কোসাকুডা দ্বীপের রহস্য (৬ষ্ঠ পর্ব): সুব্রত মজুমদার
(আগের পর্বটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন)
আমি হো হো করে হাসতে হাসতে বললাম,”তা তো সম্ভব নয় ডক্টর রবার্ট পাস্তুর। তোমার সব জারিজুরি শেষ।”
-“মানে? আপনি…. “
-“হ্যাঁ রবার্ট, এই দ্বীপে প্রথম যখন তোমাকে দেখি তখনই চিনেছি। তোমার এত সুন্দর মেকআপ আর অভিনয় দক্ষতাও আমাকে বোকা বানাতে পারেনি। তুমি বোধহয় ভুলে গিয়েছিলে যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ লড়াই করা উইলিয়াম শাভেজের বয়স এখন কমপক্ষে নব্বইয়ের ওপারে। তোমার চালচলনে সেটা একবারের জন্যও প্রকাশ পায়নি। নব্বই উর্ধ্ব শাভেজ আর চল্লিশোর্ধ রবার্টের চালচলনে যে এক হবে না এটা বোঝা উচিত ছিল।”
নকল চুলদাড়ি আর প্রস্থেটিক মাস্ক খুলে ফেলে নেকড়ের মত দাঁত বের করে শাভেজ ওরফ রবার্ট বলল, “সত্য যখন জেনেই গিয়েছেন তখন লুকিয়ে লাভ কি। আমিই রবার্ট। আজ থেকে বছর দশেক আগে আমি এই দ্বীপে আসি একদল বৈজ্ঞানিকের সঙ্গে। আর এসেই একটা জাপানী চোরাকারবারি দলের হাতে বন্দি হই। চোরাকারবারি দলের নেতা হিরো ইয়াসুয়াকির নেকনজরে পড়ে যাই। আস্তে আস্তে হয়ে উঠি এখনকার সর্বেসর্বা।
কিন্তু গোল বাধল মাসছয়েক আগে। আমাদের বিজ্ঞানীর দল পুড়ে মারা গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হীরা উত্তোলনের প্রজেক্ট বন্ধ হয়ে যায়। তখনই মনে আসে আপনার কথা। আর আপনাকে আনতেই এই ছোট্ট নাটক।”
হেসে উঠে বললাম,”কিন্তু তা তো হবে না রবার্ট। “
-“কেন, বাধা দেবে তুমি? “শান্ত গলায় বলল রবার্ট।
বললাম,”আমি নয়, বাধা দেবে জাপানী কোস্টগার্ডরা। চারদিক দিয়ে ঘিরে ফেলেছে তোমাদের। মনে আছে রবার্ট তুমি বলেছিলে যে এদিকে তুমি আসোনি কোনোদিন। “
-“হ্যাঁ।”

-“তাহলে কীভাবে জানলে যে পাহাড়ের ঠিক কোনদিকে গেলে মিষ্টি জলের স্রোতা পড়বে? তোমার উপর সন্দেহ হতেই আমি বাথরুম যাবার ছল করে আড়ালে গিয়ে কোস্টগার্ডদের সব খবর দিই। বাকিটুকু করেছে জিপিএস।”
হাঁ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল রবার্ট। জাপানী কোস্টগার্ডরা এতক্ষণে সব দস্যুদের বন্দি করে ফেলেছে। ওদের সঙ্গেই এলো আমার বন্ধু ও বিখ্যাত বায়োলজিস্ট ইসুকি নাকামুরা। ইসুকিকে পাশের রুমেই বন্দি করে রেখেছিল ওরা।
রবার্টের হাতে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যেতেই আমরা ফেরার পথ ধরলাম। বোটে উঠে মুখ খুলল ইসুকি। বলল, “বড় বাঁচান বেঁচে গেছি লোমহর্ষণ। তুমি না থাকলে হীরার খনির মজুর হয়েই থাকতে হতো। তবে সেটাই বোধহয় ভালো ছিল। এমনিতেও ফাণ্ডিংয়ের যা অবস্থা তাতে খুব বেশিদিন গবেষণা চালিয়ে যেতে পারব বলে মনে হয় না।”
আমি হাসতে হাসতে পকেট হতে যে বস্তুগুলি বের করে ওর হাতে দিলাম সেগুলো পেয়ে আহ্লাদে আটখানা ও। বলল,”এতগুলো হীরে!”
-“হ্যাঁ। আসার সময় পকেটে ভরে নিয়ে এলাম। এতবড় কাজ করলাম তার দক্ষিণা নেবো না! তুমি বলো এবার তোমার গবেষণা আটকাবে কি?”
ইসুকি একগাল হেসে বলল, “আটকাবে মানে! গড়গড়িয়ে চলবে।”
(সমাপ্ত)
গল্পটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। পড়তে পড়তে টান টান উত্তেজনা অনুভব করেছি, একটানা না পড়ে ছাড়তে পারিনি।