ইতিহাসের পাতা থেকে বলছি(১ম পর্ব)-প্রাপ্তি চট্টোপাধ্যায়
সালটা ছিল ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দ, আমাদের বাংলাতে এলেন মুর্শিদকুলি খান। ইনিই সেই যাঁর নামে আজ মুর্শিদাবাদ নামক শহরটি দাঁড়িয়ে আছে অনেক ইতিহাসকে সাক্ষী রেখে। তাই আজ খোসবাগ-এর সামনে দাঁড়িয়ে মনে পড়ছে আজ থেকে ২৬৩ বছর আগে ঘটে যাওয়া সেই বিশ্বাসঘাতকতার গল্প, তবে গল্প না বলে সত্যি বলাই ভালো। সময়টা ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দ নবাব সিরাজ এর বেঁচে থাকার সমস্ত রাস্তা বন্ধ। তিনি জানেন আগামিকাল অর্থাৎ ২৩ জুন, মাত্র ২৪ বছর বয়সেই তাঁর জীবনের প্রদীপ নিভে যাবে, তাঁর এই সাধের বাংলা চলে যাবে বেনিয়াদের দখলে, ডুবে যাবে বাংলার শেষ স্বাধীনতার সূর্য। আজকেও তারিখটা ২৩ জুন আর আমি দাঁড়িয়ে আছি নবাব এর সামাধির সামনে চোখের সামনে যেন দেখতে পাচ্ছি সেই পলাশির প্রান্তরের করুন ইতিহাস। আজ সেই কথাটাকেই সত্যি বলে মনে হচ্ছে- ‘ইতিহাস যেন বার বার ফিরে ফিরে আসে।’ নবাব এর পাশেই চিরতরে শায়িত রয়েছেন তার প্রিয়তমা বেগম লুৎফা আর প্রানের দাদু নবাব আলিবর্দি খান।

বৃদ্ধ নবাব যখন মৃত্যুমুখে শায়িত তখন তাঁর সেনাবাহিনীর প্রধান ও অন্যতম বিশ্বস্ত সেনাপতি মীরজাফর আলি খান শপথ নিয়েছিলেন ইংরেজদের হাত থেকে তিনি এই বাংলা রক্ষা করবেন শেষ রক্ত বিন্দু পর্যন্ত। কিন্তু কথা রাখেননি তিনি। ক্ষমতার লালসায় ইংরেজদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নবাবের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেন। যার ফল ভুগতে হয়েছিল গোটা দেশ কে। ২০০ বছরের জন্য আমাদের এই স্বাধীন ভারত পরিণত হয়েছিল পরাধীন ভারতে। এই কলঙ্কিত বিশ্বাসঘাতকতার অধ্যায় ইতিহাস আজও ভোলেনি। লোকমুখে মীরজাফর আর বিশ্বাসঘাতক সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে।
আজ এই পড়ন্ত বিকেলে ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ের খোসবাগ-এর মায়াময় আবহাওয়ায় এবং ভাগীরথী নদীর শীতল হাওয়াতে মন ক্রমশই ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ছে। সিরাজ এর সাধের হিরাঝিল প্রাসাদকে আজ গ্রাস করেছে ভাগীরথী। শহরের পূর্ব পারে অবস্থান করছে পলাশী চক্রান্তকারীদের প্রধান জায়গা মতিঝিল। কথিত আছে একসময় এই মতিঝিলে নাকি সাদা মুক্তোর চাষ হত, বর্তমানে সেই জলাশয় আগাছাতে ভরে উঠেছে আর আলিবর্দি খান এর জ্যেষ্ঠ তনয়া ঘষেটি বেগমের স্বপ্নের প্রাসাদও কালের নিয়মে আজ বিলীন। এইসবই হয়তো ইতিহাস এর নির্মম পরিহাস। আজকের মুর্শিদাবাদ শহরে এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া, তবু কিছু কিছু স্থান বয়ে নিয়ে চলছে বহুবছরের সেই ইতিহাসের সাক্ষ্য।
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম