আমার মনে পড়ে যায় সেদিনের কথা। সেইদিন সন্ধ্যায় হঠাৎ বাবা ড্রয়িং রুমে আমাকে ও দাদাভাইকে ডেকে বলল— শোন, কালকে সব গোছগাছ করে নিস। রাতের ট্রেনে আমরা রাজস্থান যাব।
সেই কথা শুনে আমি ও দাদাভাই সারা বাড়ি ছুটে ছুটে নাচতে আরম্ভ করলাম। পরের দিন সকালে উঠেই আমরা গোছগাছ করে নিলাম। সকাল সকাল স্নান করে খেয়ে দেয়ে সব কাজ করে নিলাম। বিকাল চারটের ট্রেন ধরে কলকাতার জন্য বেরিয়ে পড়লাম। হাওড়া স্টেশনে পৌঁছানোর পর আমরা রাতের খাবার খেয়ে নিলাম। তারপর আমরা স্টেশনে ট্রেনের জন্য বসে থাকলাম। রাত একটার সময় ট্রেন এসে দাঁড়াল। আমরা ট্রেনে উঠে বসলাম। ও! একটা কথা তো বলাই হয় নি। আমার সাথে মা, বাবা, দাদাভাই, ঠাম্মা ও দাদু ও ছিল। ট্রেনের নিচের সিটে মা আর দাদাভাই, মাঝের সিটে আমি আর ঠাম্মা আর উপরের সিটে বাবা আর দাদু সবাই শুয়ে পড়লাম। পরেরদিন সকাল সকাল উঠলাম। তারপর সারাদিন ট্রেনে আমি আর দাদাভাই খুব মজা করলাম। তার পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে। সেই বৃষ্টির মধ্যেই আমরা ট্রেন থেকে নেমে একটা গাড়ি ভাড়া করে মাউন্ট আবু পৌঁছালাম।

ওখানে একটা হোটেলে উঠলাম। ওখানে যে হোটেলে ছিলাম তার নাম ‘রাজস্থানি বাঙালি হোটেল’। হোটেলটা খুব সুন্দর। আমি বাবা আর মা একটা ঘরে। দাদাভাই দাদু আর ঠাম্মা আর একটা ঘরে। আমাদের ঘর দুটো পাশাপাশি ছিল। রাতেও খুব বৃষ্টি পড়ছিল। ভালোই ঘুম হলো। তার পরেরদিন বাবা মা ঠাম্মা আর দাদু বারান্দায় গল্প করছিল। আমি দাদাভাই আর হোটেল কাকুর মেয়ে রিয়াদি একসাথে খেলছিলাম। হঠাৎ দরজা ঠকঠক করার আওয়াজ শুনতে পেলাম। দরজা খুলে দেখলাম কেউ নেই। আবার আমরা খেলতে শুরু করলাম। পাঁচ মিনিট পর আবার সেই আওয়াজ। এরকম অনেকবার হওয়ার পর শেষবার দরজা খুলে দেখলাম একটা বাচ্চার পায়ের ছাপ বাইরের দরজার সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেছে। আমি তাড়াতাড়ি রিয়াদিদি ও দাদাভাইকে ডাকলাম। ওরাও দেখল, কিন্তু হোটেলে আমরা ছাড়া আর কোনো বাচ্চা ছিল না। আমি ছুটে গিয়ে তাড়াতাড়ি মাকে ডেকে আনলাম। মা দেখে জিজ্ঞাসা করল—তোদের সাথে কোনো বাচ্চা খেলছিল?
আমরা বললাম কেউ খেলেনি তো, সেই জন্যে তোমাকে ডাকলাম। আমি বললাম, এই পায়ের ছাপটা কার তাহলে? আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম। মা আমাদের বকে ঘরে নিয়ে গেল। রাতে খাওয়ার পর শোয়ার সময় আমি মা আর বাবার কাছে না শুয়ে ঠাম্মা দাদুর কাছে শুলাম। ওরা দুজনে ঘুমিয়ে পড়েছিল। কিন্তু আমার ওই একই চিন্তা ওটা কার পায়ের ছাপ? রাত্রে আমাদের বেসিনের কলের জল পড়ার আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। পরেরদিন সকালে হোটেল কাকু বলল— শুনুন এই ঘরটায় আপনাদের থাকা যাবেনা। অন্য একটা ভাড়া এসেছে। আপনাদের অন্য ঘরে থাকতে হবে।
আমরা বললাম ঠিক আছে। সেই ঘরটা হোটেল কাকু দেখাল। পরেরদিন দুপুরে আমরা যখন হোটেল ছাড়ছিলাম তখন হোটেল কাকু বাবাকে বলল— কাল যে ঘর থেকে আপনাদের অন্য ঘরে পাঠালাম, সেই ঘরের পাশে একটা বাচ্চার কবর ছিল। সেই বাচ্চাটা হোটেলের দোতলা থেকে খেলতে খেলতে পড়ে গিয়ে মারা গিয়েছিল অনেক বছর আগে।
সেই কথাটা শুনে আমি আগের দিনের সমস্ত ঘটনা কেন ঘটেছিল বুঝতে পারলাম। আমি অবাক হলাম রিয়াদিদি সব জেনেও সেদিন কিছু বলল না কেন? আমার মন খারাপ হয়ে গেল। তারপর আমরা ওই হোটেল আর মাউন্ট আবু ছেড়ে জয়পুর চলে গেলাম। এই ঘটনাটি মনে পড়লেই আজও আমার গায়ে কাঁটা দেয়।
ভয়ের গল্প। এমন আরো লেখো।