Recent Post

উত্তরে উঁকি(১ম পর্ব)

উত্তরে উঁকি(১ম পর্ব) – রীতা মুখোপাধ্যায়

আজ যখন করোনা পরিস্থিতিতে সকলেই প্রায় গৃহবন্দি তখন স্মৃতির ঝুলি থেকে ভ্রমণকাহিনী বের করে সকলের মন ভালো করার একটু চেষ্টা করছি।

সাংসারিক ব্যস্ততার মাঝে একটু খোলা হাওয়ার প্রয়োজন আছে সকলেরই। আর বয়স্ক মানুষ হলে তো আরও। স্বামীর কর্মজীবনের ব্যস্ততার কারণে তা হয়ে না উঠলেও তাঁর অবসর গ্রহণের পর হঠাৎ করে এই সুযোগ সামনে আসে। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে মনোরম আবহাওয়ায় স্থানীয় এক ভ্রমণ সংস্থার বাসে উঠে বসলাম আমরা দুজনে। ১৬ দিনের এই ভ্রমণে আমাদের গন্তব্যস্থল উত্তর ভারত তাই একইসঙ্গে ভ্রমণ এবং দেবদর্শন দুটি উদ্দেশ্যেই রওনা হলাম। “পতির পুণ্যে সতীর পুণ্য” এই আপ্তবাক্যটি আমার পতিদেব মনে হয় মানেননি তাই একসঙ্গেই বেড়িয়ে পড়ার সুযোগ হল। যাইহোক বাংলার ১৫ ই ফাল্গুন  আমাদের যাত্রাপথ শুরু হল। একবাস সহযাত্রীদের সঙ্গে কয়েকটা দিনরাত একসাথে গল্পগুজব, থাকা, খাওয়া ইত্যাদি করতে পারব ভেবে খুব ভালো লাগছিল।

পড়ন্ত বিকালে বাসন্তী সূর্যকে সাক্ষী রেখে আমরাও অনেক বয়স্ক যাত্রী মিলে বাসের জানলার ফাঁক দিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে দুর্গাপুর, বিষ্ণুপুর পেরিয়ে ভোরবেলা বিহারের গয়াধামে গিয়ে পৌঁছালাম। সেখানে অন্তঃসলিলা ফল্গুনদীবক্ষে হাঁটলাম, পুরাণে কথিত আছে এখানে সীতাদেবী মৃত রাজা দশরথের উদ্দেশ্যে পিণ্ডদান করেছিলেন। এর পাশাপাশি দেখলাম দশরথের মন্দির, হনুমান মন্দির, বটবৃক্ষ ইত্যাদি। এরপর আমাদের গন্তব্য উত্তর প্রদেশের প্রয়াগ, যেখানে প্রতি বারো বছর অন্তর হয় বিখ্যাত কুম্ভমেলা। এখানেই তিনটি নদী যথাক্রমে গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতীর মিলনস্থল। আমরা নৌকায় চেপে নির্দিষ্ট জায়গায় স্নান করে ফিরলাম। তারপর দর্শন করলাম হনুমান মন্দির, সূর্যমন্দির, রামসীতা মন্দির প্রভৃতি। এখানে মীনাবাজারে আমাদের বাস দাঁড়িয়েছিল তাই আমরা ওখানেই খাওয়াদাওয়া পর্ব সেরে নিলাম। চোখে পড়ছিল বিভিন্ন বেশধারী সাধুসন্তদের। ওখান থেকে এলাহাবাদে পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি এবং মিউজিয়াম ঘুরে পরদিন আমরা দুপুরে পৌঁছালাম পৃথিবীর অন্যতম দর্শনীয় এক স্থানে যেখানকার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পৃথিবীর প্রায় সব দেশ থেকেই পর্যটক আসেন সারা বছর ধরে। মোঘল সম্রাট সাহজাহান তাঁর প্রিয়তমা পত্নী মুমতাজের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই আগ্রায় স্থাপন করেছেন সুদৃশ্য তাজমহল। মার্বেল পাথরের অসাধারণ সব কারুকার্য এই প্রথম চাক্ষুষ করলাম। লোভ সংবরণ করতে না পেরে লোক ডেকে কয়েকটা ছবিও তুলিয়ে নিয়েছিলাম। পার্শ্বস্থ যমুনা নদীর শোভা দেখে বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে পরবর্তী গন্তব্য মথুরার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম, সেখানে দেখলাম শ্রীকৃষ্ণের পিতামাতাকে আটকে রাখা কংসের কারাগার, শ্রীকৃষ্ণ মন্দির ইত্যাদি।

এবার আমাদের বাস ছেড়ে দিল বৃন্দাবনের উদ্দেশ্যে। বৃন্দাবনের এক ধর্মশালায় আমরা রাত্রিবাস করে তার পরদিন সকালে দোলপূর্ণিমার পুণ্যতিথিতে বৃন্দাবনের রূপ রস চাক্ষুষ করার ইচ্ছায় রাস্তায় বেরিয়ে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে মূলমন্দিরে প্রবেশ করলাম। সেখানে আমাদের সঙ্গে ছিলেন অনেক বিদেশি পর্যটকও। এখানে আমরা ছিলাম গুরুকূল আশ্রমে। পরদিন বহু পর্যটকের সমাগমে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবার আশঙ্কায় স্থানীয় মানুষজন আমাদের বাইরে যেতে নিষেধ করছিলেন। কিন্তু আমরা ভ্রমণের অমোঘ টানে নিষেধ অমান্য করেই বেরিয়েছিলাম বৃন্দাবনের পথে পথে। বাঁদরের অত্যাচার সহ্য করেই আমরা দেখলাম মধুবনে রাধাকৃষ্ণের রাসলীলার নানান মুহূর্ত, রাসমঞ্চ, নিধুবন, কুঞ্জবন, প্রেম মন্দির, গিরিগোবর্ধন প্রভৃতি। এখানে আমরা হরিনাম সংকীর্তনের সঙ্গে হোলিখেলায় অংশগ্রহণ করলাম। পরদিন গেলাম যমুনাতীরে যেখানে রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা বিষয়ক অনেক গল্পই আমাদের জানা। রীতি অনুযায়ী সেখানে এক তমাল গাছে আমরা কাপড় জড়িয়ে শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে যমুনার কালো জলে অবগাহন করে এলাম।

(ক্রমশ)

Author

  • Barun@Mukherjee

    নবতরু ই-পত্রিকার সম্পাদক বরুণ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৮৪ সালে। বীরভূম জেলার নানুর থানার শ্রীকৃষ্ণপুরের গ্রামের বাড়িতেই বড়ো হয়ে ওঠেন। আবাসিক ছাত্র হিসাবে বিদ্যালয় জীবন অতিবাহিত করেন বিশ্বভারতীর পাঠভবন ও উত্তর শিক্ষা সদনে। বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ বরুণ মুখোপাধ্যায় বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত আছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি ভালোবাসেন লেখালেখি করতে। এছাড়াও সাংস্কৃতিক চর্চা ও সৃজনশীল কাজকর্মের মধ্যে নিজেকে সর্বদা যুক্ত রাখেন। নতুন ছেলেমেয়েদের মধ্যে সাহিত্য সৃষ্টির উন্মেষ ঘটানোর জন্যই দায়িত্ব নিয়েছেন নবতরু ই-পত্রিকা সম্পাদনার।

2 thoughts on “উত্তরে উঁকি(১ম পর্ব)

  1. খুব সুন্দর লেখা।এই প্রাঞ্জল ভ্রমণবৃতান্ত এক চিলতে ভ্রমণ সুখ এনে দিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আয়নাবন্দি: জিৎ সরকার (১/১২ পর্ব)
গদ্য- সাহিত্য গল্প ধারাবাহিক গল্প

আয়নাবন্দি: জিৎ সরকার

    গাড়িটা যখন বড়ো গেটের সামনে এসে দাঁড়াল তখন শেষ বিকেলের সূর্য পশ্চিমাকাশে রক্তাভা ছড়িয়ে সেদিনকার মতো সন্ধ্যেকে আলিঙ্গন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

    বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
    শৈশবের গরমকাল: ঈশিতা পাল
    গদ্য- সাহিত্য স্মৃতিকথা

    শৈশবের গরমকাল: ঈশিতা পাল

      আমার শৈশব ভাড়াবাড়িতে। তাই গরমের ছুটিতে কাকু, জেঠুদের বাড়ি টানা একমাস ছুটি কাটাতে যেতাম। মামাবাড়িও যেতাম। ছেলেবেলার গরমকাল জুড়ে বেশ কিছু মজার স্মৃতি আছে

      বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
      চাদিফাঁটা আমার সেকাল: বন্দে বন্দিশ
      গদ্য- সাহিত্য স্মৃতিকথা

      চাঁদিফাটা আমার সেকাল: বন্দে বন্দিশ

        মনে পড়ে যায় ছেলেবেলার সেইসব দিন, প্রচন্ড গরম থেকে স্বস্থির আরাম

        বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন