কোসাকুডা দ্বীপের রহস্য: (১-ম পর্ব) – সুব্রত মজুমদার
আমি প্রফেসর লোমহর্ষণ; দ্বারকা নদীর তীরের এই ছোট্ট বাড়িটাতে বসে একটু আধটু বিজ্ঞানের চর্চা করি। আন্তর্জাতিক মহলে কিছুটা নামডাকও হয়েছে। তবে সেসব বলতে গেলে নিজের ঢাক নিজে পেটানো হয়। সে স্বভাব আমার নেই। আমি শুধু ভালোবাসি বিজ্ঞানের আলোতে জগতের অপার রহস্যের ব্যাখ্যা করতে। আর এই কাজে অনেক বড় বড় বিজ্ঞানসাধকই আমার পাশে এসে দাঁড়ান। আর এদেরই একজন হলেন ইসুকি নাকামুরা।

ইসুকি একজন জাপানি বায়োলজিস্ট। ওহিওর ‘বিশ্ব জীববৈচিত্র সংরক্ষণ’ সংক্রান্ত আলোচনা সভাতে ওর সঙ্গে আমার আলাপ। বেশ হাসিখুশি ও রগুরে লোক এই ইসুকি। যারা বিশ্বাস করে যে জ্ঞানী আর মেধাবীরা ফাজিল হয় না তারা ইসুকির সঙ্গে আলাপ করতে পারেন। ভুল ভেঙ্গে যাবে।
আজ সকালবেলা প্রাতঃভ্রমণ হতে ফিরে এসেই দেখি দশটা মিসড কল। ইসুকির নাম্বার হতে। ঘুরিয়ে ফোন লাগাতে একটা জাপানী গানের কলারটিউন বাজতে শুরু করল। কিছুক্ষণ পর ওপার হতে ভেসে এল ইসুকির গলা, “সুপ্রভাত ডঃ লোমহর্ষণ।”
-“হ্যাঁ ভাই সুপ্রভাত। তারপর বলো এত সাতসকালে কি মনে করে ? “
-“সাতসকাল তোমার ওখানে, এখানে তো বেলা সাড়ে ন’টা বেজে গেল। হ্যাঁ যে জন্য ফোন করেছি, রবার্ট পাস্তুরকে চেনো তো ? “
-“রবার্ট পাস্তুর মানে সেই খ্যাপা নৃবিজ্ঞানী ? কি হল তার ?”
-“আর বোলো না ভাই, জাপানে এসেছিল একটা গবেষণার কাজে, আমার বাড়িতেই অতিথি হিসেবে ছিল, কিন্তু…. “
-” কি কিন্তু…. ” আমি জিজ্ঞেস করলাম।
-“… গত পরশু হতে ওকে পাওয়া যাচ্ছে না। তুমি একটিবারের জন্য এসো। প্লিজ !”
এমন পরিস্থিতিতে না গিয়েও উপায় নেই। ঘন্টাখানেকের মধ্যেই বেরিয়ে পড়লাম। বেশি দেরি করলে ট্রেনটা পাবো না। বিমানের টিকিট পেতে অসুবিধা হল না। সবকিছু অনলাইন হওয়াতে এই এক সুবিধা।
ইসুকি থাকে ওসিমা দ্বীপে। জাপানের ছোট্ট একটা দ্বীপ এটি। বেশ সাজানো গোছানো এবং সবরকমের আধুনিকতায় ভরা এই দ্বীপ। ওসিমা বিমানবন্দরে নেমে একটা ট্যাক্সি করে চলে এলাম ইসুকির বাড়ি।
কাঠের তিনতলা বাড়ি। তবে তৃতীয়তল বিশেষ কাজের নয়। ওখানে জগতের যত পুরোনো বই আর অদরকারি জিনিসপত্রে ভর্তি। একতলায় রান্নাঘর, কাজের লোকের থাকার ঘর আর ডাইনিং। দোতলায় ইসুকির বেডরুম, ল্যাবরেটরি আর স্টাডিরুম। দোতলার একটা ঘরেই আমার থাকার ব্যবস্থা হল।
চা খেতে খেতে ইসুকি বলল রবার্টের অন্তর্ধান রহস্য। আমার যে ঘরে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে সেই ঘরেই ছিল রবার্ট। এসেছিল ইসুকির আহ্বানেই। সাগামি উপসারের একটা ছোট্ট দ্বীপ ঘিরে ওদের গবেষণা, তার নাম কোসাকুডা দ্বীপ।
ক্রমশ …
যেকোনো লেখা পড়ে কমেন্ট রেখে যাওটাই নিয়ম। আমিই শুরু করলাম।