কোসাকুডা দ্বীপের রহস্য(৪র্থ পর্ব) – সুব্রত মজুমদার
তৃতীয় পর্বটি পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন ।
জ্ঞান ফিরতে দেখলাম একটা পাতার ঝোপে পড়ে আছি। আমার সঙ্গী সাথীদের কেউই নেই। বিপদ বুঝে চলে এলাম আমাদের এই গুপ্ত ক্যাম্পে। এখানে পৌঁছনোর ক্ষমতা শত্রুদের নেই। ক্যাম্পে থাকা জিনিসপত্র দিয়েই তৈরি করে ফেললাম গ্যাস মাস্ক। বেঁচে গেলেও দ্বীপে আটকে গেলাম চিরদিনের মতো।”
-“আর দেবিরুমান ?”
জুতোর তলা হতে মাটি ছাড়াতে ছাড়াতে শাভেজ বললেন, “দেবিরুমান বলে সত্যিই কিছু আছে কিনা তা আমার জানা নেই এ দ্বীপে ওসবের কোনও অস্তিত্ব নেই। দ্বীপের বাতাসে ছড়িয়ে থাকা বিষাক্ত গ্যাসের প্রভাবেই হ্যলুসিনেশনের প্রভাবে ওসব দেখেছে।”

ক্যাম্পের ভেতরে একটা ছোট্ট ল্যাবরেটরি। শাভেজের কথামত ওটি আমেরিকান নেভির সমুদ্রবিদ্যা সংক্রান্ত গবেষণার জন্য। বললাম, “এই গ্যাসের নমুনা সংগ্রহ করে আনুন আমি দেখছি এর অ্যান্টিডোট বের করা যায় কি না।”
গ্যাসের নমুনা নিয়ে এল শাভেজ। আমি কোমর বেঁধে লাগলাম একটা এয়ার ফিল্টার তৈরি করতে যেটা বিষাক্ত গ্যাস ছেঁকে বিশুদ্ধ বাতাস পৌঁছে দেবে আমাদের নাকে। কয়েকঘন্টা নিরলস প্রচেষ্টার পর সাফল্য এলো। অবশ্য এ সাফল্যের সবটা কৃতিত্বই ল্যাবরেটরিটার প্রাপ্য। ওটি না থাকলে এই কাজ সম্ভব হতো না। ফিল্টারযুক্ত মাস্ক পরে বেরিয়ে পড়লাম তিনজনে। রবার্টের খোঁজে।
শাভেজ বললেন, “রবার্টের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। এই বিষাক্ত বাতাসে কেউই টিকে থাকতে পারবে না। যদি বেঁচেও থাকে তবে সুস্থ থাকার সম্ভাবনাও যথেষ্ট কম।”
আমরা চলেছি দ্বীপটির দক্ষিণদিকে। শাভেজের মতে ওই এলাকাটাই যত উৎপাতের কেন্দ্রস্থল। ওপাশে যাওয়া যায় না। ওদিকে গেলেই বমি বমি ভাব হয়, অসহ্য যন্ত্রণা হয় মাথাতে।
শাভেজ বললেন, “আমি বহু চেষ্টা করেও ওদিকে যেতে পারিনি। একবার তো টানা দু’দিন পড়ে ছিলাম গাছের তলায়। ভাগ্যিস এ দ্বীপে হিংস্র জন্তু জানোয়ার নেই। এরপর কোনোরকমে গড়াতে গড়াতে ওই এলাকার বাইরে আসি।”
মনে মনে হাসলাম। কিছুদিন আগেই যে যন্ত্রটার সফল পরীক্ষা করেছি সেটা ব্যবহারের সুযোগ এসেছে। ম্যাগনেটিক ফিল্ড নিয়ে আমার গবেষণা সফলতার মুখ দেখে দিন পনেরো আগে। হাই হতে লো যে কোনোরকমের ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি বা নিষ্ক্রিয় করতে পারে এই যন্ত্রটি। নাম দিয়েছি ‘প্রাকর্ষণ’।
আমি প্রাকর্ষণ যন্ত্র বের করে তার নীল সুইচটি টিপলাম। একটা অদৃশ্য তরঙ্গ ছড়িয়ে গেল চারদিকে। যন্ত্রটিকে ঘিরে দু’শ মিটার এলাকা চৌম্বকক্ষেত্রের বাইরে চলে এল। আমরা এগোতে থাকলাম।
প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এগোনোর পর তিনজনের অবস্থাই কাহিল। পাহাড়ি উঁচুনিচু পথে চলাটা চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। একটা চিড় জাতীয় গাছের তলায় বসে পড়লাম। কাঁধের ব্যাগে জল আর খাবার ছিল। বের করে খেতে শুরু করলাম।
হঠাৎই দক্ষিণের একটা জায়গার দিকে দেখিয়ে ইসুকি বলল, “লোমহর্ষণ, দেখতো ওটা কী?”
লেখাটি পড়ে খুব ভালো লাগছে। আমি রহস্য গল্প বেশি পড়তে ভালোবাসি। তাই বেশি উৎসুক হয়ে উঠছি।