বছর ৩২-এর গৃহবধূ সায়ন্তী। কলকাতার এক ফ্ল্যাট বাড়িতে স্বামী কন্যা নিয়ে তিনজনের সংসার। স্বামী সঞ্জয়ের অফিস, মেয়ের অনলাইন ক্লাস এবং সাংসারিক ব্যস্ততার শেষে নিজের জন্য সময় বের করে নেন তিনি। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় চোখ জুড়ানো ঘর। একফালি ব্যালকনিতে বাহারি ফুলের সমাহার। আছে নয়নতারা, জবা, রজনীগন্ধা, রঙ্গন, অপরাজিতা, টেবিল-রোজ়ের মতো সারাবছরের ফুলগাছ। এছাড়া শীতকালীন ফুলে সাজিয়ে তোলেন ঘরের জানলা। থরে থরে সাজানো ফুলে অতি সুন্দর দেখায় ছোট্ট ফ্ল্যাটবাড়িটিকে। গলি দিয়ে ঢুকে উপরে তাকাতেই চোখে পড়বে সঞ্জয়-সায়ন্তীর ব্যালকনির জানলা দিয়ে ঝুলে পড়া ফুলগাছগুলিকে। ফুলগাছ ছাড়াও আছে রকমারি পাতাবাহার। আছে অ্যালোভেরার মতো প্রয়োজনীয় গাছও। এই গাছগুলি নিজের হাতেই পরিচর্যা করেন তিনি।

গাছপালার মতোই তিনি ভালোবাসেন গৃহসজ্জা। এই কাজে সাহায্য করেন সঞ্জয়ও। জানা গেছে এই কোভিড পরিস্থিতিতে লকডাউনের সময় যখন সঞ্জয়ের অফিস বন্ধ ছিল তখন প্রথমবার ৭২ দিন ও পরের বার ৪৮ দিন বাড়িতে থেকে নিজেরাই হাত লাগিয়েছেন ইনডোর পেইন্টিংস-এর কাজে। একটু একটু করে রং করে সাজিয়ে তুলেছেন নিজেদের সুখী গৃহকোণ। দেখে মনে হওয়ার জো-নেই এটা কাঁচা হাতের কাজ। ইউটিউবের সাহায্য নিয়ে কেবল নিজেদের প্রচেষ্টাতেই গোটা বাড়িটায় রং করে সময় কাটাবার ভালো উপায় তৈরি করেছেন তাঁরা। সঞ্জয়ের কথায়, “এই দুঃসাহসিক কাজে নামার উৎসাহ জুগিয়েছেন স্ত্রী সায়ন্তী, ওর ভরসাতেই এই কাজে হাত দিয়েছি আমরা। কাজ শেষ করে আর কিছু পাই না-পাই পেয়েছি প্রচুর ‘পজ়িটিভ-এনার্জি’।
সায়ন্তী জানিয়েছেন, “আত্মীয় স্বজন এসে সকলেই খুশি হয়ে গেছেন আমাদের কাজ দেখে।”
সায়ন্তীর রান্নাবান্নায় পারদর্শিতার কথা না-বললে হয়ত অনেক কিছু বাকি থেকে যাবে। তিনি যেমন নিত্য নতুন রেসিপি ‘ট্রাই’ করতে ভালোবাসেন তেমনই ভালোবাসেন আত্মীয় স্বজনকে খাওয়াতেও। তাঁর পছন্দের পদ হল ‘চিকেন ফিঙ্গার’, ‘চিকেন সাসলিক। নিরামিষ রান্নতেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। আর একটা কথা না-বললেই নয় সেটা হল তিনি তাঁর রান্নার বেশির ভাগ উপকরণ তৈরি করেন নিজের হাতেই। টমেটো সস, চিলি সস, কাসুন্দি প্রভৃতি উপকরণগুলি দোকান থেকে না-কিনে নিজের হাতে তৈরি করেন, ফলে তা স্বাস্থ্যসম্মতও হয় তেমনি সুস্বাদুও হয়। এইকারণে বাড়ির বাচ্চারা চেটেপুটে খেতে পারে।
পেশাগত পরিচিতিই যে সব নয় এটা সায়ন্তীদের মতো গৃহবধূরাই দৃষ্টান্ত স্থাপন করে দেখাচ্ছেন।