Recent Post

পর্দা: ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়

পথের পাশ দিয়ে যেতে যেতে, পথের পাশে দাঁড়িয়ে মুখে রং মেখে, চড়া সাজে সজ্জিত একটি মেয়েকে দেখে কিছু সময় যেন চলার কথা ভুলে গিয়েছিলাম। বুঝলাম ও ভদ্র সমাজে কলঙ্কিনী এক বারবণীতা। প্রচন্ড একটা ঘৃণা জড়ো হয়ে এল বুকে। মনে হল,  ছিঃ এই কি বাঁচা? একেই কি বাঁচা বলে? কারণ যাই থাক মেয়েটি কেন এপথে এলো? 

যেদিন প্রথম ও এই পথে হেঁটেছিল বা হাঁটতে বাধ্য হয়েছিল, যেদিন প্রথম কোনও পুরুষ পরম কামনায়, লালসায় 

ওকে স্পর্শ করেছিল, সেদিন কেন নিজেকে শেষ করে দেয়নি? 

ছিঃ, যে দেওয়া-নেওয়ায় ভালোবাসা নেই তা পাপ।

দিনের পর দিন যা জমা হচ্ছে ওর সেই পাপ, ও কি জানে বা বোঝে আদৌ সে কথা? 

এসব ভাবতে ভাবতে মনটা কেমন বিষিয়ে উঠেছিল। কিন্তু যে কাজে বেরিয়েছি, সেই কাজের তাড়ায় ভাবনায় ছেদ পড়ল। পায়ে পা বাড়িয়ে এগিয়ে চললাম গন্তব্যের দিকে। তবুও মন যেন খুঁজে চলল ওর এই অবস্থার কারণ। মনে হল আজ কাল চারিদিকে কতই তো শুনি, সংসার চালাতে কেউ কেউ না কি বেছে নেয় এই পথ। মনে হল, আচ্ছা এতই কি এদের বাঁচার তীব্র ইচ্ছে? মৃত্যু তুল্য  জীবনের বিনিময়ে প্রাণ ধারণ কি জীবন হতে পারে? ভাবতে ভাবতে এগিয়ে এলাম কিছু দূর। 

মনে  যখন এসব ভাবনারা ভিড় করে আসছে, হঠাৎ আমার কাঁধে অচেনা স্পর্শ, পিছন ফিরতেই সেই মেয়েটা…সেই কলঙ্কিনী। 

জিজ্ঞেস করলাম, “কী চাই তোমার?”

গলার স্বরে ঘৃণা স্পষ্ট আমার। 

—”আপনি বিবাহিত?” 

আমি নিরুত্তর রইলাম, মনে মনে ভাবলাম ও এসব জেনে করবেই বা কী? আর বুঝবেই বা কী? মেয়েটি যেন এসব ভ্রুক্ষেপ করল না, বরং মেয়েটির ঠোঁটের কোণে দেখলাম ব্যঙ্গের হাসি। মুখে বলল, “জানেন বহু বিবাহিত পুরুষ আসে আমার কাছে।”

 ওর গলার স্বরে চমকে উঠলাম, ভাবনারা পথ বদলালো, আমার চলার শক্তি আবার হারালাম। সমাজের ধ্বজা কাঁধে নিয়ে ভালো আছি ভালো আছি অভিনয়ে পাশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বেঁচে থাকা? যে মানুষ নিজের কামনা চরিতার্থ করতে বিশ্বাসের মর্যাদা রাখে না, সমাজকে কলুষিত করে? আবার সেই সমাজ নামক জগদ্দল পাথরের চাপে পরিচিত খামখেয়ালি স্পর্শ মেনে বাঁচার তাগিদে শ্বাস নেওয়া? এও কি বাঁচা শুধু পর্দাটুকু রেখে? কলঙ্কিনীর হাসি  আমাকে প্রশ্ন করে চলল, আমি তখনও উত্তর খুঁজে পেলাম না।

Author

  • ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়

    লেখিকা ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৭৯ সালে। অধুনা বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতন নিবাসী ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিহাসে স্নাতকোত্তর। লেখার হাতেখড়ি স্কুল ম্যাগাজিনে অনুগল্প লেখা দিয়ে। বিভিন্ন বিষয় পড়তে ভালোবাসেন। লেখার মূল অনুপ্রেরণা রবীন্দ্রকাব্য ধারা। সামাজিক বিষয় ও রোম্যান্টিসিজ়ম কবির মূল উপপাদ্য বিষয়। স্থানীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও বিভিন্ন পত্রিকাতে লেখালেখি করতে ভালোবাসেন তিনি। অবসর সময়ে সংগীত সাধনাতেও মগ্ন থাকেন শ্রীমতী বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী দিনে সাহিত্যকে শুদ্ধ ও নব দিশায়, মানব জীবনের প্রতিচ্ছবি করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন কবির চোখে। পাঠক মহলের কাছে পৌঁছে দিতে চান নতুন দিনের আশার আলো এই সাহিত্যকেই সোপান করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Nabataru-e-Patrika-July-2022-16.jpg July 1, 2022
অণু গল্প

ভালোবাসা: বসন্ত ঘোষ

    আমি তিনবার জেনেছি। এক, মায়ের কোলে। দুই, পরীক্ষায় প্রথম পাশ করে;আর তি

    বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
    Nabataru-e-Patrika-June-2022-13.jpg
    অণু গল্প

    জবাব: নির্মল কুমার দে

      শখ করে বন্ধু রজতের মোটরসাইকেলটি একবার চালিয়েছিল সঞ্জয়। আর গাড়িটা একটি বাচ্চাকে বাঁচাতে গিয়ে উলটে গিয়েছিল রাস্তায়।

      বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
      অণু গল্প

      পারিজাতের গল্প: নবজ্যোতি দাস

        রাস্তার পাশে বাঁ দিকের চায়ের দোকানে চা খেয়ে, বাঁ পকেট থেকে মিডিয়াম স্ট্যান্ডার্ডের গোল্ড ফ্লেকের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ধরালো, লাঞ্চব্রেক, রিং হল না।

        বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন