Recent Post

তুমি আর আমি শুধু: সুজিত চট্টোপাধ্যায়

সেই গানটা মনে আছে? 

“তুমি আর আমি শুধু জীবনের খেলাঘর হাসি আর গানে ভ’রে তুলব,

 যত ব্যথা দুজনেই ভুলব”

 গায়ক শ্যামল মিত্র, 

মনে আছে? 

আচ্ছা, বলুন দেখি এখানে তুমি আর আমি বলতে কোন দু’জনকে বোঝানো হয়েছে?  নিঃসন্দেহে বলা যায়, রোমান্টিক গান সুতরাং প্রেমিক প্রেমিকার ব্যাপার। এখানে বাবা-মা ভাই-বোন বা অন্য কেউ না; শুধুই ভালবাসার কপোত-কপোতীদের মনোভাব ব্যক্ত করা হয়েছে। 

“যত ব্যথা দুজনেই ভুলব”

অর্থাৎ অন্য কারোর ব্যথায় ব্যথিত হবার কোনও দায় নেই। শুধুমাত্র দু’জন দু-জনের ব্যথায় ভোলিনি মলম বুলিয়ে ভুলিয়ে দেব। দুনিয়া ভোগে যাক। 

এ-ই যে যুগলবন্দি ঘুপচি প্রেম, এর স্থায়িত্ব সম্মন্ধে কেমন যেন সন্দেহ জাগে, তাইনা?

তুমি আমার আমি তোমার মার্কা এই একবগগা প্রেম, ভ্যানিশ হতে খুব বেশি সময় নেয় না। তুমি আমির ন্যাকামি তখন ঘোর কাটিয়ে রণংদেহী। লাগ লাগ ভেলকি লাগ। 

এবার একঘেয়েমির পালা। সেই একঘেয়েমির দমবন্ধ দশা কাটাতে তৃতীয় কারোর উপস্থিতি চাহিদা তুঙ্গে উঠতে লেগেছে। 

সেইসময় ওই শ্যামল মিত্রের গান, মেশিনগান হয়ে বুকে শেল হয়ে বিঁধছে।  

বেশ, ধরা গেল ইচ্ছে হয়ে যে ছিল  মনের মাঝারে সে সশরীরে এসে গেল এই ধরাতলে। এইবারে অনিবার্য ভাবেই যত প্রেম ভালবাসা ভাললাগা— উউম আউম চুউম চাউম সব গিয়ে জড়ো হলো সেই নবাগতের চারপাশে। এখন তাকে ঘিরেই যাবতীয় সব। ব্যথাও সেখানে সুখও সেখানে। 

তাহলে শ্যামল মিত্রের গানের সেই গদগদ বাণী, “তুমি আর আমি শুধু জীবনের খেলাঘর”—তার কী হবে ? 

খেলাঘর এখন তৃতীয় প্রাণীর কব্জায়। জীবনের খেলাঘর এখন রাতজাগা আঁতুড়ঘর।  

মনের লুকোনো কুঠুরিতে চাপা  অনভিজ্ঞতার আক্ষেপ মাঝেমাঝেই সংলাপ হয়ে বেরিয়ে আসছে। 

“দু’একজন বয়স্ক কেউ থাকলে ভালো হত। ওরা সব জানে বোঝে কিনা।”

পুনরায় প্রমাণ হল— অভিজ্ঞতা বড়ই মহার্ঘ্য । 

জীবনে চলার পথে অপরিহার্য। ভালবাসায় না হোক স্বার্থের চাহিদায় তো বটেই । 

“জীবনের খেলাঘর হাসি আর গানে ভ`রে তুলব।”  

হায়রে, বাস্তব বড়ই কঠিন নিষ্ঠুর। কপোত-কপোতীর মোহ ভাঙা জটিল হিসেবি মনের মধ্যে জ্বলজ্বল করছে দু-একটি অতি পরিচিত অবহেলিত ভাঙ্গাচোরা মুখের ছবি।

“দেখা হয় নাই দুই পা ফেলিয়া”

হায় ভবিতব্য! যারা ছিল তারা নেই। 

যে ছিল না সে শুয়ে শুয়ে হাত-পা ছুঁড়ছে । 

অজানা ভবিষ্যতের দূত কাঁদছে। 

এখন গাওয়া যেতেই পারে গানের অন্তরা— 

“শুধু বলো তুমি কি গো জানতে, 

যেতে যেতে এই পথ  

শেষ হবে কোনও মরুপ্রান্তে?”

Author

  • Barun@Mukherjee

    নবতরু ই-পত্রিকার সম্পাদক বরুণ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৮৪ সালে। বীরভূম জেলার নানুর থানার শ্রীকৃষ্ণপুরের গ্রামের বাড়িতেই বড়ো হয়ে ওঠেন। আবাসিক ছাত্র হিসাবে বিদ্যালয় জীবন অতিবাহিত করেন বিশ্বভারতীর পাঠভবন ও উত্তর শিক্ষা সদনে। বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ বরুণ মুখোপাধ্যায় বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত আছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি ভালোবাসেন লেখালেখি করতে। এছাড়াও সাংস্কৃতিক চর্চা ও সৃজনশীল কাজকর্মের মধ্যে নিজেকে সর্বদা যুক্ত রাখেন। নতুন ছেলেমেয়েদের মধ্যে সাহিত্য সৃষ্টির উন্মেষ ঘটানোর জন্যই দায়িত্ব নিয়েছেন নবতরু ই-পত্রিকা সম্পাদনার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রম্য রচনা অক্টোবর ২০২১,পূজা সংখ্যা

লকডাউন: বিশ্বরূপ দাস

    “বলি স্কুল যাবে, না বসে বসে বোতামগুলো টিপে যাবে। রান্নাবান্না তো করতে হয় না। করলে বুঝতে কত ধানে কত চাল হয়। বেরিয়ে যেত তোমার সকাল থেকে মোবাইল করা। তাও বুঝতাম, ছেলেটাকে যদি সকাল থেকে একটু নিয়ে মা স্বরস্বতীর কাছে ধূপ-ধুনো দিতে।”

    বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
    ২০২১ গদ্য- সাহিত্য জানুয়ারি রম্য রচনা

    যা দেখি(২য় পর্ব)

      পৌষ মানেই ইন-জেনারেল পিঠেপুলি আর পায়েসের মাস, পৌষ মানেই শাল-সোয়েটার-টুপি, নানান বাহারি ফুল, মেলা, পিকনিক, স্নান না করার বাহানা, পুরোনো দিনের উনুনপারে বসে আগুন পোহাবার ছবি, বড়দিনের কেক, বেকারির খাবার বিক্রি করতে আসা বুড়োটার লাঠি ঠেকা দিয়ে দাঁড় করানো অসহায় সাইকেল, ঝুপ করে নামা সন্ধে

      বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন