ইতিহাসের পাতা থেকে বলছি(২য় পর্ব)- প্রাপ্তি চট্টোপাধ্যায়

প্রথম পর্বটি পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন
ঠিক এই সময় কয়েকটা পাখি ডেকে উঠল মনে পড়ে গেল সালটা ২০২০। কয়েক মুহূর্তের জন্য যেন ফিরে গিয়েছিলাম ২৬৩ বছর আগে। যাইহোক ভাগীরথীর পূর্ব পারে জাফরগঞ্জ-এ রয়েছে সেই বিশ্বাসঘাতক মীরজাফর আর তার পরিবারের ১১০০ জন এর সমাধি। মীরজাফর এর প্রাণের পুত্র মিরন, যার আদেশে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবকে হত্যা করেছিল মহম্মদি বেগ। তবে সেই যে আবারও ইতিহাস তার পিছু ছাড়েনি। নবাব সিরাজের মা আমিনা বেগম পুত্রের মৃত্যু শোকের যন্ত্রনায় কাতর হয়ে অভিশাপ দিয়েছিলেন যেন বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয় মিরনের। কী আশ্চর্য সমাপতন! হয়েছিলও তাই। নিদারুন পুত্র শোকের যন্ত্রণায় ভুগতে হয়েছিল মীরজাফরকেও। এরপর কিছুদিন এর মধ্যেই ইংরেজরা বৃদ্ধ নবাব মীরজাফরকে সরিয়ে দিয়ে তাঁরই জামাতা মিরকাশিমকে বাংলার সিংহাসনে বসিয়েছিলেন। মিরকাশিম ছিলেন স্বাধীন চেতা মানুষ, সিংহাসনে বসার কিছুদিনের মধ্যেই তিনি বুঝতে পারলেন তিনি নামেই বাংলার নবাব, আসলে সব ক্ষমতাই ওই বেনিয়াদের হাতে। শোনা যায় নবাব সিরাজকে ধরিয়ে দিয়েছিলেন এক ফকির তার সাথে মিরকাশিমও ছিলেন। এই মিরকাশিম জানতেন না তাঁর শেষ পরিণতি কী হতে চলেছে। ১৭৬৪ সালে বক্সার এর যুদ্ধে মুঘল সম্রাট শাহ আলম-২, অযোধ্যার নবাব সুজাউদদ্দৌলা এবং মিরকাশিমের মিলিত বন্ধনও হারাতে পারেনি ইংরেজদের। শোনা যায় শেষ বয়সে মিরকাশিম বদ্ধ উন্মাদে পরিণত হয়ে আগ্রার রাস্তায় উদভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়াতেন। ওদিকে নবাব মীরজাফর তার শেষ জীবনে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে জানা যায়।
পড়ে রইল আর কিছু বিশ্বাসঘাতক, এর মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করা যেতে পারে ধনকুবের জগৎশেঠ-র নাম যার প্রাসাদ এখনো মুর্শিদাবাদ শহরে বর্তমান। এই বিশাল ধনকুবেরকে শেষ করেছিলেন মিরকাশিম তাঁর প্রাসাদের ওপর থেকে তাঁকে ছুঁড়ে ফেলে। আর যার কথা না বললে এই লেখা পূর্ণতা পাবে না তিনি হলেন ইতিহাস এর কলঙ্কিত চরিত্র রবার্ট ক্লাইভ, ইনি বাংলা তথা ভারত থেকে এত অর্থ লুঠ করেছিলেন যে ১৭৭২ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট থেকে তাঁর দুর্নীতির তদন্ত শুরু করা হয়, কোনওরকমে এসবের থেকে নিষ্কৃতি পেলেও এত অর্থ থাকা সত্ত্বেও শান্তি পাননি তিনি। অবশেষে নিজের গলায় নিজেই খুর চালিয়ে আত্মহত্যা করেন, হয়তো শেষ জীবনে একটু হলেও আত্মগ্লানিতে ভুগেছিলেন।
আজ এত বছর পরেও ইতিহাসের এই সব চরিত্র যেন চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠেছে, আসলে সময় পাল্টালেও জায়গা তো একই থাকে। এভাবেই কেটে গেছে কত কত যুগ, ধীরে ধীরে শেষ হয়ে গেছে এই মুর্শিদাবাদ শহরের নবাবিয়ানা। কিন্তু আজও ভাগীরথীর পাড় এই মন কেমনের বিকেলে ঠাণ্ডা হাওয়ায় আমার চোখে স্পষ্ট ছাপ ফেলে গেল। হয়ত আমার মতো কোনও একদিন অন্য কোনও একজন দেখতে পাবে সেই নির্মম ইতিহাস যার হাত থেকে ছাড়া পায়না কেউই, হয়তো দেখতে পাবে সেই শেষ দিনের স্বাধীন সূর্য, যা সবে মাত্র তাঁর চোখেও অস্ত গেল।
লেখাটি ভালো হয়েছে।তবে মীরজাফর এর ক্ষেত্রে যেটা হয়েছিল যে “সব পাখি মাছ খায় আর মাছরাঙা-র নাম হয়” ধরণের। বাস্তব হল এরা প্রত্যেকেই এক একজন শয়তান এবং বিশ্বাসঘাতক ছিল কয়েকজন বাদ দিয়ে।
কিছু জানা কিছু অজানা কিংবা ভুলে যাওয়া ইতিহাস পড়লাম। লেখার গুনে মাঝপথে ছেড়ে চলে যাওয়া গেলনা। আশা করি এই ধরণের ইতিহাস আরো আরো পাবো। অভিনন্দন।