তুমি ফিরিয়া আইস – শরৎচন্দ্র সাহা
হে বীর সেই কবে তুমি কাহার হৃদয়ে জন্ম নিয়াছিলে সে কথা আমি হয়তো বলিতে পারিব না। কবে যে তুমি মাতৃভূমির ক্রোড়ে আসিয়া প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিলে তাহা হয়ত তোমার প্রিয় ভক্তগন অবগত। আমিও তাহাদেরই অনুসারী। তথাপি তোমার সে জন্মবৃত্তান্ত সর্ম্পকে অদ্যকার বিচলিত তপ্ত ভূমিতে দাঁড়াইয়া কিছু কহিতে পারিব না। কেন কি জান? অজানা আতঙ্কের বলিরেখার বিভীষিকা-ছাপ চক্ষু ও বদনে চিহ্ন ফেলিলেও ফেলাইতে পারে।
তবে তুমি অসীম সাহসী, প্রবলতর শক্তিধর, শুধু তাই নও, তুমি মহান, তুমি অন্তর্যামী, অলক্ষ্যে অবস্থিত হইয়া পরবশি সমাজের মুক্তিদাতা।
হে বন্ধু- বীর আমরা কেমন জান? তোমায় আমরা গনশক্তিরূপে জন্ম দিয়াছি বটে, কিন্তু তোমার সান্নিধ্য ব্যাতীত আমরা, যারা তোমার রসদে রসময়, সকলেই রসহীন। তোমার পরশটুকু পাইলে তবেই তো সৎ সাহস দেখাইতে শিরশিরানি করিয়া থাকি! তাছাড়াও বিজ্ঞ মনুষ্যগন কখনও নীতি আদর্শ পথ হইতে বিমুখ হইতে পারে না।

কিন্তু হে বীর মুক্তিযোদ্ধা অদ্যকার দিবসে অসম প্রতিদ্বন্দ্বীতায় তোমার দুর্দান্ত দুর্দিন আসিয়াছে। যতই দিবস গড়াইবে, বোধকরি দুর্দশা আরও বাড়িতে থাকিবে।
কেননা কতিপয় উগ্র, হিংস্র মনুষ্যের খপ্পরে পড়িয়া সরাসরি আক্রান্ত হইতেছো।
তবে গরিষ্ঠসংখ্যা জনগণ তোমার হিতাকাঙ্ক্ষীও বটে। তাহারা তোমারে প্রাণের ন্যায় আপন করিয়া রাখিতে চাহে।
কিন্তু হায়রে! তোমাকে এই সঙ্কটাপন্ন পরিস্থিতি হইতে উদ্ধার করিতে যাইবার মতো সাহস ও শক্তি তোমার প্রিয়পাত্রগণের মধ্যে দেখিতেছি কই? তুমি আক্রান্ত তাই সাধারণ জনগণও জনপ্রীতি হারাইয়া ভীতু ও দুর্বল হইয়া তাহাদের সম্ভ্রম, শক্তি, সাহস, শান্তি সবই খুইয়াছে।
হে বীর্যবান বীর তুমি, তোমারই অনুগ্রহে সুরক্ষিত করিয়াছ যে মাতৃকার স্বর্গসম জৌলুশ, সেই মাতৃকার স্নেহ-শীতল ক্রোড়েই মৃত্যুর মুখে ঢলিয়া পড়িয়াছ।
তোমার সকরুণ দুরবস্থা দেখিয়া আমরা স্তম্ভিত হইয়া গিয়াছি। তোমার সান্নিধ্যের অভাব বোধ করিয়া শুধু নির্বাকের ন্যায় থাকিয়া যাইতেছি। বড় অসহায় বোধ করিতেছি এ সমাজ সংসারে।
তোমার পরশে বিশ্বদরবারে এ মাতৃভূমির জৌলুশ উজ্জ্বল হীরক খন্ডের ন্যায় দীপ্ত। তথাপি অদ্য তোমার বিদীর্ণ হৃদয়ের শোণিত প্রবাহের কাতর স্পর্শে বিশ্বদরবারে মাতৃভূমির জৌলুশ বিপন্ন।
এক্ষণে, প্রিয়পাঠকগণ তোমার জীবনকৃতি পাঠ করিয়া হয়তো তোমার পরিচয় জানিতে ইচ্ছুক হইয়াছে, সুতরাং তাহাদের কৌতূহল নিবৃত্ত করিতে, হে মুক্তিযোদ্ধা তোমার স্বপরিচয় প্রদানে আমাদের সন্তুষ্টি লাভ হউক।
কিন্তু যে বীর মৃত্যুর মুখে অধঃপতিত, নিরুদ্যম, বাকরুদ্ধ তাহার পরিচয় প্রদানের বেদনার্ত হৃদয়ের বৃথা প্রচেষ্টার মধ্যেই এই লেখনী বলিয়া উঠিল “গণতন্ত্র ” তুুমি শীঘ্রই আরোগ্য লাভ করিও। এ সংসার তোমার নির্বাসন চাহে না।
লেখনিতে নেপথ্যের কোলাহল অনুধাবন যোগ্য ।