Recent Post

গ্রন্থ সমালোচনা— ইন্দুবালা ভাতের হোটেল(লেখক— কল্লোল লাহিড়ী): অংশুমান বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রাচীনগন্ধী স্মৃতিপূর্ণ চিলেকোঠার মতো আমেজ এই ছোট্ট ব‌ইটিতে! সুদূর কলাপোতার কুয়াশাভরা শিউলিতলার মিঠে ওম, ঘরছাড়া প্রবাসীর মনখারাপের হৃদয়বেদনা আর হঠাৎ বাঙালির দুর্গোৎসবের আনন্দ মেশানো, সরষে ফুলের মধুর মত এক উপন‍্যাস ইন্দুবালা ভাতের হোটেল! এ এক বাঙাল-ঘটির রান্না-গেরস্থালি-সংসারের স্মৃতিমেদুর উপাখ‍্যান। ইন্দুবালার হোটেলের খাওয়ার ঘরে মিশে গেছে ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলা, বাঙালের চুইঝাল থেকে ঘটির মালাইকারি। পড়তে পড়তে চোখ বন্ধ করলে গন্ধ পাওয়া যায় নারকোল দিয়ে কচুবাঁটা, আমতেল দিয়ে সরলপুঁটির ঝোল আর কচি আমড়ার টকের‌। মুখে আসে বিউলির ডাল আর আলুপোস্তর স্বাদ। ইতালির বাগানে আসে খুলনার এক অখ‍্যাত গ্রামের শেষবিকেলের আমবাগানের মৌতাত। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিহারের কমলানদীতীরের সেই লছমীর লিট্টির চাটনির টক-ঝাল-মিষ্টির স্বাদ পাওয়া যায়। পড়তে পড়তে চলে যাওয়া যায় কলাপোতার সেই পুকুরপাড়টিতে, যেখানে ভেসে উঠেছিল পূর্ণতা না পাওয়া স্বর্ণলতার প্রেমের মৃতদেহ।

ভেসে আসে মনিরুলের হালকা বাঁশির সুর। গোধূলির অস্তরাঙা সূর্যের মলিন আলোয় মিশে যায় গ্রামের পথ আর কলকাতার ছেনু মিত্তির লেনের বাড়ি। কৃষ্ণনগরের ফিজিক্সের প্রফেসর ঝন্টু গল্প শোনায় এইট্টিজ়ের। ঘোরের মতো আসে সত্তরের কালবেলার আঁচ, কয়লার উনুনের তাতে মিশে যায় নকশাল অলোকের ফিসফিসে কথা, ঈশ্বরে বিশ্বাসী ন‌ই, কিন্তু বিশ্বাস করে আপনি আছেন তাই আমরা আছি। ওড়িশার কোন অজ গ্রামের ছেলে, বুড়ো ধনঞ্জয় গজগজ করে মেসবাড়ির ছেলের দলের হুটোপাটিতে, পরক্ষণেই পরম স্নেহে ডেকে ডেকে খেতে বসায়। বিদেশফেরত সুনয়নীর স্বাদকোরকে ছাপ পড়ে কুমড়ো ফুলের মিঠে বড়ার। চুইঝালের  গন্ধ, চিংড়ির হলুদ গালা ঝোলের ভাপে মেতে ওঠে সারা পাড়া।

বাংলাদেশের হেঁসেলের একাল-সেকালের আখ‍্যানে বিভূতিভূষণের প্রকৃতিচিত্র-জীবনানন্দের বঙ্গপ্রেম মিশে রস গড়ায়‌। কল্লোলবাবুর কলমের মুন্সিয়ানার ছাপ এ উপন‍্যাসের পরতে পরতে‌।

Author

  • অংশুমান বন্দ্যোপাধ্যায়

    লেখক অংশুমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৯৮ সালে পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়ায়, পড়াশোনা শুরু বীরভূম জেলার শ্রীনিকেতনের সন্তোষ পাঠশালায়। তারপর বাকি স্কুলজীবনের কিছুটা অতিবাহিত হয় মুর্শিদাবাদে, বাকিটা হাওড়াতে। এরপর অ্যাডামাস ইন্সটিটিউট থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ গ্র‍্যাজুয়েশন। তাঁর কথায়, "এত জায়গায় ঘোরার ফলে আজকাল এক জায়গায় বেশিদিন মন টেকে না।" বর্তমানে তিনি হিউম্যান রিসোর্স এক্সিকিউটিভ হিসেবে আমেরিকান রিক্রুটমেন্টে যুক্ত আছেন। অংশুমান বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কর্মব্যস্ততার ফাঁকে ব‌ই পড়া, ভিডিও গেমিং, ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র নিয়ে ডুবে থাকতে ভালোবাসেন। এছাড়াও তিনি ভীষণভাবে ফুটবলের ভক্ত। দুনিয়ার বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে মিশতে ও তাঁদের সঙ্গে পরিচিত হতে চান তরুণ লেখক অংশুমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর লেখালেখি শুরু হয় ছোটবেলাতেই। স্কুলজীবনের দাদা-বন্ধুদের দেখাদেখি উৎসাহিত হয়ে কবিতা ও গল্প লেখায় হাতেখড়ি হয়। পরে স্কুল-পত্রিকা, মামার বাড়ির ক্লাবপত্রিকা এসবে টুকটাক লিখতে লিখতে এখন ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়াতেও লেখালেখির চর্চা চলছে। বিভিন্ন গ্রুপ-পেজেও প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা ফিচার-ছোটগল্প। বর্তমানে নবতরু ই-পত্রিকায় তাঁর লেখা বিভিন্ন মৌলিক রচনা প্রকাশিত হচ্ছে নিয়মিতভাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

শৈশবের গরমকাল: ঈশিতা পাল
গদ্য- সাহিত্য স্মৃতিকথা

শৈশবের গরমকাল: ঈশিতা পাল

    আমার শৈশব ভাড়াবাড়িতে। তাই গরমের ছুটিতে কাকু, জেঠুদের বাড়ি টানা একমাস ছুটি কাটাতে যেতাম। মামাবাড়িও যেতাম। ছেলেবেলার গরমকাল জুড়ে বেশ কিছু মজার স্মৃতি আছে

    বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
    চাদিফাঁটা আমার সেকাল: বন্দে বন্দিশ
    গদ্য- সাহিত্য স্মৃতিকথা

    চাঁদিফাটা আমার সেকাল: বন্দে বন্দিশ

      মনে পড়ে যায় ছেলেবেলার সেইসব দিন, প্রচন্ড গরম থেকে স্বস্থির আরাম

      বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
      শৈশবের গরমকাল: মধুরিমা বন্দ্যোপাধ্যায়
      গদ্য- সাহিত্য স্মৃতিকথা

      শৈশবের গরমকাল: মধুরিমা বন্দ্যোপাধ্যায়

        শীত বুড়ির চাদর পেড়িয়ে যখন গ্রীষ্মকাল আসে দাবদাহ যেন ভৈরব সন্ন‍্যাসীর মতন তাড়া করে। আমাদের ছোটবেলায় মুঠোফোন অনেক দূরের ব‍্যাপার লোডশেডিং এর পাড়ায় কার্টুন দেখাও ছিল শক্ত কাজ।

        বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন