কোসাকুডা দ্বীপের রহস্য(২য় পর্ব)-সুব্রত মজুমদার

প্রথম পর্বটি পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন
ছোট্ট একটা দ্বীপ। নব আবিষ্কৃত দ্বীপ বলে জাপানের ম্যাপেও উল্লেখ নেই দ্বীপটির। এই দ্বীপের আশি শতাংশই সক্রিয় আগ্নেয়গিরি যুক্ত পাহাড় আর জঙ্গলে ভর্তি। আর এই পাহাড় জঙ্গলকে ঘিরে রয়েছে বেলাভূমি, যেটা সমুদ্রকে স্পর্শ করে রয়েছে। বেলাভূমির উপর ইতস্ততঃ নারকেলের গাছ।
কোসাকুডা দ্বীপটি যে জন্য গবেষকদের আকর্ষণের কেন্দ্র সেটি হল দেবিরুমান। বিশাল উচ্চতা বিশিষ্ট দৈত্যের মতো দেখতে মানুষ। তবে দেবিরুমান সত্যিই আছে কি না তার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। জাপানী সেনাদের কেউ কেউ নাকি দেবিরুমানকে স্বচক্ষে দেখেছে। আর রবার্ট এসেছিল সেই মিথেরই সত্যতা যাচাই করতে।
হঠাৎ করেই নিরুদ্দেশ হয়ে যায় রবার্ট। ওর ব্যাগপত্র ঘেঁটে একটা নোটবুক পেলাম। দেবিরুমানদের নিয়েই কিছু তথ্য রয়েছে ওখানে। রয়েছে স্কেচও। খুব অদ্ভুত প্রাণী এই দেবিরুমান, বিশাল শরীর, জালার মতো পেট আর সামনের দিকে বেরিয়ে বিশাল শ্বাদন্ত।
ইসুকি বলল, “উদ্ভট কল্পনা সব। বাপের জন্মেও এরকম কিছু শুনিনি। হঠাৎ করে একদিন এসে বলল কোসাকুডা দ্বীপে যাবে, ওখানে নাকি বিশাল বিশাল চেহারার সব দেবিরুমান রয়েছে।
বললাম, বাপু আমি কোসাকুডার কাছেই বাস করি, আমিই জানলাম না আর আমেরিকা হতে তুমি খবর পেয়ে গেলে।
ও তখন একটা পুরোনো ডায়েরি বের করে আমাকে দেখাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার এক জাপানী কর্ণেলের ডায়েরি হিরোসিমার পতনের পর জাপান আত্মসমর্পণ করলে ওই কর্ণেলের সাথে ওর ডায়েরিও আমেরিকান সেনার কব্জায় আসে। ওই ডায়েরিতেই আছে দেবিরুমানদের কথা।”
ইসুকির চোখেমুখে একটা তাচ্ছিল্যের ভাব। বিষয়টাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না সে। বললাম,”আমাকে ডাকলে কেন ?”
ইসুকি বলল,
“সবার বিশ্বাস আমি রবার্টকে গুম করেছি। এমনকি ওর ফ্যামিলির লোকজনও আমার নামে ওদেশের জাপানী অ্যামবাসীতে অভিযোগ করেছে। পুলিশ আমাকে নিয়ে টানাহ্যাচড়া করছে। আমি চাই এই ঘটনার সত্যতা খুঁজে বের করতে। সেজন্যই তোমাকে ডাকা। তুমি আর আমি যাবো ওই দ্বীপে। “
বললাম, “ঠিক আছে চলো।”
পরদিন সকালেই রওনা হলাম। একটা যন্ত্রচালিত বোটে আমরা তিনজন। আমি ইসুকি আর বোটচালক। দীর্ঘ ছ’ঘন্টার সমুদ্রযাত্রার পর একটা ছোট্ট তটরেখা চোখে পড়ল। বোটটা যত এগিয়ে যায় ততই সেই তটরেখাটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ফুটে উঠতে থাকে একটা দ্বীপ। কোসাকুডা।
দ্বীপে নেমেই চোখে পড়ল লাল কাঁকড়ার সারি। ইয়া বড় বড় লাল কাঁকড়া দল বেঁধে চলেছে ডাঙার দিকে। আমাদের ব্যাগে খাবারের অভাব নেই। নিতান্ত বিপদে না পড়লে জীববৈচিত্রে হাত দেওয়ার পক্ষে আমি নই। ইসুকিও আমার সঙ্গে সহমত। বোটে চালকের কাছেও কিছু রসদ আছে। বোটচালক বোটেই অপেক্ষা করবে আমাদের জন্য।
দ্বীপটাতে নেমে অব্দি কেমন অস্বস্তি হচ্ছে। মাথা যেন ঠিকঠাক কাজ করতে চাইছে না। গোটা দ্বীপজুড়ে একটা হালকা মিষ্টি সুগন্ধ। সম্ভবত কোনও অজানা ফুল হতে ছড়াচ্ছে এই সুগন্ধ । বালুকাবেলা পেরোতেই নারকেলের সারি। যত এগিয়ে চলেছি ততই নারকেল গাছের পরিমাণ কমছে, বাড়ছে অন্যান্য গাছের সংখ্যা। জঙ্গলও গভীর হয়ে আসছে। খুব সাবধানে চলেছি আমরা। পাখি আর কিছু সরীসৃপ ছাড়া তেমন কোনও বড় ধরনের জীবজন্তুর দেখা মেলেনি এখনও পর্যন্ত। তবে সাবধানে থাকতে হবে।
কিছুটা এগোতেই কিসে যেন পা আটকে গেল আমাদের। একটা জালে আটকা পড়ে উপরদিকে উঠতে থাকলাম । ফাঁদ পেতে রেখেছিল কেউ। কিন্তু কে ? তাহলে কি এ দ্বীপে মানুষ আছে !
অজানা কে জানার ইচ্ছা মানুষের অনেক দিনের। এই সুন্দর সাবলিল বলিষ্ট লেখনি থেকে জানলাম কোসাকুডা দ্বীপের রহস্য।
মনে থাকবে।
অসংখ্য ধন্যবাদ ।
এই লেখাটি ভালো লাগলে অর্থাৎ পাঠকদের কাছে উত্তীর্ণ হলে প্রফেসর লোমহর্ষণকে নিয়ে ভাবব।