Recent Post

চ্যালেঞ্জ (৩য় পর্ব): অন্বেষা মণ্ডল

চ্যালেঞ্জ (৩য় পর্ব): অন্বেষা মণ্ডল

(আগের পর্বটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন)

উঠে বসে হ্যারি দেখল যে সেটা রবার্ট ও স্টিভ। তখন তারা সবাই উঠে দাঁড়াল। তখন রবার্ট বলল, ‘’অনেক কষ্টে সবাই একসাথে হয়েছি, এখন আর রাহুলদের ভয় দেখানোর কথা না ভেবে নিজেরা এই ভুতুড়ে বাড়ি থেকে বেঁচে ফিরতে পারলে সেটাই অনেক।’’ 

তারা তখন সবাই মিলে ছুটতে ছুটতে নিচে নেমে এল। তারা যখন দরজার দিকে ছুটে যাচ্ছিল তখন পিছন থেকে সেই গলা আবার বলে উঠলো, ‘’ঠিক বলেছ পালাতে তো হবেই কিন্তু তার আগে ভাড়া দিয়ে যাও।’’ 

ব্রাউন বলল, ”ভা-ভা-ভাড়ায় আপনি ক্-ক্-কী চান?” 

উত্তর এল, “তোমাদের মধ্যে একজনকে আমার সাথে থাকতে হবে সারাজীবন ধরে।” 

তখন ওরা বলল, “না না আমরা থাকতে চাই না।” বলে ছুটে পালাতে গিয়ে, হঠাৎই মেঝেটা ধসে পড়ে গেল এবং তারাও সেই গর্তে পড়ে গেল। তখন উপর থেকে কেউ একটা দড়ি ঝুলিয়ে দিল ও তারা সেই দড়ি দিয়ে উপরে উঠে এল। স্টিভ বলল, “আমরা তো রাহুলদের ভয় দেখাতে এসে নিজেরাই ফেঁসে গেলাম।”  

তখন সেই গলা আবার বলে উঠল, “আশা করি যে তোমাদের এই ভুল ধারণাটা মুছে গেছে যে ভারতীয়রা খুব ভীতু ও বোকা হয়। কী তাইতো?” 

তখন ব্রাউন বলল, “আ-আ-আপনি কী করে…” 

                                  তার কথার মধ্যেই সামনের ঘরের বন্ধ দরজাটা খুলে গেল ও ঘরের ভিতর থেকে সেই সাদা রঙের কাপড় পরা ভূত বেরিয়ে এসে নিজের উপর থেকে সাদা চাদর সরিয়ে দিল। তখন রবার্টরা সবাই অবাক হয়ে দেখল যে সেটা আর কেউ নয়, সে হল রাহুল যে রোহনের কাঁধের উপর দাঁড়িয়ে আছে। রবার্ট বলল, “রাহুল ত্-ত্-তুই? রোহন দাদা? এ-এ-এখানে?” 

চ্যালেঞ্জ (৩য় পর্ব): অন্বেষা মণ্ডল

রাহুল বলল, “কেন বিশ্বাস হচ্ছে না? চলে আয় সবাই।” 

রবার্টরা দেখল যে সেই যোদ্ধা এসে দাঁড়াল। “কী রবার্ট ? চিনতে পারছিস?” বলল রাহুল। 

তারা মাথা নাড়তেই সেই যোদ্ধা তার হেলমেট খুলে দিল ও তারা দেখল সে হল জন। “এটা তো জন কিন্তু ওই ঘরটায় ও-ও-ওগুলো কী-কী ছিল, যেগুলো আ-আ-আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিল ?” স্টিভ জানতে চাইল। 

রাহুল বলল, “ওগুলো? ওগুলো তো বাদুড় ছিল। কতদিনের পুরনো বাড়ি, বাদুড় তো থাকবেই এটা জানিস না?” 

তখনই দেওয়ালে আবার সেই বিশাল মাকড়সার ছায়া পড়ল। হ্যারি চিৎকার করে উঠল, “সে-সেই মাকড়সা।” 

ঠিক তখনই সিঁড়ির পাশ থেকে বেরিয়ে এল রোহিত, তার ডানহাতে টর্চ ও বাঁ হাতে ধরা একটা ছোট রোবট মাকড়সা। তারপর সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে এল রেবা, তার হাতে ধরা সেই বীভৎস দেখতে মুখোশ। রেবা নেমে এসে হাসতে হাসতে বলল, “রাহুল, সোনিকা হয়তো আসছে আমাদেরকে ভয় পাওয়া অবস্থায় দেখার জন্য।” 

তার কিছুক্ষণ পরেই সোনিকা এল ও স্টিভদের জিজ্ঞাসা করল, “খুব ভয় দেখিয়েছিস তো এদেরকে? এখন এরা আর কখনো বলবে না যে…” 

সেই গলা বলে উঠল, “ভারতীয়রা ভীতু ও বোকা হয়না। তাই না…”

“মাম্মি…” বলে সোনিকা চিৎকার করে উঠল। আর তখনই সোনিকাদের সামনের পুরনো থামটা থেকে আলগা হয়ে একটা ব্লু-টুথ স্পিকার পড়ে গেল। লাইটগুলো জ্বলে উঠল ও অমিত একটা থামের পিছন থেকে বেরিয়ে এসে বলল, “স্যরি, ফোন থেকে সাউন্ড আসছিল, তাই স্পিকার লাগাতে হয়েছিল।” 

রবার্টরা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল ও রাহুলরা সবাই হেসে উঠল। তখন স্টিভ রাহুলকে বলল, “ক্-ক্-কিন্তু এইসব তুই জানলি কী করে?” 

রোহন বলল, “আজ ফ্ল্যাটের একটা ছেলে আমাদেরকে বলে যে রবার্ট নাকি আগে থেকেই জানত যে সোনিকা আমাদের টিমে এসেছে, এতে আমাদের সন্দেহ হয় যে সোনিকাকে আমাদের টিমে পাঠানোটা রবার্টেরই কোনো নূতন প্ল্যান। আমরা একমাস আগের চ্যালেঞ্জের কথা ভুলিনি তাই আমাদের সন্দেহ দৃঢ় হয়। শেষে সব পরিষ্কার হয়ে যায় যখন সোনিকা ভূত বাংলোয় আসার কথা বলে। এবং এটাও বলে যে সে একটু দেরিতে আসবে।” 

সবাই চুপ করে শুনছে। রোহনের বলা শেষ হলে রাহুল রবার্টকে বলে, “তাহলে রবার্ট এটা বোঝা গেল তো যে ভারতীয়রা বোকা বা ভীতু কোনোটাই নয় আবার প্রয়োজনে শত্রুর সাহায্যও করতে রাজি থাকে।” 

রবার্ট ও তার বন্ধুরা সমস্বরে “হ্যাঁ” বলতেই রাহুলরা সবাই হাসিতে ফেটে পড়ল।

(সমাপ্ত)

Author

  • Barun@Mukherjee

    নবতরু ই-পত্রিকার সম্পাদক বরুণ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৮৪ সালে। বীরভূম জেলার নানুর থানার শ্রীকৃষ্ণপুরের গ্রামের বাড়িতেই বড়ো হয়ে ওঠেন। আবাসিক ছাত্র হিসাবে বিদ্যালয় জীবন অতিবাহিত করেন বিশ্বভারতীর পাঠভবন ও উত্তর শিক্ষা সদনে। বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ বরুণ মুখোপাধ্যায় বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত আছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি ভালোবাসেন লেখালেখি করতে। এছাড়াও সাংস্কৃতিক চর্চা ও সৃজনশীল কাজকর্মের মধ্যে নিজেকে সর্বদা যুক্ত রাখেন। নতুন ছেলেমেয়েদের মধ্যে সাহিত্য সৃষ্টির উন্মেষ ঘটানোর জন্যই দায়িত্ব নিয়েছেন নবতরু ই-পত্রিকা সম্পাদনার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আয়নাবন্দি: জিৎ সরকার (১/১২ পর্ব)
গদ্য- সাহিত্য গল্প ধারাবাহিক গল্প

আয়নাবন্দি: জিৎ সরকার

    গাড়িটা যখন বড়ো গেটের সামনে এসে দাঁড়াল তখন শেষ বিকেলের সূর্য পশ্চিমাকাশে রক্তাভা ছড়িয়ে সেদিনকার মতো সন্ধ্যেকে আলিঙ্গন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

    বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
    শৈশবের গরমকাল: ঈশিতা পাল
    গদ্য- সাহিত্য স্মৃতিকথা

    শৈশবের গরমকাল: ঈশিতা পাল

      আমার শৈশব ভাড়াবাড়িতে। তাই গরমের ছুটিতে কাকু, জেঠুদের বাড়ি টানা একমাস ছুটি কাটাতে যেতাম। মামাবাড়িও যেতাম। ছেলেবেলার গরমকাল জুড়ে বেশ কিছু মজার স্মৃতি আছে

      বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
      চাদিফাঁটা আমার সেকাল: বন্দে বন্দিশ
      গদ্য- সাহিত্য স্মৃতিকথা

      চাঁদিফাটা আমার সেকাল: বন্দে বন্দিশ

        মনে পড়ে যায় ছেলেবেলার সেইসব দিন, প্রচন্ড গরম থেকে স্বস্থির আরাম

        বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন