ডায়াবেটিস প্রতিরোধে দারচিনির ভূমিকা পোস্ট আপনাকে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ দারচিনির দ্বারা কীভাবে করা সম্ভব সেই বিষয়ে তথ্য সহ জানাবে । Diabetes Mellitus একটি Chronic Metabolic Disorder এবং এই রোগে আমাদের শরীরে গ্লুকোজের absorption এবং utilization বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে আমাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। এই অবস্থাকে বলা হয় Hyperglycemia। এই রোগে আমাদের কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ফ্যাটের বিপাকক্রিয়া ভালো ভাবে সম্পন্ন হতে পারেনা।
এই Diabetes mellitus রোগটির জন্যে দুটি হরমোন দায়ী এবং এই দুই হরমোন একে অপরের বিপরীতে কাজ করে অর্থাৎ এই দুটি হরমোন এর ক্রিয়া ব্যাস্তানুপাতিক।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে দারচিনির ভূমিকা – অংশ ১
এই দুটি হরমোন হল Insulin এবং Glucagon হরমোন। এই দুটি হরমোনের মধ্যে Insulin হরমোন উৎপন্ন হয় অগ্নাশয়ের Islets of Langerhans এর Beta cells থেকে এবং Glucagon হরমোন উৎপন্ন হয় অগ্নাশয়ের Islets of Langerhans এর Alfa cells থেকে। এই Insulin হরমোন আমাদের রক্তের অতিরিক্ত গ্লুকোজকে আমাদের যকৃত এবং পেশির কোষে Glycogen রূপে সঞ্চিত করে রাখে ভবিষ্যতের জন্য এবং যে পদ্ধতিতে Insulin রক্তের অতিরিক্ত গ্লুকোজকে Glycogen এ পরিবর্তীত করে সেই পদ্ধতিটির নাম হল Glycogenesis অর্থাৎ Glycogen উৎপাদনি প্রক্রিয়া কিন্তু গ্লুকাগন হরমোন Insulin হরমোনের ঠিক বিপরীত কাজ করে অর্থাৎ এই হরমোনটি যকৃত ও পেশির কোষে সঞ্চিত Glycogen কে Glucose এ পরিবর্তীত করে রক্তে মিশিয়ে দেয় যার ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়।
Glucagon হরমোন যে প্রক্রিয়ায় যকৃত ও পেশির কোষে সঞ্চিত Glycogen কে গ্লুকোজে পরিবর্তীত করে রক্তে মিশিয়ে দিয়ে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি করে সেই প্রক্রিয়াকে বলা হয় Glycogenolysis অর্থাৎ Glycogen ভাঙনের প্রক্রিয়া। Diabetes Mellitus রোগে অগ্নাশয়ের Islets of Langerhans এর Beta Cells এ Insulin এর উৎপাদন এবং Beta cells থেকে Insulin এর নিঃসরণ কমে যায় বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় যার ফলে রক্তের অতিরিক্ত গ্লুকোজ আর গ্লাইকোজেনে পরিনত হতে পারেনা এবং ঠিক একই সময় Glucagon হরমোনের ক্রিয়াও বৃদ্ধি পায় যার ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায় এবং Hyperglycemia এর সৃষ্টি হয়।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে দারচিনির ভূমিকা – অংশ ২
আমাদের ভারতবর্ষ তথা গোটা বিশ্বে Diabetes Mellitus এ আক্রান্ত ব্যাক্তিদের সংখ্যা বেড়েই চলছে বেশ কিছু বছর ধরে কারণ আমাদের সবারই জীবন ও জীবিকার ধরন বদলে গেছে। এখন আমরা সবাই একটা ব্যস্ত সময়ের মধ্যে চলছি। এখনকার বেশিরভাগ লোকেরই নিয়মমাফিক খাওয়াদাওয়া, শরীরচর্চা করার সময় পর্যন্ত থাকে না। যে যখন পারছে তখন যা কিছু Junk Foods খেয়ে নিচ্ছে , ঠিকসময়মতো ঘুমাতে যাচ্ছেনা, রাত জেগে কাজ করছে, অনেক দেরিতে ঘুম থেকে উঠছে, শরীরচর্চা করে না এবং সর্বদাই একটা Stress এর মধ্যে জীবন অতিবাহিত করছে।
এছাড়াও বর্তমানে এই করোনা মহামারির সময় হওয়া Lock Down এর ফলে অনেকেই তাদের জীবিকা হারিয়ে একটি মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হয়ে জীবন কাটাচ্ছে, আবার অনেকে Work From Home করছে যার ফলে তাদের শারীরিক পরিশ্রম কিছুই হচ্ছে না আর এই গৃহবন্দি অবস্থায় অনেকেই ঘরে নানারকমের unhealthy খাবার গ্ৰহণ করছে যেমন পিৎসা, গ্ৰিলড চিকেন, বিরিয়ানি, কাবাব প্রভৃতি। এই রকমের অধিক ফ্যাট যুক্ত খাদ্য গ্ৰহন করার ফলে মেদাধ্যিকের প্রবনতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সমস্ত অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের ফলে আমাদের ভারত তথা গোটা বিশ্বে Diabetes এ আক্রান্ত ব্যাক্তিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
WHO [World Health Organization]-2014 অনুসারে 8.5% প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যাক্তিরা Diabetes এ আক্রান্ত কিন্তু যেটি WHO এর 1980 সালের রিপোর্ট অনুসারে ছিল 4.7%। আবার 2015 সালে International Diabetes Federation (IDF) তাদের রিপোর্টে বলেছিল 410 million প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যাক্তিরা Diabetes এ আক্রান্ত এবং যেটি 2040 সালে 642 million বেড়ে যাবে।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে দারচিনির ভূমিকা – অংশ ৩
Diabetes Mellitus মুলত দুই প্রকার। সেগুলি হল Insulin Dependent Diabetes Mellitus বা Type-1-Diabetes Mellitus [IDDM] এবং Non-Insulin Dependent Diabetes Mellitus বা Type-2-Diabetes Mellitus [NIDDM]। এছাড়াও Gestational Diabetes Mellitus দেখা যায় অনেক গর্ভবতী বা Pragnent মহিলাদের মধ্যে। Type-1-Diabetes কে বলা হয় Juvenile Onset Diabetes অর্থাৎ এই রোগে শিশু, বালক, বালিকা এবং কিশোর কিশোরীরা বেশি আক্রান্ত হয়।
এই রোগটি একটি T-Cell Dependent Autoimmune Disease এবং এতে অগ্নাশয় বা Pancreas এর Islets of Langerhans এর Beta cell সমুহ নষ্ট হয়ে যায় বিভিন্ন কারনে যেমন CD4 TH1 mediated CD8 T-Cells, বিভিন্ন Anti-Beta cells Antibodies এবং Macrophagic ক্রিয়াকলাপের ফলে। এছাড়াও যদি অগ্নাশয়ের Beta cell সমুহে যদি ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে তাহলে ওই Beta cells গুলো নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলশ্রুতিতে Beta cells সমুহ ইনসুলিন হরমোন উৎপাদন করতে পারেনা যার ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং ব্যাক্তিটি Diabetes এ আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এই রোগের লক্ষণ গুলো হল- অতিরিক্ত জল তৃষ্ণা, ঘনঘন মূত্রত্যাগ, পরিশ্রান্ত হয়ে পড়া প্রভৃতি। Type-2-Diabetes কে বলা হয় Adult Onset Diabetes এবং এই রোগে ইনসুলিন অগ্নাশয়ের Beta cells এ উৎপন্ন হয় ঠিকই কিন্তু সেই উৎপন্ন ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা খুবই কম হয়। এই প্রকারের Diabetes সেই সব ব্যাক্তিদেরই হয় যারা মেদাধিক্যে আক্রান্ত।
DIABETES MELLITUS প্রতিরোধে CINNAMON বা দারচিনির ভূমিকা
Cinnamon বা দারচিনি হল একপ্রকার মশলা বা Spice যেটি পাওয়া যায় Cinnamomum গণের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন চিরসবুজ গাছের বাকল বা ছাল থেকে। এই cinnamon কে বিভিন্ন রান্নায় স্বাদ ও সুগন্ধ বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ Cinnamon হল একটি Flavouring agent। কিন্তু আমাদের মনে একটি প্রশ্ন জাগে যে এই দারচিনি বা Cinnamon কী শুধু একটা Flavouring Agent রূপেই ব্যবহৃত হয়? এর কী অন্য কোনো ব্যবহার নেই? অবশ্যই আছে।
এটি আমাদের Colon এর গঠনকে এবং Colon এর স্বাভাবিক ক্রিয়াকে বজায় রাখার মধ্যে দিয়ে Colon cancer প্রতিরোধ করে, দারুচিনি বা Cinnamon এর Extract বা নির্যাসকে Chewing gum এ add করে সেই Chewing gum যদি আমরা গ্ৰহন করি তাহলে আমাদের মুখের বাজে গন্ধ দুর হয়ে যাবে, এছাড়াও Cinnamon একটি রক্ততঞ্চনকারী পদার্থ রূপে কাজ করে রক্তের তঞ্চন বা Coagulation এ সাহায্য করে, এবাদেও Cinnamon আমাদের জরায়ু বা Uterus এ রক্তের প্রবাহ বা Circulation বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও Cinnamon এ উপস্থিত বিভিন্ন Bio-active components গুলোর উপস্থিতির জন্য Cinnamon এর মধ্যে Antioxidant, Antimicrobial, Anti diabetic, Anti Inflammatory, nematicidal, mosquito larvicidal, insecticida, antimycotic, and anticancer properties থাকে। এছাড়াও Cinnamon বা দারুচিনির ব্যবহার মাজন বা Toothpaste এ করা হয় কারণ এটি দাঁত ব্যথা, মাড়ির সমস্যা, এবং মুখের ভিতরের জীবানু নাশ এবং মুখের খারাপ গন্ধ দূর করতে সহায়তা করে।

Cinnamon এ উপস্থিত Chemical Constituents সমুহ
দারুচিনি বা Cinnamon এ কিছু resinous compounds থাকে সেগুলি হল- cinnamaldehyde, cinnamate, cinnamic acid, এবং কিছু essential oils যেমন- trans-cinnamaldehyde, cinnamyl acetate, eugenol, L-borneol, caryophyllene oxide, b-caryophyllene, L-bornyl acetate, E-nerolidol, 𝛼-cubebene,𝛼-terpineol, terpinolene, এবং 𝛼-thujene।
Anti-Diabetic Activity of Cinnamon বা Cinnamon কীভাবে Diabetes Mellitus কে প্রতিরোধ করে
এবার আমরা আলোচনা করব Anti-Diabetic Activity of Cinnamon বা Cinnamon কীভাবে Diabetes Mellitus কে প্রতিরোধ করে সেটি নিয়ে। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক দারুচিনি বা Cinnamon এর Anti Diabetic Activity।
আরও পড়ুন – অস্টিওআর্থারাইটিস প্রতিরোধে আদার ভুমিকা
Cinnamon বা দারুচিনি আমাদের রক্তের অতিরিক্ত গ্লুকোজকে নিয়ন্ত্রন করে বিভিন্ন পদ্ধতিতে। যেমন-
এটি Insulin Receptor কে সক্রিয় করে তোলে Autophosphorylation প্রক্রিয়ায়।
এটি কোষে Glucose uptake কে বাড়াতে সাহায্য করে GLUT-4 কে সক্রিয় করার মধ্যে দিয়ে।
এটি Glycogenesis প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
এটি Gluconeogenesis প্রক্রিয়াকে অবদমিত করে।
এটি Pancreatic Alfa Amylase এবং Alfa Glucosidase উৎসেচকের ক্রিয়াকে অবদমিত করে।
GLUT-4 হল একপ্রকার Transmembrane Protein যারা কোষে Glucose এর uptake ঘটাতে সাহায্য করে Insulin হরমোনের উপস্থিতিতে। এই Insulin হরমোন Insulin Receptors [IR] এর সাথে যুক্ত হয় যার ফলে Tyrosine এর Autophosphorylation ঘটে Insulin receptor এর Beta subunit এর উপর। এরপর Phosphatidylinositol 3 kinase signaling cascade বিক্রিয়াপথটি সক্রিয় হয়ে ওঠে যার ফলে GLUT-4 সক্রিয় হয়ে ওঠে। Cinnamtannin B1 এবং Cinnamaldehyde Insulin হরমোনের মতো ক্রিয়া করে এবং Insulin receptor কে সক্রিয় করে তোলে।
আমরা যদি Diabetes এ আক্রান্ত ব্যাক্তির প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় Cinnamon কে রাখতে পারি তাহলে আমরা আক্রান্ত ব্যাক্তিদের এই Diabetes এর সমস্যা কিছুটা দূর করতে পারব। আমরা আক্রান্ত ব্যাক্তিদের বিভিন্ন ভাবে এই Cinnamon দিতে পারি যেমন আমরা cinnamon কে গুড়ো করে সেটাকে চায়ের মধ্যে দিয়ে তাকে দিতে পারি, আবার আমরা রান্নায় বিভিন্ন মশলার সাথে এই Cinnamon কে গুড়ো করে মিশিয়ে দিতে পারি , এছাড়াও আমরা আক্রান্ত ব্যাক্তিদের একটা ছোট্ট Cinnamon কাঁচা অবস্থায় দিতে পারি যেটা তারা চিবিয়ে খেতে পারবেন।
এছাড়া এখন বাজারে প্রচুর Cinnamon এর Supplements আছে সেগুলি আপনারা ব্যবহার করতে পারবেন। Supplements ব্যাবহার করার আগে চিকিৎসক বা পথ্যবিশারদদের সাথে আলোচনা করে নেবেন কারন তারাই আপনাদের বলে দিতে পারবেন যে কতটা Supplement আপনাদের শরীরের পক্ষে ভালো কেননা Supplements থেকে অনেক সময় Side effects হয়ে যায়। আপনারা যদি আপনাদের চিকিৎসক বা পথ্যবিশারদদের কথা মেনে চলেন তাহলে আপনারা সুস্থ থাকতে পারবেন।