আলো-আঁধারি(২য় পর্ব):- বরুণ মুখোপাধ্যায়

প্রথম পর্বটি পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন
সুপ্রিয়ার অসহায়তার কথা ভেবে মন খারাপ হয়ে যায় রক্তিমার, তবুও পুজোর দিনে ওর মুখে হাসি ফোটাবার নানা চেষ্টা করে রক্তিমা। বলে- “হ্যাঁ রে, রাত্রে বর তোকে অনেকক্ষণ জাগিয়ে রাখে নাকি? চোখের তলায় এত ডার্ক-সার্কেল কেন?”
-“তোমার যত বাজে কথা দিদিভাই..ওর আবার জাগিয়ে রাখা? কাগজের হিসাবপত্র সারতে সারতে কখন যে শোয় জানি না, আবার ভোর হতে না হতে দে ছুট।”
“আমাকে তো তোর দাদা…,এই রে, দে একটু নারকেল ছোবড়া, দেখছিস গল্প করতে গিয়ে খেয়াল নেই কখন যে ধুনোটা নিভে গেছে।” প্রসঙ্গ পাল্টায় রক্তিমা।
-“দিদিভাই, দিদিভাই ওঠো ওঠো দেখো কী হল? তোমার আঁচলটা যে ধুনোর আগুনে ঠেকে… জল দাও জল।” বলে নিজের হাত দিয়েই জ্বলন্ত শাড়িটার আগুন নেভাতে থাকে সুপ্রিয়া।
হঠাৎ সকলের অলক্ষ্যে কখন যে শাড়ির আঁচলটায় ধুনোর আগুন এসে পড়েছে তা কেউই টের পায়নি। আগুন নেভাতে গিয়ে সুপ্রিয়ার হাতেও আঁচ লেগেছে, মনটা কেমন যেন খারাপ হয়ে গেল রক্তিমার। এমন কেন হল?
পুজো শেষ হয়ে এলে বাড়ি ফিরল রক্তিমা। সুপ্রিয়াও নিজের বাড়ির অন্তরালে মিলিয়ে গেল আজকের মতো। নিজের মোবাইল থেকে রক্তিমা বরকে ফোন করল, যদিও অপূর্ব এখন খুব ব্যস্ত, আজ বাড়ি ফিরবে তাই কিছু কেনাকাটা করছে নিশ্চয়। সবসময় কাজে ব্যস্ত থাকে বলে দিনের বেলায় ফোন সাধারণত করে না। আর সপ্তাহান্তে না হলেও মাসে দু-একবার আসে বলে দুশ্চিন্তাও তেমন হয় না। কিন্তু ঠাকুর বাড়িতে ওই কান্ডটা ঘটে যাওয়াতে মনটা ভীষণ কূ ডাকছে রক্তিমার।
বারকয়েক রিং করলেও অপূর্ব ফোন না ধরায় সেই ভাবনাটা আরও চেপে ধরল রক্তিমাকে। হঠাৎ কিছুক্ষণ পর হোয়াটসঅ্যাপ-এ অপূর্বর পাঠানো মেসেজ পড়ে নিশ্চিন্ত হল সে। অপূর্ব লিখেছে এখন একটা বিশেষ কাজে ওকে বনগাঁ যেতে হচ্ছে, ফিরতে দেরি হবে। ঠিক কী কাজ করে অপূর্ব তা কেউ জানেনা, তবে নিশ্চয় অনেক বড়ো কোনও কাজ হবে। না হলে এত ব্যস্ততা কিসের। অবশ্য এই নিয়ে কিছু জানতে চাইলেই সে বলে সারাদিন প্রচুর পরিশ্রম করতে হয় তাকে, বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয় কোম্পানীর কাজে। সাধে বস ওকে ভালো নজরে দেখে! আর এই কারণে তার দায়িত্বও অনেক বেশি।
সন্ধে বেলায় সন্ধ্যারতি দেখে দামি গয়নাগুলো যত্ন করে তুলে রাখল ঘরের আলমারির লকারে। শাড়িটা পাল্টে আগের দিনে বরের আনা স্লিভলেস নাইটিটা পরে নিল সে। মোবাইল ফোনটা নিয়ে এপাশ ওপাশ করতে লাগল রক্তিমা। সুপ্রিয়াকে অন্য দিনের মত গুডনাইট উইশ করতে গিয়ে দেখল অলরেডি বেশ কয়েকটা মেসেজ এসে গেছে।
“দিদিভাই, অনেক দিন পর আজ খুব ভালো লাগছে…”
“আজ শাশুড়ি আরতি দেখতে গিয়েছিল আমি রান্না নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, বর কোথা থেকে এসে একমুখ ফুচকা ঢুকিয়ে দিয়ে বলল ওর এই কয়েকদিন ছুটি, সকালে কয়েকদিন পেপার বন্ধ।”
“তাই এই কয়েকদিন নো-কাজ, বলেই আমাকে…”
বাকিটা পড়ার আগেই আচমকা ফোনের রিংটোন, আর সেটা বরেরই দেখে মনটা খুব খুশি হল। ফোনটা রিসিভ করতেই অপর প্রান্তে একজন কর্কশ গলায় বলে উঠল, ” আপনি কি অপূর্ব বাবুর ওয়াইফ?”
-“হ্যাঁ, কিন্তু আপনি কে?”
-“আমরা থানা থেকে বলছি,আপনার হাজব্যান্ডকে মাদক পাচারের অপরাধে আমরা ধরে নিয়ে যাচ্ছি।”
-“কোথায়? কোথায় এখন আপনারা?”
-“আপনি আপনার লোকাল থানায় যোগাযোগ করুন, আমরা সব ডিটেইলস আপনাকে সেখানেই বলব।”
মাথার উপর ছাদটাকে আজ বড় অশক্ত বলে মনে হল, পায়ের তলার মাটিও যেন সরে সরে যাচ্ছে, সকালের গোলাপী শাড়ি আর সন্ধের দামি সাজ পোষাকের উপর পড়ে যাওয়া মোবাইলের আলোটা বেশ কিছুক্ষণ জ্বলে হঠাৎ করে বন্ধ হওয়াতে ঘরটাতে ভীষণ অন্ধকার গ্রাস করল। এতটা অন্ধকার রক্তিমার বর্ণময় জীবনে আসবে কেউ হয়ত ভাবেনি!
সমাপ্ত
প্রথম পর্বটি পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন ।
খুব সুন্দর
ঘটনার প্রবাহ এর পর কি ! মন তাই বলে।