আরও একবার(১ম পর্ব) – জিৎ সরকার
মোবাইলটাকে সাইলেন্ট করে সায়ক গাড়ির গতি বাড়িয়ে আশি-তে তুলে দিল। সময়টা রাত্রি আটটা, রাস্তায় তেমন একটা যানবাহন নেই তাই ভয়ের বিশেষ কোনো কারণও নেই। তুবও গাড়ি চালাতে চালাতে প্রায়ই অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছে সে বারে বারে। আজ সন্ধ্যায় শোনা সংবাদটাকে এখনো ঠিক মন থেকে মেনে নিতে পারছে না সে। অবশ্য সেটাকে সংবাদ না বলে দুঃসংবাদ বলাটাই বোধহয় ভালো।
খবরটা তাকে দিয়েছিলো তার বোন তনিমা। তনিমার বৌদি অর্থাৎ সায়কের স্ত্রী যে ট্রেনে করে তার বাপের বাড়ি ফিরছিল সেটির বেশ বড়োসড়ো একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে, আহত নিহত মিলিয়ে সংখ্যাটা বেশ বেশি। তনিমা একটা নামী নিউজ চ্যানালে কর্মরত। এখন পুজোর সময় তাই তনিমারা পুজোর নিউজ কভার করছিলো। আজ সন্ধ্যায় ওদের চ্যানেল থেকে এই অ্যাক্সিডেন্টটার ব্যাপারে ওদের ব্রিফ করা হয় আর ওদের টিম অকুস্থলের সবথেকে কাছে থাকায় ওদেরকেই নিউজটা কভার করতে বলা হয়। ঘটনাচক্রে আজ দুপুরের দিকে তনিমাই গিয়ছিল অনুমিতা অর্থাৎ

সায়কের স্ত্রীকে লাগেজ সমেত ট্রেনে তুলে দিতে, তাই তনিমার আগে থেকেই জানা ছিল অনুমিতা ওই ট্রেনে আছে। সে তক্ষনি ফোন করে সায়ককে খবর টা জানায়।
সায়ক সে সময়টা নিজের রেস্তোরার নতুন আউটলেট সাজানোর কাজে ব্যস্ত ছিল। আজ চতুর্থী, আর ঠিক দুটো দিন পরে অর্থাৎ মহাষষ্ঠীর দিন তার আউটলেটের উদ্বোধন, তাই তার ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে। তাছাড়াও, ইদানীং সায়ক আর অনুমিতার সম্পর্কে চিড় ধরেছে অনেকখানি। দূরত্ব যে বেড়েছে সেটা বলাই বাহুল্য। এখন অনুমিতা সব কাজ বা সিন্ধান্তের কথা সায়ককে জানায়ও না। পুজোর কিছুদিন আগেই রাগারাগি করে অনুমিতা নিজেদের বাড়ি ছেড়ে এক মাসির বাড়িতে ছিল কিছুদিন। তারপর হঠাৎ একদিন অনুমিতার মেসেজ এলো, তার সারমর্ম এই যে, সে পুজোর আগেই তার বাবা-মার কাছে ফিরে যাচ্ছে, সে আর ফিরবে না, সায়ক যেন দয়া করে ডিভোর্স ফাইল করে কাগজপত্রগুলো তার কাছে পাঠিয়ে দেয়। হঠাৎ আসা এ খবরটার জন্য সায়ক প্রস্তুত ছিল না একেবারেই। মেসেজটা পড়ে সায়কের রাগ-ক্ষোভ-দুঃখ মিশ্রিত একটা অনুভূতি হয় তবে সেটা অনুমিতার জন্য না নিজের জন্য ঠিক বুঝতে পারে না সে। তারপর সেও অনুমিতার সাথে যোগাযোগ করেনি। ভেবেছিল যা কথা হওয়ার একেবারে কোর্টেই হবে।
তবুও আজ খবরটা শোনার পর সায়ক যাকে বলে শকড তাই হয়ে যায় কিছুক্ষণ। সামলাতে কিছু সেকেন্ড সময় লাগে তার। অনুমিতার জন্য এতদিনের পুষে রাখা রাগ ক্ষোভ সব উবে যায় এক মুহূর্তে, বুকের ভিতরটা কেমন যেন শূন্য শূন্য ঠেকে। হওয়াটাই স্বাভাবিক। বছর তিনেকের সংসার তাদের। শুধুই কি সংসার করেছে বলে এই অনুভূতিগুলো আসছে? নাকি অন্যকিছু? ছিটেফোঁটা ভালোবাসা এখনও কি অবশিষ্ট নেই তাদের মধ্যে? সায়ক যতটা ভেবেছিল ততটা দূরে কি যেতে পেরেছে অনুমিতার থেকে? অনুমিতাও কি পেরেছে?… একলহমায় সব কিছুর থেকে কি দূরে যাওয়া যায়? সায়ক ঠিক জানে না এই প্রশ্নগুলো সে অনুমিতাকে করার সুযোগ কোনোদিন পাবে কিনা।
এরপর সব কিছু সামলে নিয়ে, শহরের যানজট ছাড়িয়ে হাইওয়েতে পড়তে সায়কের রাত্রি আটটা বাজল।