পরিশ্রম: পিনাকী সরকার
“পারিব না এ-কথাটি বলিও না আর
কেন পারিবে না তাহা ভাবো একবার,
পাঁচজনে পারে যাহা,
তুমিও পারিবে তাহা,
পার কি না-পারো কর যতন আবার
একবারে না-পারিলে দেখো শতবার ”
—কালীপ্রসন্ন ঘোষ
সৃষ্টিকর্তার সবথেকে শ্রেষ্ঠ জীব হল মানুষ। আর সেই মানুষের কাছেই আছে সফল হওয়ার উপায় যা অন্য কারোর কাছে নেই। তবে পৃথিবীতে কেউ সাফল্যের চামচ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। তা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সব কিছু অর্জন করতে হয়।
সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেক মানুষকেই কোনও না-কোনও প্রতিভা দিয়ে সৃষ্টি করেন যা তার অন্তরে সুপ্ত অবস্থায় নিহিত থাকে। সেই সুপ্ত প্রতিভাকে কঠোর পরিশ্রম ও চিন্তাধারার মধ্য দিয়ে বিকাশ ঘটাতে হয়।
প্রবাদে আছে, “পরিশ্রম সাফল্যের চাবিকাঠি।” তাই পরিশ্রমের দ্বারা ভাগ্যের চাবিকাঠি এমনভাবে পরিবর্তন করা সম্ভব যা একজন অলস মানুষের কাছে অলৌকিক বলে মনে হয়। মানুষ যদি তার লক্ষ্যে অবিচল থাকে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে তবে সে একদিন সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছাতে পারবে। কিন্তু মানুষের কোনও কাজে একবারে সফলতা লাভ নাও হতে পারে। দীর্ঘদিনের পরিশ্রম, চেষ্টা এবং অনুশীলনের ফলেই ধরা দেয় সাফল্য। তাই কোনও কাজে ব্যর্থ হলে তাতে হতাশা বা ডিপ্রেশনে না-ভুগে সেই কাজে কঠোর মনোনিবেশ করলে সফল হওয়া অবশ্যই সম্ভব।
একজন ছাত্র কঠোর অধ্যয়নের মাধ্যমে সে ভালো ফল করতে পারে, একজন কৃষক রোদ বৃষ্টিতে ভিজে পরিশ্রম করলে তবেই হাসিমুখে ফসল ঘরে তুলতে পারে।

কিছু মানুষ বিশ্বাস করে, ভাগ্যের দ্বারা অসাধ্য কাজ সাধন করা যায়। কিন্তু পৃথিবীতে যারা কীর্তিমান তারা সকলেই পরিশ্রমকে গুরুত্ব দিয়েছেন বেশি।
পৃথিবীর ইতিহাসে যুগে যুগে, কালে কালে যারা স্মরণীয়-বরণীয় হয়েছেন প্রকৃতপক্ষে তাদের সাফল্যের পিছনে লুকিয়ে আছে কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যয়ন। বিশ্বের যা কিছু আবিষ্কার হয়েছে সবকিছুই পরিশ্রমের ফল। সেই কারণেই বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন বলেছেন, “সাফল্যের মাত্র দুই শতাংশ হল প্রতিভা আর বাকি আটানব্বই শতাংশ হল পরিশ্রম।” যখনই তুমি পরিশ্রম করবে তখন ভাগ্য তোমার সহায় হবে।
স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস পরপর ছয় বার যুদ্ধে হেরেও প্রবল পরিশ্রম ও ইচ্ছাশক্তির বলে সপ্তমবার জয়লাভ করেন। মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবর প্রথম জীবনে রাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়েও পরবর্তীকালে সমগ্র ভারতবর্ষের সম্রাট হতে পেরেছিলেন নিজের চেষ্টা ও পরিশ্রমের ফলে। বর্তমান সময়ের বিখ্যাত ফুটবলার লিওনেল মেসি একসময় নিজের ফুটবলের ট্রেনিং-এর খরচ জোগাতে চায়ের দোকানে কাজ করতেন কিন্তু সময়ের ব্যবধানে পরিশ্রমের ফলে আজ তিনি বিশ্ববিখ্যাত হতে পেরেছেন; সুতরাং পরিশ্রমই হল সকল সফলতার মূল চাবিকাঠি।
সবশেষে বলি— আমরা ছোটবেলায় হাঁটতে শেখার আগে অনেকবার হোঁচট খেয়েছি বা অনেকবার পড়ে গেলেও আমরা কিন্তু অবশেষে হাঁটতে শিখেছি। তাই সফলতার পথে অনেক বাধা আসবে তবে সবকিছু উপেক্ষা করে যদি পরিশ্রমের মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করতে থাকি তাহলে দেরিতে আসলেও সফলতা ঠিকই আসবে। তাই জীবনে যদি তুমি এমন কিছু পেতে চাও যেটা আগে কখনও পাওনি তাহলে তার জন্য তোমাকে এমন কিছু করতে হবে যেটা আগে তুমি কখনও করনি।