Recent Post

উত্তরে উঁকি – ২

উত্তরে উঁকি-২ – রীতা মুখোপাধ্যায়

প্রথম পর্বটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন

পরদিন রাজধানী শহর দিল্লিতে এসে দেখলাম সুপ্রিম কোর্ট, কুতুব মিনার, রাজভবন, লোটাস টেম্পল, ইন্দিরা গান্ধির বসত বাড়ি প্রভৃতি দর্শনীয় স্থানগুলি। প্রত্যেকটার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানান ইতিহাস, দেশীয় সংস্কৃতি। রাস্তাঘাটও চোখে পড়ার মত। বাড়ির সীমানার বাইরের জগৎটা যে কত আলাদা কত অন্যরকম তা এক আধবার না আসলে বোঝা যায়না।

পরদিন পৌঁছালাম হরিয়ানার কুরুক্ষেত্রে, মহাভারতে বর্ণিত আছে এখানে পাণ্ডবদের সঙ্গে কৌরব বাহিনীর আঠারো দিন ধরে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম হয়েছিল। এখানেই দেখলাম বারোটি মন্দির সঙ্গে ব্রহ্মসাগর, দ্বৈপায়ণ সাগর প্রভৃতি দিঘি, মহাভারতের কাহিনীর নানান মডেল প্রভৃতি।

কুরুক্ষেত্রের পর এলাম উত্তরাখণ্ডের এক প্রাচীন শহর হরিদ্বারে। স্থানীয় ভাষায় একে হরদ্বারও বলে। কিংবদন্তী অনুযায়ী এখানেই দেবী গঙ্গা ভগবান শিবের মস্তক থেকে মুক্তি পেয়ে পৃথিবীতে নেমে এসেছিলেন। এখানকার ‘হর-কি-পৌরি’ ঘাটে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময় হাজারো পুণ্যার্থীর ভিড়ে আরতি দেখবার মতো। কথিত আছে এখানে স্নান করলে সব পাপ থেকে নাকি মুক্ত হওয়া যায়। এছাড়া আছে তিন হাজার ফুট উঁচু এক মনসাদেবীর মন্দির যেখানে উঠলাম দুশো ষাটটা সিঁড়ি বেয়ে, সে এক আশ্চর্য অনুভূতি। সবমিলিয়ে হরিদ্বারের গঙ্গাস্নান, সন্ধ্যারতি, গঙ্গায় প্রদীপ ভাসানোর ছবিগুলো এখনও স্মৃতির পাতায় উজ্জ্বল হয়ে আছে।

হরিদ্বার থেকে ২০ কিমি উত্তরে গেলাম ভারতবর্ষের শান্ত এক শৈলশহর হৃষিকেশে। যা হিমালয়ের পাদদেশে গঙ্গা ও চন্দ্রভাগা নদীর সংলগ্ন বরাবর অবস্থিত। প্রাচীন মন্দির ও যোগাশ্রমের জন্য এই স্থানের খ্যাতি আছে। আমরা দেখলাম গঙ্গা নদীর উপর অবস্থিত ঝুলন্ত দুটি সেতু রামঝুলা ও লক্ষ্মণঝুলা। ওখান থেকে আমরা স্থানীয় বাস ভাড়া করে গেলাম ৮০ কিমি উত্তর-পশ্চিমে উত্তরাখণ্ডের অন্যতম শৈলশহর মুসৌরিতে। এই জায়গার উচ্চতা প্রায় সাড়ে তিন হাজার ফুট। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঠাসা এই জায়গাটি যে কোনও পর্যটকের অত্যন্ত পছন্দের জায়গা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। চারিদিকে সবুজের সমারোহে পাহাড়ি ঝরণার নয়নাভিরাম দৃশ্য সহজেই চোখ জুড়িয়ে যায়। এরপর কঙ্খল ঘুরে এলাম, সেখানে দেখলাম দক্ষরাজের যজ্ঞকুণ্ড যেখানে তার কন্যা শিবজায়া সতীর দেহত্যাগের স্থল। এখানকার রুদ্রাক্ষ বেশ ভালো, কিছু সংগ্রহে রাখলাম। এইস্থানগুলিতে ভ্রমণের আরও অনেক মনোরম এবং দর্শনীয়  জায়গা থাকলেও সময়ের অভাবে সব দেখা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

এরপর আমরা এলাম হিন্দুদের অন্যতম পবিত্রভূমি হিসাবে চিহ্নিত প্রাচীন জনপদ উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায়। এখানে ইসলাম ধর্মের স্থাপত্য বাবরি মসজিদের ভগ্নাংশবিশেষও চোখে পড়ল। এখানকার সরযূ নদীর তীরে ভ্রমণের সময় রাম লক্ষ্মণের দেহত্যাগের কথাও মনে এল। এরপর কাশীতে বাবা বিশ্বনাথ দর্শন, মণিকর্ণিকা ঘাটে গঙ্গাস্নান ছাড়াও বিভিন্ন মন্দির ঘুরে দেখার সৌভাগ্য হল। বেনারসের সুবিখ্যাত পান এবং প্যাঁড়ার কথা না বললে হয়ত অসম্পূর্ণ থেকে যাবে তাই এই দুটিরও আস্বাদ আমরা গ্রহণ করেছিলাম এ কথা বলাই বাহুল্য। 

এরপর ফিরে আসার পালা, কয়েকটা দিনে এই অচেনা সহযাত্রীরা কখন যে খুব চেনা হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না। সাংসারিক নানান ব্যস্ততার ভিড়ে খুব একটা দূরে বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ হয়নি বিশেষ, তাই ছেলে বউমাদের উপর সংসারের ভার দিয়ে এই কয়েকদিন বেশ উপভোগ করা গেল। অনেকদিন বাড়ির বাইরে থেকে যেমন ভালোও লাগছিল তেমনি প্রিয়জনদের দেখার জন্য মনটা ছটফটও করছিল। সংসার জীবনের কর্মব্যস্ততায় আবার ডুবে যাব ঠিকই কিন্তু বাঁচার কিছুটা বিশুদ্ধ অক্সিজেন বুক ভরে নিয়ে এলাম বইকি। এটাও তো কম প্রাপ্তি নয়!

Author

  • Barun@Mukherjee

    নবতরু ই-পত্রিকার সম্পাদক বরুণ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৮৪ সালে। বীরভূম জেলার নানুর থানার শ্রীকৃষ্ণপুরের গ্রামের বাড়িতেই বড়ো হয়ে ওঠেন। আবাসিক ছাত্র হিসাবে বিদ্যালয় জীবন অতিবাহিত করেন বিশ্বভারতীর পাঠভবন ও উত্তর শিক্ষা সদনে। বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ বরুণ মুখোপাধ্যায় বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত আছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি ভালোবাসেন লেখালেখি করতে। এছাড়াও সাংস্কৃতিক চর্চা ও সৃজনশীল কাজকর্মের মধ্যে নিজেকে সর্বদা যুক্ত রাখেন। নতুন ছেলেমেয়েদের মধ্যে সাহিত্য সৃষ্টির উন্মেষ ঘটানোর জন্যই দায়িত্ব নিয়েছেন নবতরু ই-পত্রিকা সম্পাদনার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ভ্রমণ কাহিনি

স্বপ্ন উড়ান(৩য় পর্ব, ইউরোপ ভ্রমণ,প্যারিস): তুলি মুখোপাধ্যায় চক্রবর্তী

    শেন নদীর দুপারে ২০টি জেলা এবং জনবসতি নিয়ে অবস্থিত প্যারিস। ছবির মতোই সুন্দর প্যারিস। ক্রিস্টাল-ক্লিয়ার নীল জল আর আকাশ।

    বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
    ভ্রমণ কাহিনি

    স্বপ্ন উড়ান(২য় পর্ব:লন্ডন ভ্রমণের দ্বিতীয় দিন): তুলি মুখোপাধ্যায় চক্রবর্তী

      গুড বাই লন্ডন বলে সবাই রওনা দিলাম। যাত্রাপথের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখতে দেখতে। ইউকে’র ভিসা আলাদা। পুরো ইউরোপের সেনজেন ভিসা। এবার আবার লাইনে দাঁড়াতে হল। যে ভিসা নিয়ে ইউকে ঢুকেছি তা চলবে না। এক লম্বা লাইনে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেল ছাড়া পেতে। ক্রুজে ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে ঢুকব প্যারিস।

      বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
      ভ্রমণ কাহিনি

      স্বপ্ন উড়ান(কলকাতা-দুবাই-হিথরো): তুলি মুখোপাধ্যায় চক্রবর্তী

        স্বপ্নের জাল বোনা শুরু হয়েছিল কয়েকমাস আগেই। নির্ধারিত দিনে পৌঁছে গেলাম নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। অন্তর্দেশীয় উড়ানে বহুবার সফর করেছি কিন্তু দেশের বাইরে দ্বিতীয় বার। এবার দুবাই হয়ে লন্ডন।

        বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন