ক্যানসার
ক্যানসার বা কর্কটরোগ অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন সংক্রান্ত রোগসমূহের সমষ্টি। এখনও পর্যন্ত এই রোগে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। কারণ প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার রোগ সহজে ধরা পড়ে না, ফলে শেষ পর্যায়ে গিয়ে ভালো কোন চিকিৎসা দেয়াও সম্ভব হয় না। বাস্তবিক অর্থে এখনও পর্যন্ত ক্যানসারের চিকিৎসায় পুরোপুরি কার্যকর কোনও ওষুধ আবিষ্কৃত হয় নি। ক্যানসার সারানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পরলে এই রোগ সারানোর সম্ভাবনা অনেকাংশ বেড়ে যায়। ২০০ প্রকারেরও বেশি ক্যানসার রয়েছে। প্রত্যেক ক্যানসারই আলাদা আলাদা এবং এদের চিকিৎসা পদ্ধতিও আলাদা।
বিশ্বের সমস্ত প্রাণীর শরীর অসংখ্য ছোট ছোট কোষের মাধ্যমে তৈরি। এই কোষগুলো একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর মারা যায়। এই পুরনো কোষগুলোর জায়গায় নতুন কোষ এসে জায়গা করে নেয়। সাধারনভাবে কোষগুলো নিয়ন্ত্রিতভাবে এবং নিয়মমতো বিভাজিত হয়ে নতুন কোষের জন্ম দেয়। কিন্তু এই কোষবিভাজন তখন অনিয়ন্ত্রিত ভাবে হতে থাকে তখন আমাদের শরীরের স্থানে স্থানে টিউমারের সৃষ্টি হয়। এই টিউমার বিনাইন বা ম্যালিগন্যান্ট হতে পারে। ম্যালিগন্যান্ট টিউমারকেই ক্যানসার বলে।

ক্যানসারের প্রকার
কারসিনোমা
এটা খুব সাধারণ ধরনের ক্যানসার। ফুসফুস, মলদ্বার, স্তন এবং ডিম্বাশয়ের ক্যানসার এর অন্তর্ভুক্ত।
সারকোমা
সাধারণত হাড়ের, কশেরুকা, চর্বি বা মাংসপেশির ক্যানসারকে সার্কোমা বলে।
লিম্ফোমা
আমাদের শরীর জুড়ে লিম্ফ নোড ছড়ানো রয়েছে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এই লিম্ফ নোডের সাথে জড়িত। লিম্ফ নোডের ক্যানসারকেই লিম্ফোমা বলে।
লিউকেমিয়া
রক্ত কোষের ক্যানসারকেই লিউকেমিয়া বলে। এই রক্তকোষগুলো হাড়ের মজ্জা থেকে জন্ম নেয়।
সাধারণত বয়স যত বাড়তে থাকে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও তত বাড়তে থাকে, কারণ এ সময়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এক হিসেবে দেখা যায় যত মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয় তাদের শতকরা ৭০ ভাগেরই বয়স ৬০ বছরের ওপর। খাবার এবং জীবনযাপনের ধারার সাথে ক্যানসারের গভীর সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছে গবেষকরা। যেমন, ধূমপান বা মদ্যপানের সাথে ফুসফুস, মুখ ও কণ্ঠনালীর এবং যকৃৎ বা লিভারের ক্যানসারের যোগাযোগ রয়েছে। তেমনই ভাবে পান-সুপারি, জর্দা, মাংস, অতিরিক্ত লবণ, চিনি ইত্যাদি খাবারের সাথেও ক্যানসারের যোগসূত্র রয়েছে। যারা সাধারণত শারীরিক পরিশ্রম কম করে তাদের মধ্যেও ক্যানসারের প্রবণতাটা বেশি।ক্যানসারের সাথে জিনগত সম্পর্ক রয়েছে বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই কারণে পরিবারের কারো যদি ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা থাকে তাহলে অন্যদেরও ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকখানি বেড়ে যায়।
মানবদেহে যে সকল স্থানে ক্যানসার ধরা পড়েছে তা হল প্রস্টেট গ্রন্থি, স্তন, জরায়ু, অগ্ন্যাশয়, রক্তের ক্যানসার, চামড়ায় ক্যানসার ইত্যাদি। একেক ক্যানসারের জন্য একেক ধরনের লক্ষণ বা উপসর্গ থাকে। তবে সাধারণ কিছু লক্ষণ হচ্ছে:
● খুব ক্লান্ত বোধ করা
● ক্ষুধা কমে যাওয়া
● শরীরের যে কোনজায়গায় চাকা বা দলা দেখা দেয়া
● দীর্ঘস্থায়ী কাশি বা গলা ভাঙা
● মলত্যাগে পরিবর্তন আসা (ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা মলের সাথে রক্ত যাওয়া)
● জ্বর, রাতে ঠান্ডা লাগা বা ঘেমে যাওয়া
● অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমা
● অস্বাভাবিক রক্তপাত হওয়া
● ত্বকের পরিবর্তন দেখা যাওয়া
● মানসিক অস্বস্তি
রেট্রোভাইরাস এবং ক্যানসার সৃষ্টি
•রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন বহন করে যে ভাইরাসগুলি বলা হয় Retroviruses। এই ভাইরাসটি তাদের আরএনএতে ডিএনএ কপি রূপান্তর করতে পারে। এই প্রক্রিয়াটি বিপরীত ট্রান্সক্রিপ্যাটেজ এনজাইম দ্বারা অনুঘটিত হয়। তারপর এই ডিএনএ সংহতভাবে হোস্ট জিনোমের মধ্যে ইন্টিজেজ এনজাইম ব্যবহার করে একত্রিত হয়, যা রিভার্স ট্রান্সক্র্যাশটেজ দ্বারা কোডেড থাকে। সুতরাং, জিন ক্যারিয়ার হিসাবে রেট্রোভাইরাসের একটি বিশেষ সুবিধা রয়েছে। তারা সরাসরি হোস্ট জিনোমের মধ্যে একত্রিত হয়, কিন্তু রিভার ট্রান্সক্রিপশন স্বাভাবিক ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়ার তুলনায় অনেক দ্রুত এবং এটি খুব সঠিক নয়। Retroviruses এর প্রভাবে এইচআইভি এবং পশুদের ক্যানসারের সংখ্যা হতে পারে।

● এই রেট্রোভাইরাস তার কোষের অভ্যন্তরে একটি RNA জিনোমকে বহন করে এবং এই RNA টিকে আবৃত করে থাকে একটি বিশেষ প্রোটিন এর আবরন এবং এই প্রোটিন এর আবরন টিকে আবৃত করে রাখে একটি ফ্যাটের আবরন। এই রেট্রোভাইরাস এর মধ্যে তিন রকমের বিশেষ জিন থাকে এগুলো হল- Group Specific Antigen Gene [GAG], Polymerase Gene [POL], এবং Envelope Gene [ENV]।
● এই POL জিন টি তিনটি বিশেষ উৎসেচক কে সক্রিয় করে তোলে এগুলো হল- প্রোটিয়েজ, রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ, এবং ইন্টিগ্ৰেজ এবং এই তিনটি উৎসেচক রেট্রোভাইরাস এর সংক্রমক ক্ষমতা কে সক্রিয় করে তোলে। যখন এই ভাইরাস টি পোষকের শরীরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তখন এই ভাইরাস টি পোষকের কোষের ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়াকে অবদমিত করে এবং নিজে রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ উৎসেচক এর প্রভাবে নিজের RNA কে DNA তে পরিবর্তীত করে। এই DNA টি হল ভাইরাল DNA। এই ভাইরাল DNA টি পোষকের কোষের মধ্যে প্রবেশ করে। এই প্রক্রিয়াতে সাহায্য করে রেট্রোভাইরাস এর ইন্টিগ্ৰেজ উৎসেচক।
● রেট্রোভাইরাস এর DNA টি পোষকের শরীরের কোষে প্রবেশ করার পর পোষকের শরীরের কোষে উপস্থিত প্রোটোঅঙ্কজিন যেটি আমাদের শরীরে তথা পোষকের শরীরের কোষের কোষচক্র কে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে তাকে অঙ্কজিনে পরিবর্তীত করে। এই অঙ্কজিন ক্যানসার সৃষ্টির জন্য দায়ী।
এইভাবে রেট্রোভাইরাস আমাদের শরীরে ক্যানসারের সৃষ্টি করে।