চ্যালেঞ্জ(১ম পর্ব) – অন্বেষা মণ্ডল
রাহুল ছিল খুব বুদ্ধিমান একজন ছেলে। সে তার বাবা মায়ের সাথে ইংল্যান্ডের একটি ছোট্ট শহরে থাকত। তার এক দাদা ছিল, নাম রোহন। তারা একটি নামী স্কুলে পড়াশোনা করত। তাদের স্কুলে ও ফ্ল্যাটে অনেক বন্ধু ছিল। তাদের মধ্যে চারজন রাহুলের প্রিয় বন্ধু ছিল। তারা হল — জন, অমিত, রোহিত ও রেবা। এছাড়া রবার্ট বলেও তাদের একজন বন্ধু ছিল। কিন্তু রাহুল স্কুলের শিক্ষকদের প্রিয় হওয়ার কারণে রবার্ট তাকে হিংসা করত ও বিশেষ কথাবার্তা বলত না। তার আবার অন্য চারজন বন্ধু ছিল। তারা হল — স্টিভ, ব্রাউন, হ্যারি ও সোনিকা। একদিন রাহুলের সাথে রবার্টের ঝগড়া হয়। রবার্ট বলে যে, ভারতীয়রা খুব বোকা হয় এবং তারা খুব সহজেই ভয় পেয়ে যায়। রাহুল নিজে ভারতীয় হয়ে এই অপমানটি মেনে নিতে পারেনা। তাই সে ও তার বন্ধুরা মিলে রবার্টদের চ্যালেঞ্জ করে।
একদিন, রাহুল তার দাদা ও বন্ধুদের সাথে ফ্ল্যাটের পার্কে খেলছিল। এমন সময়, সোনিকা এসে উপস্থিত হয়। রাহুলরা খেলা থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে ও রোহিত বলে, “সোনিকা তুই এখানে যে ?”
সোনিকা তখন বলে যে তার সাথে হ্যারিদের ঝগড়া হয়েছে কারণ তারা তাকে খারাপ কথা বলেছে। তখন রোহন বলে, “আমরা তোর জন্য কী করতে পারি ?”
সোনিকা বলে, “আমি ওদের দল ছেড়ে তোদের দলে আসতে চাই।”
তখন রাহুল এগিয়ে এসে বলে, “আমাদের টিমে তোকে স্বাগত, সোনিকা। আমরা এখন বাড়ি যাব, তুইও আমাদের সঙ্গে আয়।”
তখন তারা সবাই রাহুলের বাড়িতে গেল। সেখানে যখন সবাই গল্প করছে, তখন জন বলল, “অনেকদিন কোনো রোমাঞ্চকর ঘটনা ঘটেনি।”
সোনিকা বলল যে তার কাছে একটা দারুণ প্ল্যান আছে। সবাই বলল, “সেটা কী ?”
সে তখন বলল, “আমরা সেই পোড়ো ভুতুড়ে দেখতে বাড়িটায় যাব। ওখানে খুব মজা হবে।”
তখন ঠিক হল যে সবাই বিকেল পাঁচটায় ভূত-বাংলোয় দেখা করবে। সোনিকা বলল, “আমি দশ-পনেরো মিনিট দেরিতে আসব কারণ আজ মাসি আসবে। তোরা চলে যাস আমিও পৌঁছে যাব।”
এদিকে রোহনরা যখন পার্কে সোনিকার সাথে কথা বলছিল তখন একটা অন্য ছেলে সেটা শুনতে পেয়ে যায়।
রবার্ট, স্টিভ ও অন্য বন্ধুদের সাথে তার বাড়িতে বসে লুডো খেলছিল। এমন সময় একটা ছেলে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে ঘরে ঢুকল। তাকে দেখে ব্রাউন বলল, “কী হয়েছে? তুই এরকম করছিস কেন?”
তখন ছেলেটা বলল যে সে নাকি একটা দারুণ খবর এনেছে। সবাই কৌতুহলী হয়ে উঠল। হঠাৎ রবার্ট বলে উঠল, “খবরটা আমার জানা আছে।”

সবাই খুব অবাক হয়ে তার দিকে তাকাল। রবার্ট বলল, “খবরটা হল এই যে সোনিকা রাহুলের টিমে চলে গেছে।”
তখন ছেলেটা বলল, “আমি তো শুনেই ছুটে এখানে এসেছি। তাহলে তুই খবরটা পেলি কী করে ?”
রবার্ট বলল, “সেটা তুই পরে শুনে নিবি। এখন যা।”
ছেলেটা তখন ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। রবার্টের বন্ধুরা তখন রবার্টের দিকে তাকালো। হ্যারি বলল, “তোর এই খবরটা আগে থেকেই জানা ছিল?”
রবার্ট মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। তার মুখে একটা রহস্যময় হাসির ছাপ। সে বলতে শুরু করল, “আসলে সোনিকাকে রাহুলের টিমে পাঠানোটা আমারই একটা গোপন প্ল্যান ছিল যেটা আমি শুধু সোনিকাকে বলেছিলাম।”
স্টিভ, হ্যারি আর ব্রাউন চুপ করে আছে। “তাই সোনিকা নাটক করছে যে সে রাহুলের টিমে চলে গেছে।”- রবার্ট দম নেওয়ার জন্য থামল।
— “আজ সোনিকা পুরো টিমকে সেই পোড়ো বাড়িটাতে নিয়ে আসবে। আমরা ওখানে আগেই পৌঁছে যাব আর ওদেরকে ভয় দেখাব।” রবার্ট থামল।
সবাই চুপ। হঠাৎ স্টিভ বলে উঠলো, “কিন্তু ভয়টা দেখাব কী করে?”
“আমরা সবাই ভূতের ড্রেস পরে থাকব আর মুখে থাকবে এই ভয়ানক মুখোশ”- বলল রবার্ট।
ব্রাউন রবার্টকে বলল, “কিন্তু আমরা এটা করব কী জন্য?”
রবার্ট সবাইকে একবার দেখে নিয়ে বলল, “এটা আমরা করব কারণ এক মাস আগে আমার সাথে রাহুলের একটা বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়েছিল। সেটা হল আমি বলেছিলাম যে ভারতীয়রা খুব ভীতু ও বোকা হয় কিন্তু রাহুলরা সেটা মেনে নেয়নি এবং বলেছিল সে প্রমাণ করে দেখাবে যে সেটা ভুল। তাই আজ আমি রাহুলকে দেখিয়ে দেবো যে আমি যেটা বলেছি সেটা ঠিক।”
রবার্ট একটু থেমে আবার বলল, “আজ আমরা পাঁচটার কিছুক্ষণ আগে ভূত বাংলোয় দেখা করব।”
সবাই সম্মতি জানিয়ে বাড়ি চলে গেল।
অসাধারণ লাগল লেখাটা। অভিভূত হলাম।
ধন্যবাদ