কায়দারা এবং নইকিদেবী: দীপ্তেশ চট্টোপাধ্যায়
ঐতিহাসিক পটভূমিকায় ঘটনাক্রমের এবং কালচক্রের নির্যাস সময়ের প্রত্যেক ধমনির মধ্যে যে গৌরবময় ইতিহাসের এক বিশুদ্ধ রক্তের জাগ্রত প্রবাহ বহন করে সেই ঐতিহ্যবাহী অতীতকে মানসপটের দর্পনে প্রতিফলিত করে তার স্বাদ আস্বাদন সত্যিই বেশ রোমাঞ্চের।

সময়টা ৯৪০ খ্রিস্টাব্দের দিকে। গুজরাটের বর্তমান পাটন শহরে ছাবদা বংশের তথাকথিত শেষ রাজা সামান্তাসিমহার ভাতুষ্পুত্র মূলারাজা তাঁকে উচ্ছেদ করে প্রতিষ্ঠা করেন চালুক্য বংশের। এই চালুক্য ইতিহাসে সোলাঙ্কি রাজপুত নামেও পরিচিত যা অগ্নিকুল রাজপুতদের এক শাখা। উল্লেখ্য, রাজস্থানের বিখ্যাত দিলওয়ারা জৈন মন্দির এদেরই অবদান। যাইহোক মূলারাজার পর চামুন্দারাজা, বল্লভরাজা, প্রথম ভীম প্রমুখের প্রশাসনিক দক্ষতা আর সুদক্ষ বুদ্ধিমত্তায় পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন স্থানে তাঁদের সাম্রাজ্যের শাসন প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। এখন কাহিনির মূল আলোচ্য চালুক্য বংশের নবম শাসক অজয়পালের বীরাঙ্গনা স্ত্রী নইকিদেবী। তাঁর অসামান্য, অপরাজেয় বীরত্বের অনুরণন আজও ইতিহাসের প্রতি পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় জীবন্ত। ঘটনাচক্র উল্লেখ না থাকলে ইতিহাসের সবটুকু যেহেতু পরিপুর্ণ হয় না তাই সময়ের ধারাকে উহ্য না রেখেই আলোকপাত করার চেষ্টা করলাম। এবার সময়টা ১১৭৫ খ্রিস্টাব্দ। সেই সময়ের ত্রাস আফগান প্রদেশের ঘুর অঞ্চলের শাসক মুইজুদ্দিন মহম্মদ বিন সাম্ বা মহম্মদ ঘুরি একে একে মুলতান, সিন্ধু প্রদেশ দখল করে ক্রমশ ধেয়ে আসতে লাগলেন গুজরাটের দিকে। সমস্ত ছোট ছোট প্রদেশ তাঁর বশ্যতা স্বীকার করে নিতে লাগল।ৎঅপরাজেয় ঘুরির রণহুঙ্কারে কেঁপে উঠতে লাগল আকাশ বাতাস সবকিছু। আশঙ্কার নিকশ কালো মেঘে ছেয়ে গেল ভারতের পশ্চিমী প্রদেশ গুজরাট। আঁধার নেমে এল চালুক্য রাজমহলে। রাজা অজয়পালের মৃত্যুর পর তার ১৩ বছরের কিশোর বালক সিংহাসনে অভিসিক্ত হয়েছেন সদ্য। সে কী করে এই রাজ্যকে রক্ষা করবে? প্রজাদের মধ্যে দেশ ছাড়ার হিড়িক পরে গেল। চারিদিকে এক ভয়ার্ত বিভীষিকার বাতাবরণে আতঙ্কের হাহাকার। অন্যদিকে অজয়পালের নাবালক পুত্র দ্বিতীয় মুলারাজার অভিভাবক রূপে সুদক্ষভাবে রাজ্য পরিচালনা করছেন তাঁর মা রানি নইকিদেবী। নির্ভীক এবং আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান এক চরিত্র। সরাজ্য রক্ষার্থে সে কৃতসংকল্প এবং বদ্ধপরিকর। সেনাবাহিনীকে তিনি নির্দেশ দিলেন প্রস্তুত থাকতে এবং সদা সতর্ক থাকতে।
বছর ঘুরলে পর ১১৭৮ খ্রিস্টাব্দে মরুপ্রদেশ পেরিয়ে মহাশক্তিধর ঘুরির বাহিনী এসে উপস্তিত হল সোলাঙ্কি রাজধানী পাটনে। মাউন্ট আবুর কোলে কায়দারা নামক স্থানে মুখমুখি হল দুই পক্ষ। রানি নইকিদেবীর বাহিনী প্রবলতর পরাক্রমের হুঙ্কার দিয়ে উঠল। দুই পক্ষের ঘোড় সওয়ার, পদাতিক বাহিনী থেকে শুরু করে হস্তিবাহিনী রণধ্বজা উত্তোলন করল। শুরু হল এক অসম যুদ্ধ যা ইতিহাসে কায়াদারার যুদ্ধ নামেই সুপরিচিতি। একদিকে ঘুরির বিরাট সুসজ্জিত, সংগঠিত সেনাবাহিনী আর অন্যদিকে বীরাঙ্গনা নইকিদেবীর বুদ্ধিমত্তা, সাহস, হার না মানা এক সংকল্প। চলতে লাগল ঐতিহ্যবাহী এক সংগ্রাম। আর ফলাফল? হ্যাঁ। অপরাজেয় মহম্মদ ঘুরিকে রুখে দিল রানি নইকিদেবী। পরাজয় মানতে বাধ্য করল ঘুরি বাহিনীকে। গুজরাট ভূখণ্ড পরিত্যাগ করে মুলতান প্রদেশের দিকে পিছু হটে গেল তারা। জৈন লেখক মেরুতুঙ্গার ‘চিন্তামনি’ প্রবন্ধে আমরা রানির বীরত্বের কাহিনি পাই।
সেদিন সেই যুদ্ধে জয় হয়েছিল দেশেভূমির প্রতি অদম্য ভালোবাসার, জয় হয়েছিল অপরিসীম সাহস এবং সর্বোপরি নারীশক্তির যা আজও ইতিহাসের
মণিকোঠায় উজ্জ্বল ধ্রুবতারার মতোই আগামীর জন্য দিকনির্দেশ করে চলেছে।
ভালো হয়েছে, তবে শুরু হয়েই যেন শেষ হয়ে গেল, আর একটু বড়ো হলে ভালো হতো।
ভালো হয়েছে, তবে শুরু হয়েই যেন শেষ হয়ে গেল, আর একটু বড়ো হলে ভালো হতো।
ভালো হয়েছে, তবে শুরু হয়েই যেন শেষ হয়ে গেল, আর একটু বড়ো হলে ভালো হতো।
ভালো হয়েছে, তবে শুরু হয়েই যেন শেষ হয়ে গেল, আর একটু বড়ো হলে ভালো হতো।
ভালো হয়েছে, তবে শুরু হয়েই যেন শেষ হয়ে গেল, আর একটু বড়ো হলে ভালো হতো।
ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে যাওয়া চরিত্র কে লোকসমক্ষে আনার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।