Recent Post

টোকিয়ো প্যারা অলিম্পিক—সাফল্যের শিখরে ভারত: দীপ্তেশ চট্টোপাধ্যায়

টোকিয়ো প্যারা অলিম্পিক—সাফল্যের শিখরে ভারত: দীপ্তেশ চট্টোপাধ্যায়

টোকিয়ো অলিম্পিকের পর এবার ষোড়শ প্যারা অলিম্পিকের আসর বসেছিল ২৪ অগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। জাপানের রিও তানিগুচির সৃষ্ট ‘সোমেইটি’ ছিল এবছরের ম্যাস্কট। উল্লেখ্য ১৯৬৪ সালের পর এবছর দ্বিতীয়বার গ্রীষ্মকালীন প্যারা অলিম্পিকের আয়োজন করল জাপান। এবছরের থিম ছিল ‘আবেগের দ্বারা সংঘবদ্ধ'(United by Emotion)। প্যারা অলিম্পিকের ইতিহাসে ভারতের সাফল্য বিগত বছরগুলির তুলনায় সর্বশ্রেষ্ঠ। গত বছরের রিও-তে যেখানে পদক সংখ্যা ছিল চারটি সেখানে এবার উনিশটি পদক নিয়ে ভারত পদক তালিকায় চব্বিশতম স্থানে উঠে এসেছে। স্বর্ণপদকের সংখ্যা পাঁচটি এবং রৌপ্য ‌‌ও ব্রোঞ্জ পদকের সংখ্যা যথাক্রমে আটটি ‌‌ও ছয়টি। সর্বোপরি চুয়ান্ন জন ক্রীড়াবিদের দল এবছর ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিল যা ভারতের বিগত প্যারা অলিম্পিকের ইতিহাসে সর্বপ্রথম। হরিয়ানার তিরন্দাজ টেক চাঁদ এবং রাজস্থানের শুটার অবনী লেখারা যথাক্রমে উদ্বোধনী এবং সমাপ্তি অনুষ্ঠানের ভারতের পতাকা বাহক হিসাবে অংশগ্রহণ করেন।

সর্বপ্রথম পদক প্রাপক হিসাবে এবারে যার নাম উল্লেখ্য তিনি হলেন অস্ট্রেলিয়ার সাইকেল আরোহী পেইগে গ্রেকো। ভারতের হয়ে প্রথম পদকটি রৌপ্যপদক হিসাবে জিতে নেন প্যারা টেবিল টেনিসে ভাবিনা প্যাটেল। ২৪৯.৬ স্কোরের সঙ্গে বিশ্বরেকর্ড গড়ে দশ মিটার প্যারা এয়ার রাইফেলে একটি স্বর্ণপদক দেশকে উপহার দেন উনিশ বছর বয়সী রাজস্থানের অবনী লেখারা এবং তার সঙ্গে একটি ব্রোঞ্জ পদকও তিনি জিতে নেন। অন্যদিকে ইংল্যান্ডের ড্যানিয়েল ব্যাথেলকে পরাস্ত করে পুরুষদের প্যারা ব্যাডমিন্টন বিভাগে ভারতের ইতিহাসে সর্বপ্রথম স্বর্ণপদক জিতে নজির গড়েন প্রমোদ ভগত। হরিয়ানার জ্যাভলিন থ্রোয়ার সুমিত আন্তিল ৬৮.৫৫ মিটার থ্রো বিভাগে নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙে দেশকে স্বর্ণপদক উপহার দেন। অপর দুইজন স্বর্ণপদক প্রাপক হিসেবে প্যারা ব্যাডমিন্টন (একক) খেলোয়াড় কৃষ্ণা নাগার এবং ৫০ মিটার শুটিং(মিক্সড) বিভাগের মনীশ নারওয়াল-এর অবদানও অনস্বীকার্য।

২০২০ টোকিও প্যারা অলিম্পিকে পাঁচটি স্বর্ণপদক ছাড়াও মোট আটটি রৌপ্যপদক ভারত অর্জন করেছে। এর মধ্যে প্যারা হাইজাম্প বিভাগে তিনটি রৌপ্যপদক দেশকে এনে দিয়েছেন যথাক্রমে হিমাচল প্রদেশের নিশাদ কুমার, তামিলনাড়ুর এম. থাঙ্গাভেলু এবং উত্তরপ্রদেশের প্রবীন কুমার। ৪৪.৩৮ মিটার ডিসকাস ছুড়ে রৌপ্য পদক নিজের দখলে করেছেন হরিয়ানার যোগেশ কাথুনিয়া। প্যারা জ্যাভলিন বিভাগে ৬৪.৩৫ মিটার জ্যাভলিন ছুড়ে রৌপ্যপদক প্রাপকের তালিকার আরও এক উজ্জ্বল নাম রাজস্থানের দেবেন্দ্র ঝাঝারিয়ার। আরও দুই জন রৌপ্যপদক প্রাপক খেলোয়াড় হলেন প্যারা শুটিং (মিক্সড) বিভাগের হরিয়ানার সিংহরাজ আদানা, যিনি প্যারা শুটিং বিভাগে একটি ব্রোঞ্জ পদকও জিতেছেন এবং অপর নাম প্যারা ব্যাডমিন্টন বিভাগে উত্তরপ্রদেশের সুহাস এস যাঠিরাজের। 

ভারতের ইতিহাসে সর্বপ্রথম প্যারা তিরন্দাজি বিভাগে ব্রোঞ্জ পদক জিতে  হরভিন্দর সিং ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম খোদাই করেছেন। এছাড়াও ৬২.৫৮ মিটার জ্যাভলিন থ্রোয়ের মাধ্যমে ভারতকে ব্রোঞ্জ পদক এনে দিয়েছেন রাজস্থানের এস সিং গুরজার। প্যারা ব্যাডমিন্টন বিভাগেও এসেছে ব্রোঞ্জপদক এবং তা এসেছে মনোজ সরকারের হাত ধরে। বিহারের শরোদ কুমার প্যারা হাইজাম্প বিভাগে ব্রোঞ্জ পদকের খেতাব জিতেছেন। সর্বসাকুল্যে এবারের প্যারা অলিম্পিকের দৌড়ে ভারতের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। 

উল্লেখ্য এবার ২০৭ টি পদকের সঙ্গে পদক তালিকার শীর্ষে রয়েছে চীন, দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে গ্রেট ব্রিটেন(১২৪ টি) এবং আমেরিকা রয়েছে তৃতীয় স্থানে(১০৪ টি)। আগামী ২০২৪ সালের গ্রীষ্মকালীন  প্যারা অলিম্পিকের আসর বসতে চলেছে ফ্রান্সের প্যারিসে। আশা রাখব ভারত সেখানেও নিজের রেকর্ডের ধারা অব্যাহত রাখবে।

Author

  • দীপ্তেশ চট্টোপাধ্যায়

    নবতরু ই-পত্রিকার অন্যতম নবাগত লেখক শ্রীমান দীপ্তেশ চট্টোপাধ্যায় পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া শহরে ১৯৯৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। কাটোয়াতেই তাঁর শৈশব ও বড়ো হয়ে ওঠা। লেখকের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনা কাটোয়া কাশীরাম দাস বিদ্যায়তনে। এরপর কল্যানী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে মানব শারীরবিদ্যা বিষয়ে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থানাধিকারী হিসাবে সাম্মানিক স্নাতক উত্তীর্ণ হন। প্রথম থেকেই অত্যন্ত মেধাবী দীপ্তেশ চট্টোপাধ্যায় এরপর বেলুড় মঠ ও মিশনের অধীন নরেন্দ্রপুরে রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ এডুকেশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন বিভাগে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন(প্রথম বিভাগে দ্বিতীয় স্থানাধিকারী)। এরপর কিছুদিন একটি কৃষি বিভাগীয় সংস্থায় কর্মজীবন কাটিয়ে বর্তমানে পুনরায় পড়াশোনার জগতে প্রবেশ করেছেন এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বরাবরের ভালো ছাত্র দীপ্তেশ চট্টোপাধ্যায় পড়াশোনার পাশাপাশি যত্নবান নিজের লেখালেখির বিষয়েও। স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে অনুপ্রাণিত তাই তাঁর লেখাতেও এই বিষয়ের ছাপ লক্ষ্য করা যায়, ব্যক্তিজীবনেও এর ব্যতিক্রম নয়। তিনি ভালোবাসেন একটু-আধটু রান্নাবান্না আর বিভিন্ন গল্পের বই পড়তে, ছবি আঁকতেও ভালোবাসেন তিনি। বলাবাহুল্য ভক্তিমূলক সঙ্গীত সাধনাতেও তাঁর আগ্রহ যথেষ্ট। তাঁর লেখালেখির শুরু নয় বছর বয়স থেকে। ছাত্রাবস্থায় স্কুল কলেজের বিভিন্ন মাগ্যাজিনেও কলম চলেছে। মুলত অবসর বিনোদনের জন্য লেখালেখি করেন যেটা এখনও বজায় রয়েছে। বিশেষভাবে জনসমক্ষে আত্মপ্রকাশ নবতরু পত্রিকার হাত ধরেই 'আমার শৈশব' গল্পের মধ্যে দিয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক ঘটনা

বিপিন রাওয়াত ও মধুলিকা রাওয়াতের স্মরণে: সুমিত মুখোপাধ্যায়

    কোয়েম্বাটোরের সুলুর এয়ারবেস থেকে ওয়েলিংটন যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়ল সেনাবাহিনীর অভিশপ্ত চপার। কুন্নুরের এই কপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন  ১৪ জনের মধ্যে ১৩ জন

    বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
    অণু গল্প নভেম্বর

    অপত্য স্নেহের প্রতিদান: তুলি মুখোপাধ্যায় চক্রবর্তী

      অফিস থেকে বাড়ি ফিরে বাইক রেখেই অপত্য স্নেহে জড়িয়ে থাকা নিরীহ প্রাণ গুলোর টানে একছুটে ওদের কাছে আসেন প্রাণতোষ। ওরাও পরম বিশ্বাস আর ভরসায় সারাদিন নানা মানুষের কাছে পাওয়া অবহেলা জানিয়ে দেয় বিশ্বস্ত বন্ধুকে

      বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
      বিজ্ঞানভিত্তিক রচনা নভেম্বর

      অস্টিওআর্থারাইটিস প্রতিরোধে আদার ভুমিকা (১ম পর্ব): শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়

        অস্টিওআর্থারাইটিস আমাদের একটি অতি সুপরিচিত Degenerative Joint Disorder অর্থাৎ এই রোগটি আমাদের অস্থিসন্ধি বা Joints সংক্রান্ত একটি রোগ। এই রোগে আমাদের দেহের অস্থিসন্ধিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিশেষ করে আমাদের Knee Joint বা হাঁটুর অস্থিসন্ধি সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়

        বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন