Recent Post

কেরিয়ার গাইড(১ম পর্ব): – অংশুমান বন্দ্যোপাধ্যায়

কেরিয়ার গাইড(১ম পর্ব): – অংশুমান বন্দ্যোপাধ্যায়

যেকোনো বিষয়ে কেরিয়ার তৈরির সঠিক সময় হল অষ্টম-নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়। ওই সময় থেকেই পড়ার বিষয়গুলির মধ্যে আসতে থাকে একদম গোড়ার বিদ্যাগুলি, পদার্থবিদ্যা বা ফিজ়িক্স, রসায়ন বা কেমিস্ট্রি, জীবন বিজ্ঞান/জীববিদ্যা বা লাইফ সায়েন্স/বায়োলজি এবং গণিত বা ম্যাথমেটিক্স। কিন্তু এগুলির প্রতি জোর দিতে গিয়ে ভাষা বিষয়গুলি হালকা ভাবে নিলে হবে না, কারণ ভবিষ্যতে মূল কাজ হবে যেসব বিদ্যা, তার প্রধান স্তম্ভ হবে যোগাযোগ, যা ভাষার ভালোরকম দখল না-থাকলে সম্ভব নয়। মনে রাখবেন আপনাকে ঠিক করতে হবে কোন বিষয় নিয়ে আপনি এগোতে চান, একাদশ শ্রেণি অবধি আপনার কাছে সময় থাকবে বিষয় নির্বাচন করার জন্য। মুখস্থ না করে বিষয়টা আগে ভালো করে বুঝুন, কিছু সুত্র(ফর্মুলা), কিছু জিনিস আপনি সারাজীবন ব্যবহার করবেন, সুতরাং এগুলি ভালো করে বুঝে মাথায় গেঁথে ফেলুন। আজকের গুগল-ইন্টারনেটের যুগে ভালো করে খোঁজ নিন, যে বিষয় নিয়ে এগোতে চাইছেন, তাতে এগোনোর সুবিধা কতদূর, এবং কেরিয়ার গড়ার সুযোগ-সুবিধা কীরকম, সমস্তই পাবেন ইন্টারনেটে।

আজ আমরা কিছু অপরিচিত ও কিছু একদমই নতুন বিষয় জানাব, যা আজকের দিনে কেরিয়ার গড়ার জন্য উপযুক্ত এবং ভবিষ্যতে যার চাহিদা আরও বাড়বে বলে আমার ধারণা।

১। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (সংক্ষেপে এ.আই.)

    ভবিষ্যতের প্রযুক্তি হিসেবে বিজ্ঞানীরা এই এ.আই.-এর পক্ষেই মত দিচ্ছেন। ইমেজ রেকগনিশন বা ছবি চিনতে পারা, ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং বা ভাষা বুঝতে পারা, এবং অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎবাণী করা ইতিমধ্যেই সম্ভব হয়েছে। গুগল গ্লাস বা স্ক্যান করে লেখাকে ডিজিট্যাল ভার্সনে রূপান্তর ইমেজ রেকগনিশনের উদাহরণ, আমাদের মোবাইল বা অন্যান্য যন্ত্রে থাকা এ.আই. সফটওয়্যার ভাষা বুঝে কাজে সাহায্য করতে পারে। অ্যাপল-এর সিরি, আমাজন-এর আলেক্সা, গুগল-এর গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট, উইন্ডোজ়-এর করটানা বা অন্যান্য কোম্পানির তৈরি রবিন বা জারভিস এগুলির উদাহরণ।

এ.আই. নিয়ে পড়তে গেলে কম্পিউটার সায়েন্স বা ইনফর্মেশন টেকনোলজি নিয়ে পড়তে হবে। স্নাতক বা গ্রাজুয়েশনের পর উচ্চশিক্ষায় সুযোগ পাবেন এ.আই. নিয়ে পড়ার। এছাড়া বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ.আই.-এর উপর ডিপ্লোমাও দেয়। মনে রাখবেন, আপনাকে কিছুটা প্রাথমিক কম্পিউটার কোডিং শিখে তবেই এই বিভাগে পা বাড়াতে হবে।

সংক্ষেপ:

ন্যূনতম যোগ্যতা:- স্নাতক বা গ্রাজুয়েশন, জানতেই হবে কম্পিউটার কোডিং,

পড়াশোনা:- গ্রাজুয়েশন, মাস্টার্স বা ডিপ্লোমা, 

চাকরির সুযোগ:- সমস্ত বড় প্রযুক্তি নির্ভর প্রতিষ্ঠানই আজ এ.আই. নিয়ে কাজ করছে, ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।

২। তথ্যবিজ্ঞানী বা ডেটা সায়েন্টিস্ট

     মাইক্রোসফট-এর প্রকৌশলী ডেভ কপলিন বলেছেন—তথ্য বা ডেটা হল ভবিষ্যতের জ্বালানী। আপনি যদি অ্যামাজ়ন বা ফ্লিপকার্ট-এর মতো ওয়েবসাইটে কেনাকাটায় অভ্যস্ত হন, দেখবেন আপনি যে ধরনের জিনিস ভালবাসেন বা খুঁজে দেখেছেন ওয়েবসাইট সেই জিনিস বা সেগুলির মতই কোন জিনিস আপনাকে দেখাতে থাকে। একে বলে অ্যালগরিথম, এর মাধ্যমে ওয়েবসাইট-এর এ.আই. আপনার ব্যবহৃত জিনিস বা আপনি যা খুঁজছেন সেটা বুঝতে পারে এবং সেইমতো আপনাকে অন্যান্য জিনিসের পরামর্শ দিতে থাকে, যাকে বলে সাজেশন এরিয়া। ই-কমার্স(অ্যামাজ়ন, ফ্লিপকার্ট, মিন্ত্রা, বেওকুফ), সোস্যাল মিডিয়া(ফেসবুক, হোয়াটস্যাপ, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম), অপারেটিং সিস্টেম (গুগল, অ্যাপল, উইন্ডোজ়, ব্ল্যাকবেরি)-এর মতো  প্রতিষ্ঠানগুলি হাজার হাজার টেরাবাইট (১০২৪ গিগাবাইট = ১ টেরাবাইট বা টিবি) তথ্য প্রতিদিন সংগ্রহ করে এবং সংরক্ষিত করে।

এই অফুরন্ত অমূল্য তথ্যভাণ্ডারকে সঠিক ভাবে সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং ব্যবহার করার উপযোগী করতে প্রয়োজন হয় তথ্য বিজ্ঞানীদের। মাঝারি থেকে বড় সমস্ত প্রতিষ্ঠান আজ এই তথ্য বিজ্ঞানীদের নিয়োগ করছে এবং ভবিষ্যতে তা আরও বাড়বে।

ডেটা সায়েন্স নিয়ে এগোতে হলে দ্বাদশ শ্রেণী পাস করার পর ডিপ্লোমা করা যেতে পারে, এছাড়া ইঞ্জিনিয়ারিং এর স্নাতক বা স্নাতকোত্তর বিভাগে এ নিয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। এবার এই বিষয়ের একটি অসুবিধা হল বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই এক-একটি বিশেষ ডেটা প্রসেসিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে, এর ফলে আপনি সেই সফটওয়্যারটির ব্যবহার শিখে যদি সেই প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে না-পান, বা কিছুদিন কাজ করার পর অন্য বড় প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার ইচ্ছে রাখেন, তাহলে কিন্তু আপনার কাছে খুব বেশি সুযোগ থাকবে না। তাই ভেবে পা দিন। তবে এই বিভাগে উপযুক্ত লোকের অভাবে এতই মাইনে পাওয়া যায়, হয়ত আপনি ছাড়তেই চাইবেন না।

সংক্ষেপ:

ন্যুনতম যোগ্যতা:- দ্বাদশ শ্রেণী, পড়াশোনা- গ্রাজুয়েশন, মাস্টার্স বা ডিপ্লোমা, 

চাকরির সুযোগ:- সমস্ত বড় বা মাঝারি প্রতিষ্ঠানেই আজ তথ্যবিজ্ঞানীরা কাজ করছেন, ভবিষ্যতে এর সংখ্যা আরও বাড়বে। 

মনে রাখবেন:- বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান এক-একটি বিশেষ ডেটা প্রসেসিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে।

(ক্রমশ)

Author

  • অংশুমান বন্দ্যোপাধ্যায়

    লেখক অংশুমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৯৮ সালে পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়ায়, পড়াশোনা শুরু বীরভূম জেলার শ্রীনিকেতনের সন্তোষ পাঠশালায়। তারপর বাকি স্কুলজীবনের কিছুটা অতিবাহিত হয় মুর্শিদাবাদে, বাকিটা হাওড়াতে। এরপর অ্যাডামাস ইন্সটিটিউট থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ গ্র‍্যাজুয়েশন। তাঁর কথায়, "এত জায়গায় ঘোরার ফলে আজকাল এক জায়গায় বেশিদিন মন টেকে না।" বর্তমানে তিনি হিউম্যান রিসোর্স এক্সিকিউটিভ হিসেবে আমেরিকান রিক্রুটমেন্টে যুক্ত আছেন। অংশুমান বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কর্মব্যস্ততার ফাঁকে ব‌ই পড়া, ভিডিও গেমিং, ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র নিয়ে ডুবে থাকতে ভালোবাসেন। এছাড়াও তিনি ভীষণভাবে ফুটবলের ভক্ত। দুনিয়ার বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে মিশতে ও তাঁদের সঙ্গে পরিচিত হতে চান তরুণ লেখক অংশুমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর লেখালেখি শুরু হয় ছোটবেলাতেই। স্কুলজীবনের দাদা-বন্ধুদের দেখাদেখি উৎসাহিত হয়ে কবিতা ও গল্প লেখায় হাতেখড়ি হয়। পরে স্কুল-পত্রিকা, মামার বাড়ির ক্লাবপত্রিকা এসবে টুকটাক লিখতে লিখতে এখন ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়াতেও লেখালেখির চর্চা চলছে। বিভিন্ন গ্রুপ-পেজেও প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা ফিচার-ছোটগল্প। বর্তমানে নবতরু ই-পত্রিকায় তাঁর লেখা বিভিন্ন মৌলিক রচনা প্রকাশিত হচ্ছে নিয়মিতভাবে।

3 thoughts on “কেরিয়ার গাইড(১ম পর্ব): – অংশুমান বন্দ্যোপাধ্যায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

গ্রাম্য বধূ: তৃষিতা ঘটক
বিবিধ কচিপাতা ছবি / ফটোগ্রাফি

গ্রাম্য বধূ: তৃষিতা ঘটক

    গ্রাম্য বধূ: তৃষিতা ঘটক(পঞ্চম শ্রেণি); শ্রীখণ্ড ঊষাঙ্গিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়; পূর্ব বর্ধমান

    বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
    বিবিধ অক্টোবর ২০২১,পূজা সংখ্যা

    ঘরকন্না: বরুণ মুখোপাধ্যায়

      বছর ৩২-এর গৃহবধূ সায়ন্তী। কলকাতার এক ফ্ল্যাট বাড়িতে স্বামী কন্যা নিয়ে তিনজনের সংসার। স্বামী সঞ্জয়ের অফিস, মেয়ের অনলাইন ক্লাস

      বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
      অতীত-Nabataru-e-patrika
      কবিতা / ছড়া ২০২১ সেপ্টেম্বর

      অতীত: প্রীতম বন্দ্যোপাধ্যায়

        যা ছিল সমুদ্রের গভীরে তাকে হাতছানি বলে মনে হয়নি,
        দিনের আলো যখন কৃষ্ণচূড়াকে ডেকেছিল,

        বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন