পরিত্যক্ত বিভীষিকা(১ম পর্ব) – দীপ্তেশ চট্টোপাধ্যায়
চিরাচরিত জীবনে অবসরের আশীর্বাদের আক্ষরিক সংজ্ঞা ভাষায় উন্মচিত করা যায় কিনা জানিনা কিন্তুু আজও অবকাশের বৃষ্টিস্নাত বিকেলে ঘনিয়ে আসা আলো আঁধারিতে যখন মনের গহনে থাকা স্মৃতিফলকের জীবন্ত রচনাগাঁথা উলটাই তখন একটি ঘটনা আজও হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে তোলে। ঠিক কী হয়েছিল সেদিন? বলব। উত্তর কিন্তুু আজও অধরা। এবার আসল গল্পে আসা যাক।
বেশ কয়েক বছর আগের কথা, আমি তখন কলেজ ছাত্র। সময়টা একদম শীতের শুরু, সন্ধের প্রেক্ষাপটে খামখেয়ালি উত্তুরে বাতাস শীতের আমেজ জানান দিচ্ছে। সেবার কলেজের বার্ষিক পরীক্ষার শেষে কিছুদিন ছুটি পাওয়া গেল। কলেজে আমার সহপাঠী আর অভিন্নহৃদয় বন্ধু অনিমেষ আর তার বাবা মায়ের দীর্ঘদিনের অনুরোধে ঠিক করলাম এবার হস্টেল থেকে সোজা তাদের গ্রামের বাড়ি ঘুরে আসব দু’দিন আর ওখান থেকে সোজা নিজগৃহে। যেমন কথা তেমন কাজ, বাড়িতেও জানিয়ে দিলাম সেইমতো। অনিমেষের বাড়িতেও যেন তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল। যথারীতি শিয়ালদহ থেকে তিস্তাতোর্সা এক্সপ্রেস দুলে উঠল। উচ্ছ্বসিত আমরা দুজন যেন মুক্তির আনন্দের সাথে স্বদেশের এক আত্মিক টান অনুভব করলাম। মুর্শিদাবাদ জেলার ভাগীরথীর তীরে ছোট্ট একটি গ্রাম হীরামাটি, সেখানেই অনিমেষের দেশের বাড়ি। পৌঁছলাম যখন তখন সূর্যের রক্তিম আভায় পশ্চিম দিগন্তে রক্তরাগ স্পষ্ট। প্রাক শীতের সান্ধ্যঘন মুহূর্তে কোথাও যেন ইস্টিকুটুম পাখি ডেকে উঠল। কি অপূর্ব সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য! ঠিক যেন লাবণ্যময়ী প্রকৃতি সহাস্যে স্বাগতম জানাচ্ছে। প্রাণ খুলে গান গাইতে ইচ্ছে হল ওই পরিবেশে।

যথারীতি পৌঁছলাম অনিমেষের বাড়ি। সে এক এলাহি আয়োজন। অনিমেষ বাড়ির সবার সাথে আলাপ করিয়ে দিল। খুব আন্তরিক মানুষগুলো। আমার বাড়িতে এখানে নির্বিঘ্নে আগমনের সংবাদ দিলাম। কাকিমা মানে অনিমেষের মা বললেন,
“এতদিনে তবে এলে! যাক এখন দু’দিন এখানে থাকো, অনি সব ঘুরিয়ে দেখাবে তোমায়।”
আমি বললাম, “সত্যি এখানে আসার সময় এত ভালো লাগছিল, আপনাদের গ্রামের নাম হীরামাটি সার্থক।
এরপর গরম গরম লুচি, ছোলার ডাল আর পায়েস সহযোগে জমাটি আহার সেরে অনিমেষের সাথে একটু গ্রামের আশেপাশে দেখতে বেরোলাম। অনিমেষের বাবা সতর্ক করলেন , “বেশি দূর তোরা যাস না, আর সন্ধে হয়ে গেছে তাড়াতাড়ি ফিরে আসবি”
বাড়ির অদূরে একটি স্থানে নারায়ণ পুজো হচ্ছিল। অনিমেষ বলল, “এই সময় প্রত্যেকবার এটা হয়, চল একটু দেখে আসি।”
দেখলাম কাঁসর ঘণ্টায় মুখরিত সেই মন্দির প্রাঙ্গণ। মনটা এক অনির্বচনীয় প্রশান্তিতে ভ’রে উঠল। দুই বন্ধু কথা বলতে বলতে আমরা গ্রামের শেষপ্রান্তে ভাগীরথীর তীরে এসে পড়লাম। রুপালি থালার মতো চাঁদের প্রতিবিম্ব উদ্ভাসিত ভাগীরথীর আঙিনায়। হালকা শীতল হাওয়ায় শুকনো পাতার খসখস একটা শব্দ হচ্ছে। চারিদিকের এক অদ্ভুত নিস্তব্ধ পরিবেশ যেন নবাগত অতিথিকে ওই জায়গায় স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে থাকার অনুরোধ করছে। এদিকে অনিমেষ দেখি একটু যেন ব্যস্ত হয়ে উঠলো। চারপাশ একবার সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে দেখে নিয়ে বলল, “চল এবার তবে ফেরা যাক, সন্ধে গাঢ় হয়ে আসছে। কালই না হয় সকালে সব ভাল করে ঘুরবো। তুই তো বিকেল অবধি আছিস।”
-“যাব কিন্তুু ওইটা কাদের বাড়ি রে?”
One thought on “পরিত্যক্ত বিভীষিকা(১ম পর্ব)”