কোসাকুডা দ্বীপের রহস্য(৩য় পর্ব) – সুব্রত মজুমদার

দ্বিতীয় পর্বটি পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন ।
আর ভাবতে পারছি না। সমস্ত ভাবনাচিন্তাগুলো যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। একটা মিষ্টি গন্ধে ম’ম’ করছে চারদিক। ঘুম পাচ্ছে আমার। কিচ্ছু ভাবতে পারছি না। সব যেন কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে। চারপাশটা আবছা হতে হতে মিলিয়ে যাচ্ছে যেন। কারেন্ট চলে যাওয়ার পর টিভির স্ক্রিনটা যমন হঠাৎ করে কালো হয়ে যায় তেমনি আমার চোখের সামনেটা অন্ধকার হয়ে এল নিমেষে।
চোখ যখন খুললাম তখন আমরা পড়ে আছি একটা পুরোনো মিলিটারি ক্যাম্পের একটা তাঁবুতে । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ক্যাম্প । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার সেনারা জাপানীদের হঠিয়ে দ্বীপটা দখল করে। যুদ্ধ শেষ হলে জাপানের আত্মসমর্পণের পর আমেরিকার সেনা ধীরে ধীরে দেশে ফিরে যায়। কিন্তু এই তাঁবু টা দেখে তো মনে হয় না। জিনিসপত্র জীর্ণ হয়ে এলেও এখনও বেশ ব্যবহার উপযোগী।
এখন ওসব চিন্তা মাথায় না এনে এখান থেকে পালানোর কথা ভাবতে হবে। যে আমাদের এখানে এনেছে তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমারা কিছুই জানি না। এমনও হতে পারে এই অজ্ঞাত লোকটিই রবার্টকে অপহরণ করেছে।
ইসুকির জ্ঞান আসতেই তাকে ঈশারায় চুপ থাকতে বলল। কারন ইতিমধ্যেই তাঁবুর দরজার কাছে একজনের আবির্ভাব ঘটেছে। লোকটা বেশ লম্বা চওড়া, সাড়ে ছ’ফুট এর মতো। মাথায় জটা আর বুক পর্যন্ত পাকা দাড়ি। পরনে শতছিন্ন পোষাক। রং চটে গেলেও ওটা সুদূর অতীতে যে মিলিটারি উর্দি ছিল তা চোখ বুজেই বলা যায়।
আমাদের দিকে তাকিয়ে দু’হাত তুলে একটা ইঙ্গিত করল লোকটা। এই ইঙ্গিতের অর্থ আমরা জানি। সে যে আমাদের শত্রু নয় এটাই বলতে চাচ্ছে।
এরপর বিশুদ্ধ আমেরিকান ইংলিশে বলল, “আমি কর্ণেল উইলিয়াম শাভেজ। জাপানে নিযুক্ত আমেরিকান নৌসেনাদলের চতুর্থ পল্টনের অধিনায়ক। বিচলিত হবেন না, আমি আপনাদের শত্রু নই।”
বললাম, “আমাদের এরকম বন্দি করে এখানে আনা হয়েছে কেন ?”
শাভেজ বললেন, “আপনাদের নিরাপত্তার জন্য।”
-“মানে ?” প্রশ্ন করল ইসুকি।
আমাদের পাশে এসে দাঁড়ালেন শাভেজ। বললেন,”এই দ্বীপটা যতটা শান্ত দেখছেন ততটা শান্ত এ নয়। এই দ্বীপের গভীরে আছে হীরার খনি। আমরা এই দ্বীপটা দখল করে নিজেদের বেসক্যাম্প বসাতে গিয়েই ব্যাপারটা লক্ষ্য করি। সরকারের কাছে খবর পাঠাই। কিন্তু সেই কোড সরকারের কাছ থেকে কোনও উত্তর পেলাম না।
দিনের পর দিন যায়, যুদ্ধও শেষ হয়ে আসে। জেনারেল তোজো আত্মসমর্পণ করেছেন বলে খবর আসে। আমরাও বাড়ি ফেরার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকি।
কিন্তু বাড়ি ফেরা হল না। একদিন সকালে গোটা দ্বীপ ছেয়ে গেল বিষাক্ত গ্যাসে। কি সুমিষ্ট গন্ধ সেই গ্যাসের। “
ইসুকি বিস্ময়ের সঙ্গে বলল,”আমরাও তো দ্বীপে এসেই এই গন্ধ পেয়েছি।”
শাভেজ বলল,”ঠিকই বলেছেন। এটা একটা বিষাক্ত গ্যাস। গোটা দ্বীপে ছড়িয়ে আছে। প্রথমে হ্যালুসিনেশন ঘটায, পরে মানসিক বৈকল্য। মৃত্যুও ঘটতে পারে। এই গ্যাসের প্রভাবে ভুলভাল দেখতে থাকলাম সবাই। চারদিকে শুধুই বিভীষিকা। যে যেখানে ছিলাম অচেতন হয়ে পড়ে গেলাম সেখানেই।
অজানা কে জানা । সত্যি যেন পড়ে সিনেমা দেখছি ।খুব ভাল লেখা।
অসংখ্য ধন্যবাদ