে তাথৈ ছুটে এল এবং দীপার হাত ধরে তাকে মাটিতে পাতা আসনের ওপর জোর করে বসিয়ে দিল। রান্নাঘর থেকে দীপার শাশুড়ি মা বেরিয়ে এলেন আর তাঁর হাতে ছিল একটি থালা, তিনি সেই থালাটি দীপার সামনে রাখলেন। দীপা দেখল সেই থালায় সব তার পছন্দের খাবার। আর আছে একটি পায়েসের বাটি। এটা দেখে দীপার দুচোখ জলে ভরে গেল। শাশুড়ি মা দীপার দু’চোখ মুছিয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। আর দীপার ছোট্ট মেয়ে তার মুখে তুলে দিল এক চামচ পায়েস। আজ দীপা বুঝতে পারল যে— না, সে কিচ্ছু হারায়নি বরং সে নতুন করে অনেক কিছু পেয়েছে। আর দীপার জন্য জ্বালা মঙ্গল প্রদীপের আলোয় দেওয়ালে থাকা দীপার বাবা ও মায়ের ছবি দুটিও যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
মন ছুঁয়ে গেলো 👌🏻👌🏻